সুমাইয়া আক্তার শিখা,স্টাফ রিপোর্টার: বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে বসবাস করি কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং সি ব্লকের তালতলা বস্তিতে। এখন বয়স ৫০ পার হয়েছে।দিনে দোকানে পরের দোকানে কাজ করি এবং রাতে যখন যে কাজ পায় সে কাজ করি। এত কষ্টের মধ্যেও কখনো কারো কাছে হাত পাতি নি।
অনেক কষ্ট করে তিন সন্তানের লেখাপড়া করিয়েছি। রাত দিন ২৪ ঘন্টা পরিশ্রম করে বড় ছেলেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছি, মেজ মেয়েকে টাকার অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি করাতে পারেনি সে এখন কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ ডিগ্রী সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্রী, ছোট ছেলেটা রাজবাড়ী কলেজের ছাত্র। বড় ছেলেটা এবার ৪১তম বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছে। যে ঘরে বসে স্বপ্ন দেখেছি সে ঘড় আজ ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা সাধারণ ঘর ছিল না এটা ছিল আমার কাছে মসজিদে মতো। তিল তিল করে রক্ত পানি করা টাকা দিয়ে একেকটা ইট কেনা। ঘর করতে ও ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া করাতে গিয়ে লোনের বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুরতে হচ্ছে। খেয়ে না খেয়ে দিন কাঁটাতাম তবুও কিছু মনে হতো না। অনেক কষ্ট করে ঘরের আসবাবপত্র নির্মাণ করেছিলাম, ছেলের জন্য কম্পিউটার কিনে দিয়েছিলাম। সব এখন ধুলোয় গড়াগড়ি খাচ্ছে। কিছুই বের করতে দেয়নি। আমার আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। বাড়ি ঘর হারিয়ে আমি পাগল হতে বসেছি। দোকানের চাকরি হারাতে বসেছি। কোথায় যাবো কি করবো কিছু বুঝতে পারছি না। আমাদের কষ্ট কাউকে বোঝাতে পারবো না। আমার বুক ফেটে যাচ্ছে। এখন কারো সহযোগিতা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এটা বিধাতার কি পরিক্ষা?
বলছিলাম কুষ্টিয়া হাউজিং সি ব্লকের তালতলা টিনসেড বস্তির মৃত আব্দুল গনির ছেলে আরমানের কথা। এখন তার স্ত্রী প্রতিদিন ১শ টাকা হাজিরায় একটি ক্লিনিকে আয়ার কাজ করছে।
উল্লেখ্য, গত ২১ মার্চ সকালে হঠাৎ হাউজিং এস্টেট এই বস্তির ৬টি বাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়ায় সেই থেকে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে ৬ টি পরিবার। ক্ষমতাধর এক অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে সংশ্লিষ্ট সবাই চুপ থাকায় সাধারণ মানুষের মাঝে সৃষ্টি হয়ে ক্ষোভ!
বি: দ্র: প্রকাশিত সংবাদে কোন অভিযোগ ও লেখা পাঠাতে আমাদের ই-মেইলে যোগাযোগ করুন।