ডেস্ক রিপোর্টঃ চট্টগ্রামের জিইসি কনভেনশ হলে সাম্প্রতিক জামায়াতের দলীয় সমাবেশে প্রশাসনকে ‘জামায়াতের আন্ডারে নিয়ে আসা ও প্রত্যেক প্রাইমারী ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের জামায়াতের পক্ষে কথা বলতে বাধ্য করতে হবে’ এমন প্রসঙ্গে দেওয়া বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ার চতুর্মূখী চাপে পড়েছেন জামায়াতের কর্মপরিষদের সদস্য শাহজাহান চৌধুরী। বক্তব্যের দুই দিনের মাথায় জামায়াত তাকে একসপ্তাহর সময় বেঁধে দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে এবং বিএনপি তাকে গ্রেফতারের দাবী তুলেছে। পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন তার বক্তব্যের লিখিত প্রতিবাদ জানিয়েছে। কূটনৈতিক মহলেও চলছে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া।
তার এমন বিতর্কিত বক্তব্যের পর রোববার (২৩ নভেম্বর) জামায়াতের অফিসিয়াল পেইজে শাহজাহান চৌধুরীর বক্তব্য জামায়াত সমর্থন করে না দাবী করে দলটি জানায়, এটি একান্ত তার ব্যক্তিগত মতামত। এই বক্তব্যের ব্যাপারে দলের কাছে কোন ব্যাখ্যা নেই। এ বিষয়ে তিনিই ভালো ব্যাখা দিতে পারবেন।
জামায়াতের নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, সাংগঠনিক ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্নকারী বক্তব্য রাখার জন্য দলীয় পর্যায়ে আগেও একাধিকবার সতর্ক করা হয়েছিল শাহজাহান চৌধুরীকে। দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি আনুগত্য দেখানো হবে এমন প্রতিশ্রুতি দিলেও তার উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। পরবর্তিতে এক মাহফিলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস তাকে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্ব দিয়েছেন বলে আরেক বিতর্কের জন্ম দেন। চুনতি সীরাত মাহফিলে শাহজাহান চৌধুরীর ইন্ধনে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের সাবেক এমপি মাওলানা শামশুল ইসলাম বক্তব্য প্রদান কালে মাইক বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিলো। সর্বশেষ তার এমন বক্তব্য কূটনৈতিক মহলেও সংগঠনের প্রতি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
জামায়াতের কারণ দর্শানো নোটিশ:
সোমবার (২৪ নভেম্বর) জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার স্বাক্ষরিত কারণ দর্শাও নোটিশে বলা হয়, গত শনিবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি কনভেনশন হলে অনুষ্ঠিত ‘নির্বাচনী দায়িত্বশীল সম্মেলনে’ আপনি বক্তব্য প্রদান করেছেন যে, ‘নির্বাচন শুধু জনগণ দিয়ে নয় যার যার নির্বাচনী এলাকায় প্রশাসনের যারা আছে, তাদের সবাইকে আমাদের আন্ডারে নিয়ে আসতে হবে। আমাদের কথায় উঠবে, আমাদের কথায় বসবে, আমাদের কথায় গ্রেপ্তার করবে, আমাদের কথায় মামলা করবে।’ আপনার এই বক্তব্য বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। আমরা বক্তব্যটি দেখেছি, যা রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের পেশাদারিত্ব, নিরপেক্ষতাকে স্পষ্টভাবে ব্যাহত করেছে।’
নোটিশে আরো বলা হয়েছে, ‘আমরা মনে করি, প্রশাসন পূর্ণ পেশাদারিত্বের সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করবেন, এখানে আমাদের হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই। ইতোপূর্বে বিভিন্ন সময়ে আপনি এই ধরনের সাংগঠনিক ভাবমর্যাদা ক্ষুন্নকারী ও শৃঙ্খলা বিরোধী বক্তব্য রেখেছেন। যার ফলে আপনাকে কয়েকবার সতর্ক করা হয়েছে ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এমনকি মুহতারাম আমীরে জামায়াতও আপনাকে ডেকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এবং সতর্ক করেছেন। এতদসত্ত্বেও আপনার মধ্যে কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এই বক্তব্য প্রকাশের পর প্রশাসনের বিভিন্ন স্তর থেকে তীব্র নিন্দা ও উদ্বেগের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে। দেশের কূটনৈতিক মহল থেকেও সরাসরি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে। একই সাথে দেশ-বিদেশে আমাদের জনশক্তি এবং সাধারণ জনগণের মাঝেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এই বক্তব্যের কারণে ইতোমধ্যে সংগঠনের ভাবমর্যাদা গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটা দলীয় গঠনতন্ত্র, নীতি, আদর্শ, শৃঙ্খলা ও দায়িত্বশীল রাজনৈতিক আচরণের পরিপন্থী।’
