শাহাদাত হোসেন,কালিগঞ্জ সাতক্ষীরাঃমৎস্য ঘেরের আইলে সবজি চাষ লাভজনক হওয়ায় জেলার কালিগঞ্জে অধিকাংশ মৎস্য ঘেরে সবজির চাষাবাদ দিন দিন বাড়ছে। ফলে নিজ এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য জেলায়ও রপ্তানি হচ্ছে এখানকার উৎপাদিত বিভিন্ন সবজি। মৌসুমি ধান ও মাছ চাষ করে একসময় যাদের পরিবার- পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটত, লাভজনক সমন্বিত সবজি চাষে এখন তাদের মুখে হাঁসি ফুঁটেছে। ‘অল্প পুঁজিতে অনেক লাভ’ ফলে উৎসাহিত হয়ে এখন সমন্বিত এ চাষের দিকে ঝুঁকছেন অনেকেই।
সরেজমিনে উপজেলার মৌতলা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ মৎস্য ঘেরগুলোতে যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজের হাতছানি। ঘেরের আইলে ও ঘেরের আইলের উপরে নির্মিত সারি সারি মাচায় ঝুলছে করলা, ঢেঁড়শ, পুঁইশাক, লাউ, কুমড়া, ঝিঙে, আর শসা। বর্ষাকালীন সবজির পাশাপাশি আগাম শীতকালীন সবজি চাষও শুরু করেছেন অনেকে। উপজেলার নরহরকাটি মৌজায় ছোট বড় ৯৫ টি মৎস্যঘের আছে। এবিলে ৭৬টি ঘেরের আইলে সবজি চাষ করছে। পানিয়া, ঝড়ুখামার, রানীতলা, নেবুখালী, চাতরাসহ বিভিন্ন বিলে শতশত বিঘা জমির মৎস্য ঘেরে মাচা পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হয়েছে। একই সাথে ঘেরের পাড়ে লাগানো হয়েছে পুঁইশাক, ঢেঁড়স, কুলগাছ ও কলাকচু।
সরেজমিনে তথ্য অনুসন্ধান কালে উপজেলার পশ্চিম মৌতলা গ্রামের মৃত জবেদ আলী গাজীর পুত্র আমিনুর রহমান (আমিন), নরহরকাটি গ্রামের শেখ আব্দুল গফুরের পুত্র শেখ রায়হান হোসেন, পানিয়া গ্রামের সাঈদ মেহেদীর পুত্র অনিক মেহেদী, খাজাবাড়িয়া গ্রামের মৃত ছামসুর রহমানের পুত্র মাছুম বিল্লাহ ও নরহরকাটি গ্রামের শেখ শামলীর পুত্র আবু তালেব
জানান, তারা দীর্ঘদিন যাবৎ মৎস্য ঘেরে শুধু মাছ চাষ করে আসছিল। তৎকালীন মৌতলা ইউপি চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদী ইউনিয়নের ঘের ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ করে মৎস্য চাষের পাশাপাশি ঘেরের আইলে সবজি চাষের আহবান জানান। সেই থেকে দুই একজন করে শুরু করতে করতে বর্তমানে এই ইউনিয়নের ৭৮ শতাংশ ঘরের আইলে সবজি চাষ করে অধিক লাভবান হচ্ছে। তাছাড়া রাসায়নিক সার ও কীটনাশক মুক্ত সবজি চাষ হওয়া এখানের উৎপাদিত ফসলের চাহিদা বাড়ছে। প্রায় প্রতিদিন ট্রাক ও পিক-আপের মাধ্যমে জেলার বাহিরের ক্রেতা সাধারণ সবজি নিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া মৌতলা ইউপি চেয়ারম্যান ফেরদাউস মোড়ল জানান, ইউনিয়নে একসময়ে জলাবদ্ধতার কারণে ঠিকমত ফসল উৎপাদন করা যেতনা, উপজেলা পরিষদের কৃষিবান্ধব চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদীর নেতৃত্বে ঘেরের আউটড্রেনের ব্যবস্থা করায় যথাযথ পানি নিস্কাশন হওয়ায় পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় এসেছে। ফলে এ ইউনিয়নে ব্যাপক ফসল উৎপাদন হচ্ছে। সাতক্ষীরা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ঘামারবাড়ি) সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জেলার ৮শ'৭৫ হেক্টর জমির আইলে (মৎস্য ঘেরের ভেঁড়ি) বিভিন্ন প্রকারের সবজি চাষ হয়েছে। কালিগঞ্জ উপজেলায় ১শ'৩৫ হেক্টর জমির আইলে সবজির চাষ হচ্ছে। দিন গেলে এ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ঘেরের আইলে আরও বেশি বেশি সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ হবে চাষীরা।কালিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদী বলেন আমি ইউপি চেয়ারম্যান থাকাবস্থায় কৃষক কূলকে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছিলাম বলেই আজ এই সফলতার মুখ দেখছি। উপজেলায় আরও অনেক ইউনিয়নের চাষীরা ঘেরের আইলে সবজি চাষ শুরু করেছে। আমি সকলকে আরও আন্তরিকতার সাথে আইলে সবজি চাষের আহবান করেই চলেছি এবং আমি সফল হবো। বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার কৃষকদের কল্যাণে অনেক অবদান রেখে চলেছে।
বি: দ্র: প্রকাশিত সংবাদে কোন অভিযোগ ও লেখা পাঠাতে আমাদের ই-মেইলে যোগাযোগ করুন।