নিজস্ব প্রতিবেদকঃলম্বা কালো রঙের চেয়ারে খালি গায়ে বসা এক ব্যক্তির দুই হাত বাঁধা। মুখে সাদা কাপড় গোজা। গলায় প্যাঁচানো গামছা। মাথা কালো কাপড় দিয়ে বাঁধা। যাকে এভাবে চেয়ারে বেধে রাখা হয়েছে তার চোখ বন্ধ। ছবি দেখে মনে হচ্ছে, এই ব্যক্তিকে চেয়ারে বেধে পৈশচিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।
ছবির এই ব্যক্তি ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের বলে নিশ্চিত করেছে তার পরিবার ও আইন শৃঙ্খলাবাহিনী। আনার হত্যায় যোগসাজস ও অধিকতর তথ্য পেতে মঙ্গলবার বিকালে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে আটকের পর এই ছবি সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এমপি হত্যায় সন্দেহভাজন হিসেবে মিন্টুকে আটক করেছে ডিবি। সাবেক মেয়র মিন্টুর মোবাইলে এমপি আনারকে হত্যার পর কিছু পাঠিয়েছিল হত্যাকারীরা। তবে এমপি আনারের এই ছবি কীভাবে কারা সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ছাড়ল তা জানা যায়নি।
গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ভারত যান এমপি আনার। পরের দিন তিনি নিখোঁজ হন। নয় দিন পর তাকে খুন করে মরদেহ গুম করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর আসে।
গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, হত্যাকারীদের বর্ণনা মতে এমপি আনারকে কলকাতার ওই ফ্ল্যাটে নেওয়ার পর মুখে চেতনানাশক দিয়ে অজ্ঞান করে ফেলা হয়। এরপর তার হাত-পা, মুখ রশি ও কাপড় দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়। এরপর তাকে হত্যা করা হয়। পরে মরদেহ ওই ফ্ল্যাটের বাথরুমে নিয়ে টুকরো টুকরো করা হয়। এরপর শরীরের টুকরা অংশ ফ্ল্যাটের বাথরুমের কমোড দিয়ে ফ্ল্যাশ করে ফেলা হয়। বাকি অংশ ট্রলি ব্যাগে ভরে কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেওয়া হয়েছিল। এরইমধ্যে কসাই সিয়াম হোসেনের বর্ণনা মতে মানুষের শরীরের কিছু হাড় উদ্ধার করেছে দেশটির পুলিশ। এছাড়া ওই ফ্ল্যাটের সুয়ারেজ লাইন থেকে মাংসের টুকরো উদ্ধার হয়েছে। আনারকে হত্যার পর মরদেহ গুম করতে আগে থেকেই পরিকল্পনা করে দুর্বৃত্তরা। একারণে এমপি আনারকে কৌশলে ওই ফ্ল্যাটে আনার আগেই কয়েকজন ফ্ল্যাটে আগে থেকে অবস্থান করেছিলেন। আনার সেখানে আসার পরপরই ছক অনুযায়ী তাকে হত্যার পর মরদেহ গুম করা হয়।
এদিকে আলোচিত এই হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে এক নারীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে আটক করে ডিবি হেফাজতে রাখা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- আন্ডারগ্রাউন্ডের অন্যতম নেতা আমানুল্লা সাঈদ ওরফে শিমুল ভুঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভুঁইয়া, তানভীর ভুঁইয়া, সেলেস্তি রহমান এবং কাজী কামাল আহমেদ ওরফে বাবু। এই বাবু ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক। বর্তমানে তিনি ডিবি হেফাজতে রিমান্ডে আছেন।
গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, এমপিকে হত্যার পর বাবু দুই কোটি টাকা খরচ করেছিল। এছাড়া আনার খুনের ঘটনায় ভারতে একজন এবং নেপালে একজনকে গ্রেপ্তার করে হয়েছে। নেপালে গ্রেপ্তার যুবককে ভারতে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বুধবার বিকালে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানিয়েছেন, গ্রেপ্তার আসামিদের কাছ থেকে তথ্য পেয়েছি। সেগুলো যাচাই-বাছাই করার জন্যই আমাদের আইওর (তদন্ত কর্মকর্তা) মাধ্যমে ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের নেতা মিন্টুকে ডেকেছি। আমাদের তদন্ত কর্মকর্তার প্রশ্নগুলোর উত্তর যদি তিনি যথাযথভাবে দিতে পারেন তবেই চলে যাবেন। তিনি যদি যথাযথ উত্তর না দিতে পারেন তবে আমাদের তদন্ত কর্মকর্তা যা করা লাগে করবেন।
বি: দ্র: প্রকাশিত সংবাদে কোন অভিযোগ ও লেখা পাঠাতে আমাদের ই-মেইলে যোগাযোগ করুন।