গ্যাসের দাম বাড়াতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এরই মধ্যে গণশুনানিও শেষ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বিইআরসির আইন অনুযায়ী শুনানি শেষে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে কমিশন এ বিষয়ে আদেশ দেন। সে হিসেবে শুনানির পর প্রায় এক মাস পার হয়েছে। হাতে আছে আর ৬০ দিনের মতো। ফলে যে কোনো দিনই দাম বাড়ার ঘোষণা আসতে পারে। সূত্র জানায়, মূলত এলএনজির দাম সমম্বয় করতেই গ্যাসের দাম বাড়ানোর এই উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তাই গ্যাসের ট্রান্সমিশন চার্জ, ডিস্ট্রিবিউশন চার্জ এবং ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের দাম পুন:নির্ধারণে কোম্পানিগুলোর প্রস্তাবিত দামের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। চলতি বছরের মার্চ মাসে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো গড়ে ৭৫ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠিয়েছিল। কিন্তু শুনানির সময় কোম্পানি ভেদে দাম আরো বেশি উপস্থাপন করা হয়েছে। শুনানিতে গ্যাস কোম্পানিগুলোর প্রস্তাবের ওপর ব্যবসায়ী সংগঠন, শিল্প মালিক, ভোক্তা প্রতিনিধি, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ বিভিন্ন স্টকহোল্ডারদের মতামত নেওয়া হয়। শুনানিতে গ্যাস কোম্পানি ছাড়া অন্য সবাই দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করেছে। এখন সবার মতামত যাচাই-বাছাই করে কমিশন তার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবেন। তবে বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে গ্যাসের দাম বাড়বেই। পেট্রোবাংলার সূত্র বলছে, যেহেতু এলএনজির দাম প্রতি মিলিয়ন ব্রিটিশ থারমাল ইউনিট (এমএমবিটিইউ) ৯ ডলার পড়বে, তাই এলএনজি সরবরাহ করতে গেলে বড় রকমের ঘাটতি তৈরি হবে। দেশের উৎপাদিত গ্যাসের সঙ্গে এলএনজির দাম সমন্বয় করে গ্যাসের দাম বাড়ানো জরুরি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির ধাক্কায় নির্বাচনের বছরেই বাড়ছে দেশের প্রধান জ্বালানি গ্যাসের। এরই মধ্যে দেশে এলএনজি আমদানি শুরু হয়েছে। কাতারের রাস গ্যাস থেকে এলএনজি ভর্তি মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির জাহাজ এখন বাংলাদেশ উপকূলে। এ বছরের শেষ দিকে প্রতিদিন আরও ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতার একটি টার্মিনাল নিয়ে আসছে সামিট গ্রুপ। দেশীয় এই কোম্পানির এলএনজি টার্মিনালটি দিয়েও জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহের চুক্তি করেছে পেট্রোবাংলা। জি টু জি ভিত্তিতে কাতারের রাস গ্যাস এবং ওমান ট্রেডিং করপোরেশনের সঙ্গে এলএনজি ক্রয় চুক্তি করেছে পেট্রোবাংলা সরকারি এই দুই কোম্পানির কাছ থেকে এলএনজি ক্রয়ের পাশাপাশি ৩০টি কোম্পানির কাছ থেকে স্পট মার্কেটিং ভিত্তিতে এলএনজি ক্রয় করার প্রক্রিয়া চলছে। বিইআরসি সূত্র জানায়, কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম প্রতি ইউনিট ৩ টাকা ১৬ পয়সা থেকে ৯ টাকা ৪৮ পয়সা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সার কারখানায় ব্যবহৃত গ্যাসের ইউনিট প্রতি দাম ২ টাকা ৭১ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৮০ পয়সা, আর শিল্প-কলকারখানায় ৭ টাকা ৭৬ পয়সা থেকে ১৪ টাকা ৯০ পয়সা, সিএনজির দাম প্রতি ইউনিট ৪০ টাকা থেকে ৪৮ টাকা বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম প্রতি ইউনিটে ৯ টাকা ৬২ পয়সা থেকে ১৬ টাকা এবং চা বাগানে প্রতি ইউনিট ৭ টাকা ৪২ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৮০ পয়সা করার প্রস্তাব দিয়েছে কোম্পানিগুলো। এর আগে গতবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সর্বশেষ গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। দুই ধাপে গড়ে ২২ দশমিক ৭৩ শতাংশ গ্যাসের দাম বাড়ায় বিইআরসি। প্রথম ধাপ ১ মার্চ এবং দ্বিতীয় ধাপ ১ জুন থেকে কার্যকর হয়। গ্যাসের সঞ্চালন লাইনের দাম বাড়াতে ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) প্রস্তাবের ওপর গত ১১ জুন সোমবার শুনানি করে বিইআরসি। গত ১৩ জুন তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির গ্যাসের সঞ্চালন লাইন ও গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর শুনানি করে কমিশন। গত ১৪ জুন বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের প্রস্তাবিত দামের ওপর শুনানি করে। গত ১৮ জুন জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেডের প্রস্তাবিত দামের ওপর শুনানি করে কমিশন। গত ১৯ জুন কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের প্রস্তাবিত দামের ওপর শুনানি করে কমিশন। গত ২০ জুন পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের দামের ওপর শুনানি করে কমিশন এবং ২১ জুন সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের প্রস্তাবিত দামের ওপর গণশুনানি করে কমিশন।বিইআরসি সূত্রে জানা গেছে, বিতরণ কোম্পানিগুলো তাদের প্রয়োজনের কথা জানিয়ে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে কমিশনের কাছে। কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে সেগুলো যাচাই-বাছাই করা। কমিশনের মূল্যায়ন কমিটি তাদের প্রস্তাবিত দামগুলো সেই যাচাই-বাছাইয়ের কাজই করবে। পাশাপাশি গণশুনানির মাধ্যমে গ্রাহকদের মতামতগুলো পাওয়া যাবে। সবমিলিয়ে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।
বি: দ্র: প্রকাশিত সংবাদে কোন অভিযোগ ও লেখা পাঠাতে আমাদের ই-মেইলে যোগাযোগ করুন।