কারণ দর্শানও নোটিশে বলা হয়, ‘সম্মানিত আমীরে জামায়াতের নির্দেশে আপনাকে এ মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হচ্ছে যে ‘কেন আপনার ব্যাপারে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না? তার লিখিত জবাব আগামী ৭ (সাত) দিনের মধ্যে প্রদান করতে হবে। উল্লেখিত সময়ের মধ্যে সন্তোষজনক জবাব না পাওয়া গেলে দলীয় গঠনতন্ত্র ও শৃঙ্খলাবিধি অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’
বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের প্রতিবাদ:
সোমবার (২৪ নভেম্বর) বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. আনিসুজ্জামান স্বাক্ষরিত প্রতিবাদে বলা হয়, জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী বক্তব্যে পুলিশকে দলীয় নির্দেশে মামলা গ্রহণ, আসামি গ্রেপ্তার ও প্রশাসনকে অধীনস্থ করার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, যা গণতান্ত্রিক কাঠামোর জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক ও পুলিশকে হেয়প্রতিপন্ন করার নামান্তর।
প্রতিবাদ লিপিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ পুলিশ সংবিধান ও বিধিবদ্ধ আইনের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। গত ১৭ বছরে কিছু উচ্চাকাঙ্ক্ষী সদস্যের কর্মকাণ্ডের কারণে জনগণের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হলেও গত ৫ আগস্টের ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের পর পুলিশ নিরপেক্ষতা বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করছে। পুলিশ এখন কোনো রাজনৈতিক দল বা মতের পক্ষে অবস্থান না নিয়ে জনআকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই কাজ করছে এবং ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছে। রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহৃত হওয়ার দিন শেষ হয়েছে এবং পুলিশ বাহিনী এখন কেবল জনগণের কল্যাণ ও জবাবদিহিতার নীতিতে বিশ্বাসী।
সংগঠনটি রাজনৈতিক নেতাদের এমন উচ্চাকাংখা পুলিশকে হেয়প্রতিপন্ন করার নামান্তর বলে আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।
শাহজাহান চৌধুরীকে গ্রেফতারের দাবী জানিয়েছে বিএনপি:
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মো. এরশাদ উল্লাহ এবং সদস্যসচিব নাজিমুর রহমান রবিবার এক যৌথ বিবৃতিতে শাহজাহান চৌধুরীর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন ‘গণতন্ত্র, নির্বাচন ও রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলার বিরুদ্ধে এই উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদানের কারণে শাহজাহান চৌধুরীকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এর তীব্র সমালোচনা করে শাহজাহান চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
কর্মপরিষদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরীর বক্তব্য:
সে দিনের বক্তব্যে আমি টোটাল স্থানীয় প্রশাসনকে দেশ ও জাতির স্বার্থে কাজ করার কথা বুঝিয়েছিলাম। কিন্তু গণমাধ্যম গুলো আমার পূর্ণ বক্তব্য প্রচার না করে খন্ডিত বক্তব্য প্রচার করেছে ফ্যাসিস্টদের উস্কানী দিচ্ছে। ভারত আমাদের প্রিয় জন্ম ভূমির বিরুদ্ধে সব সময় ষড়যন্ত্র করে আসছে। বস্তা বস্তা টাকা নিয়ে তারা নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে বিতরণের চেষ্টা করছে। তাদের মদদপোষ্টরা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে নেমেছে।
সূত্রঃ বার্তাবাজার
বি: দ্র: প্রকাশিত সংবাদে কোন অভিযোগ ও লেখা পাঠাতে আমাদের ই-মেইলে যোগাযোগ করুন।