মো:আল আমিন গাজী,শ্যামনগর প্রতিনিধি:সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে মাছ-কাঁকড়া শিকার নিষিদ্ধ। কিন্তু ওই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ওইসব এলাকায় অবাধে চলে মাছ-কাঁকড়া শিকার। এমনকি বেশি মাছ পেতে নদীতে ছিটানো হয় বিষ। এসবের পেছনে কাজ করে শক্তিশালী একটি চক্র। কথিত চুক্তির মাধ্যমে ঘুষ নিয়ে তারা অভয়ারণ্যে মাছ-কাঁকড়া ধরার সুযোগ করে দেয়। চুক্তির মাধ্যমে জেলেদের কাছে অঘোষিত ইজারা দেয় বনের নিষিদ্ধ ও অভয়ারণ্য নদী-খাল। বন বিভাগের কর্মী ছাড়াও ওই চক্রে রয়েছেন দালাল ও দাদন দেওয়া মাছ ব্যবসায়ী ও স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকটি চক্র।
ইউসুফ আলী শ্যামনগর উপজেলার মুন্সীগঞ্জের হরিনগর এলাকার বাসিন্দা। বন বিভাগের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে (ঘুষ দিয়ে) সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে এলাকায় জেলেদের মাছ-কাঁকড়া ধরার জন্য যেসব কথিত দালাল (মহাজন ও কোম্পানি) সমঝোতা করে দেয়, ইউসুফ তাদের মধ্যে একজন।
তিনি বলেন, অভয়ারণ্যে মাছ-কাঁকড়া ধরতে কিছু বাড়তি টাকা খরচ হয়। কিন্তু অল্প সময়ে অনেক মাছ পাওয়া যায়। মাছ ধরেই সেই খরচ তুলতে হয়।
এ প্রসঙ্গে তিনি অভিযোগ করে বলেন, গত ১৬ তারিখ বনবিভাগের কদমতলা স্টেশন থেকে পাস (অনুমতিপত্র) নিয়ে আমার চারটি কাঁকড়ার নৌকাসহ জেলে বনে প্রবেশ করে। এর আগে বেশি কাঁকড়া পাওয়ার আসায় সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে মাছ ধরার জন্য কদমতলা স্টেশনের ক্যাশিয়ার তপন কুমারের মাধ্যমে প্রতি নৌকা ২ হাজার টাকা করে সত্যি করেন। তিনি আরও বলেন, অভয়ারণ্যে নৌকা পাঠানোর জন্য কদমতলা স্টেশনের ক্যাশিয়ার তপন কুমার স্টেশন কর্মকর্তা সুলতান আহমেদের বরাত দিয়ে নিজের ফোন দিয়ে তালিকা চেয়ে নেন।
এরপর সুন্দরবনের অভয়ারণ্য এলাকা নোটাবেকির খাজুরদানা খালে কাঁকড়া আহরণ করা অবস্থায় চুক্তি ভঙ্গ করে কদমতলা স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা সুলতান আহমেদসহ বন বিভাগের কর্মীরা ওই চারটি নৌকার মধ্যে একটি নৌকা জব্দ করে। এসময় নৌকায় থাকা জেলেরা পালিয়ে যায়।
আটক নৌকার মহাজন ইউসুফ আলী অভিযোগ করে বলেন, চুক্তি করল আবার নৌকাও ধরল-এটা কেমন কথা? সমঝোতা না হলে আমরা নৌকা অভয়ারণ্যে পাঠাতামই না। টাকা নেওয়ার পর নৌকা ধরার মানে হচ্ছে সরাসরি হয়রানি।’
জব্দ করা নৌকার জেলেদের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করে জানান, তারা বন বিভাগের শর্ত মেনেই কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ নৌকা আটক করায় তাদের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, পাশাপাশি পালিয়ে যাওয়া স্বজনদের এখনও কোন খোঁজ না মেলায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন পরিবার-পরিজন।
তবে বন বিভাগের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হয়েছে সুন্দরবনের অভয়ারণ্য এলাকায় মাছ-কাঁকড়া শিকার বন্ধে বন বিভাগের নিয়মিত টহল জোরদার করা হয়েছে। অভয়ারণ্যে মাছ-কাকড়া ধারার দায়ে এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন জেলেকে আটকও করা হয়েছে।
চুক্তির বিষয়টি অস্বীকার করে কদমতলা স্টেশনের ফরেস্টের তপন কুমার বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে চুক্তির প্রমাণ ও কথোপকথনের ফোন রেকর্ড রয়েছে জানানো হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি না হয়ে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। এরপর থেকে তার নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও তিনি ফোন ধরেনি।
এ বিষয়ে জানতে কদমতলা স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা সুলতান আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে আমি খোঁজ নিয়ে আপনাকে পরবর্তীতে জানাবো। আপাতত এটি সামান্য বিষয় বিষয়টা একটু বন্ধ রাখুন।
এ বিষয়ে পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত সহকারী বন সংরক্ষক ফজলুল হক, বলেন, সাধারণ জেলে হোক বা প্রভাবশালী বনের আইন সবার জন্য সমান। অভয়ারণ্যে প্রবেশ বা বনে অপরাধ করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হয় না।
তিনি আরও বলেন, কোনো বনকর্মীর বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে মাছ-কাঁকড়া শিকারের সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগ থাকলে জেলেরা সরাসরি আমাদের জানাক। তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা নেব।
বি: দ্র: প্রকাশিত সংবাদে কোন অভিযোগ ও লেখা পাঠাতে আমাদের ই-মেইলে যোগাযোগ করুন।