এম কামরুজ্জামান,শ্যামনগর সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ
শ্যামনগরে উপকুলীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অধিকার, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য রক্ষায় প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বেলা ১১ টায় শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নে আশ্রয়ন প্রকল্প ব্র্যারাকে স্থানীয় জনগোষ্ঠী, সুন্দরবন স্টুডেন্ট সলিডারিটি টিম, সবুজ সংহতি ও বেসরকারী উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক’র যৌথ উদ্যোগে প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় জেলে সম্প্রদায় সুপদ মন্ডলের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী নজরুল ইসলাম।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, উপজেলা প্রেসক্লাবের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম কামরুজ্জামান, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য আব্দুর রউফ গাজী, বারসিক এর সহযোগী আঞ্চলিক সমন্বয়কারী রামকৃষ্ণ জোয়ারদার, সহযোগী কর্মসূচী কর্মকর্তা মনিকা পাইক, অষ্টমী মালো, দলিত এর প্রোগ্রাম অফিসার রতিকান্ত মন্ডল, কৌশল্যা মুন্ডা, এসএসএসটির প্রকাশ মন্ডল, মাছুম বিল্লাহ প্রমুখ
উল্লেখ্য, আমাদের দেশে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণে সরকারের উদ্যোগের তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে নিজ উদ্যোগেও এসব ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষা করতে পারছে না। ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে বাংলাদেশে বসবাসকারী বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় ভাষা ও সংস্কৃতি। আর এটি রক্ষার সরকারী-বেসরকারী ভাবে সমন্বিত ভাবে উদ্যোগ গ্রহন করা জরুরী।প্রদর্শনীতে বুড়িগোয়ালিনী, দাতিনাখালী, তারানীপুরের ক্ষুদ্র- নৃগোষ্টী সম্প্রদায়ে ৭টি স্টলে বিভক্ত হয়ে তাদের সংস্কৃতির বিভিন্ন নিদর্শন তুলে ধরেন। এর মধ্যে জেলে, কাহার, ঋষি, মুন্ডা সম্প্রদায়ের স্টল ছিল অগ্রগণ্য। তাদের নিদর্শনের মধ্যে ছিলো হাড়িয়া, খাদ্যভাস, বল্লব, কুচ, বুজ, কড়ি, শিং,তীর ধনুক, পালক, টোপর, পুজার উপকরণ, বিবাহের উপকরণ, মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ (জাল, দড়ি, নৌকা, পোলো, খারা), ঋষিদের জুতা সেলাইয়ের উপকরণ, কাহার সম্প্রদায়ের পালকি, ঢোল, খঞ্জন, কাশি, বেহলা, একতারা ইত্যাদি উপকরণ। প্রদশর্নীর পাশাপাশি নিজ সংস্কৃতির গান ও নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে তাদের সাংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষার দাবী জানান।
অংশগ্রহণ কারী আনন্দিনী মুন্ডা বলেন, আমাদের এলাকায় অতীতে ক্ষুদ্র-নৃগাষ্টী তাদের পেশা এবং সংস্কৃতি ছিলো ঝাঁকজমকর্পূ। কালের বিবর্তনে সেগুলো আজ হারিয়ে যেতে বসেছে তারা এখন তাদের পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশার দিকে ঝুঁকছে। এতে করে আমাদের অন্য পেশার উপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।
বক্তাগণ বলেন, কালের বিবর্তনে উপকুলীয় অঞ্চল সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্ষুদ্র- নৃগোষ্টীর ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে। তাদের পেশাকে স্বীকৃতি দানের মাধ্যমে অধিকার সুরক্ষার জন্য সরকারী- বেসরকারী ভাবে উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে। যে সব কারণে তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে তার কারণ খুজতে হবে। পাশাপাশি বারসিক যে ভিন্নধর্মী বহুত্ববাদী সমাজ নিয়ে কাজ করে তা আসলে প্রসংশনীয়। এই ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর চলাচলের প্রধান সড়কটি মেরামত সহ তাদের বসতবাড়ি র নাজুক ঘরবাড়ি গুলো সংস্কার করার জন্য জেলা এবং উপজেলা প্রশাসনের কাছে বিষয়টি অবহিত করবো।
বি: দ্র: প্রকাশিত সংবাদে কোন অভিযোগ ও লেখা পাঠাতে আমাদের ই-মেইলে যোগাযোগ করুন।