নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে আলোচনার মধ্যে এ বিষয়ে মুখ খুললেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেছেন, দেশে কোনো নতুন রাজনৈতিক দল হলে বিএনপি তাকে স্বাগত জানাবে। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় কিংবা প্রশাসনের সহযোগিতায় কোনো রাজনৈতিক দল গঠিত হলে জনগণ তাতে হতাশ হবে।’
শনিবার বিকেলে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ প্রাঙ্গণে শিক্ষক কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে আয়োজিত শিক্ষক সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি দেওয়া প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই ছাত্রদের নেতৃত্বে রাজনৈতিক দল গঠনের আলোচনা চলছে। আগামী ফেব্রুয়ারি নাগাদ ছাত্রদের নতুন দলের ঘোষণা আসতে পারে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘সরকারে থেকে ছাত্ররা দল গঠন করলে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।’
ফখরুলের এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দুই উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। এর মধ্যেই নতুন রাজনৈতিক দল গঠন প্রসঙ্গে কথা বললেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
তারেক রহমান বলেন, ‘গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় কেউ যদি রাজনৈতিক দল গঠন করতে চায় অবশ্যই বিএনপি তাকে স্বাগত জানায়। তবে রাজনৈতিক দল গঠন করতে গিয়ে কেউ যদি রাষ্ট্রীয় কিংবা প্রশাসনিক সহায়তা নেয় তা হবে হতাশাজনক।’
‘অন্য রাজনৈতিক দলের প্রতি তাদের আচরণ ঝগড়াসূলভ বা প্রতিহিংসামূলক হয় সেটিও জনগণের কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত হবে। তরুণরা আগামীর ভবিষ্যৎ। তারাই সামনে নেতৃত্ব দেবে। তবে তা যেন কোনো প্রশ্নবিদ্ধ পথে না হয়।’
বিএনপি সংস্কারের পক্ষে জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘পলাতক স্বৈরাচার মুক্তিযুদ্ধসহ সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। নির্বাচন কমিশন এবং দুদকের মতো প্রতিষ্ঠানকেও অকার্যকর করে দিয়েছিল।’
‘অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধানসহ বেশ কয়েকটি সংস্কার কাজ হাতে নিয়েছে। এমন অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের সঙ্গে দুই একটি প্রক্রিয়াগত বিষয় ছাড়া বিএনপির কোনো ভিন্নমত নেই। সংস্কার ও নির্বাচন দুটোর পক্ষেই বিএনপি।’
দেশে একটি পরিশুদ্ধ রাজনীতি দরকার জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্তেই সব কিছু পালিত হয়। সুতরাং কোনো কিছুকে শুদ্ধ রাখার জন্য রাজনীতির বাইরে রাখা বা ঊর্ধ্বে রাখা, এটি না করে বরং রাজনীতিটাই আমাদের শুদ্ধ করা প্রয়োজন। রাজনীতিটা শুদ্ধ এবং স্বচ্ছ হওয়া অত্যন্ত জরুরি।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রচলিত রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন যদি করতে না পারি তাহলে কিন্তু এখানে যতগুলো আকাঙ্ক্ষার কথা বলা হয়েছে, বিভিন্ন আলোচনায়, বিভিন্ন সুশীল ব্যক্তিরা যে আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের কথা বলছেন, রাজনীতির গুণগত যে পরিবর্তন, রাজনীতির ভেতরের যে পরিবর্তন সেটা যদি করতে না পারি তাহলে হয়ত কোনো কিছুই করা সম্ভব না।’
‘এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিএনপি রাষ্ট্র, রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দল সংস্কারের উদ্দেশে বাংলাদেশের পক্ষের সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে, তাদের সাথে নিয়ে জনগণের সামনে ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচি উপস্থাপন করেছে।’
জনগণের রায় পেয়ে বিএনপি সরকার গঠনে সক্ষম হলে পর্যায়ক্রমভাবে প্রতিটি সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে বলেও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করাসহ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘এই সরকারের পক্ষে সিন্ডিকেট থেকে মুক্তি দেওয়া সহজ। জনগণের ওপর ভ্যাটের বোঝা কেন চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই সরকার এখনো কেন বাজার সিন্ডিকেট নষ্ট করতে পারেনি। তবে সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও এই সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না।’
বি: দ্র: প্রকাশিত সংবাদে কোন অভিযোগ ও লেখা পাঠাতে আমাদের ই-মেইলে যোগাযোগ করুন।