এম,কামরুজ্জামান,শ্যামনগর সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃডেনমার্কের রাজকুমারী প্রিন্সেস ম্যারি এলিজাবেথ ডোনালডসন এর আগমনে নিরাপত্তার চাঁদরে সুন্দরবন, নতুন সাজে সেজেছে উপকূলীয় অজপাড়া মুন্সিগঞ্জ।
প্রাকৃতিক দূর্যোগ কবলিত দক্ষিণ অঞ্চলের ক্ষতবিক্ষত সুন্দরবন এলাকা হঠাৎ করেই নতুন সাজে সজ্জিত হয়ে উঠেছে। দীর্ঘদিনের জরাজীর্ণ রাস্তাগুলি সংস্কার করে ইট বসানো হয়েছে। গ্রামীন পরিবেশের আশপাশের বাড়ি ঘর গুলি নতুন সাজে সেজেছে। এই পথ দিয়েই পায়ে হেটে গেছেন ডেনমার্কের রাজকুমারী প্রিন্সেস ম্যারি এলিজাবেথ ডোনাল্ডসন।লোকজনের সাথে কথাবার্তা বলেছেন। সুন্দরবন উপকূলের দুটি বনজীবি পরিবারের বাড়িতে ও তিনি অতিথি হিসেবে গিয়েছিলেন। শুধু সৌন্দর্য বর্ধনই নয়,পুরোমাত্রায় নিরাপত্তার চাঁদরে ছেয়ে ফেলা হয়েছে পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ এলাকা ও নিকটস্থ জনপদ।আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ব্যবস্থা নিয়েছেন।মঙ্গল ও বুধবার এই দুই দিন বনে কোন ধরনের পেশাজীবি জেলে, বাওয়ালি,মৌয়ালী অথবা দর্শনার্থী পর্যটক সুন্দরবন এলাকায় প্রবেশ করতে পারবেন না। এ ব্যাপারে বন বিভাগের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
বুধবার ২৭ এপ্রিল ডেনিস রাজকুমারী ম্যারি এলিজাবেথ ডোনাল্ডসন কক্সবাজার থেকে হেলিকপ্টারে করে সরাসরি চলে আসেন সাতক্ষীরা'র শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের টেকনিক্যাল কলেজ মাঠে।সেখানে তিনটি হেলিপ্যাড স্থাপন করা হয়। রাজকুমারী হেলিকপ্টার থেকে নামার পর গাড়িতে চড়ে ইটের রাস্তা ধরে চলে যান প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে গ্রাম কুলতলী গ্রামে। সেখানে তিনি কয়েক মিনিট পায়ে হাটেন এবং কৃষি ও বনজীবি পরিবারের সাথে কথাবার্তা বলেন। তিনি কুলতলির দুটি অতি সাধারন পরিবারের বাড়ির সদস্যদের সাথে সৌজন্য বিনিময় করেন।পুষ্পা রানী মন্ডল ও শিলা রানী মন্ডলের বাড়িতে পৌছে তিনি তাদের সাথে কথাবার্তা বলবেন। পরে ইউএনডিপির অর্থায়নে একটি খননকৃত খাল ও এর পানিসেচ এবং খালের ধারের ফসলি ক্ষেত পরিদর্শন করেন। একইসাথে তিনি বুডিগোয়ালিনী ইউনিয়নের দাতিনাখালী নদীভাঙন এবং নতুন বাঁধ নির্মান কাজও পরিদর্শন করেন। রাজকুমারী ম্যারি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতির মুখে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা সম্পর্কে অবহিত হন।
খাবার পানির জন্য নারীদের দীর্ঘ লাইন এবং বহুদূর পায়ে হেটে পানি সংগ্রহের বিষয়টিও তার নজরে আনা হয়। নতুন পোশাক পরে কুলতলী গ্রামের গ্রামীন নারীরা তাকে স্বাগত জানান। তারাই বলবেন, এই গ্রাম কুলতলিতে মিষ্টি পানি খাওয়ার জন্য প্রায়ই সুন্দরবনের বাঘ এলাকায় ঢুকে পড়ে এবং বহু মানুষের প্রানহানি ঘটিয়ে থাকে।
রাজকুমারী ম্যারির সফরসূচীর মধ্যে আরো রয়েছে, ঘূর্নিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন, জেলে বাওয়ালিদের জীবনযাত্রা দর্শন। তিনি মুন্সিগঞ্জে তৈরী করা নৌ পল্টন থেকে স্পীডবোটে চুনা নদী বেয়ে সরাসরি চলে যান কলাগাছিয়া ফরেস্ট টহল ক্যাম্প এলাকায়। সেখানেও তিনি লক্ষ্য করবেন বাঘের পায়ের চিহ্ন, বাঘের কবর এমনকি মিষ্টি পানির পুকুরে বাঘের পানি খাওয়া। সুন্দরবনের অনিন্দ্যসুন্দর দৃশ্য তিনি অবলোকন করেন। এরপরই তিনি ফিরে আসেন মুন্সিগঞ্জের বরসা রিসোর্টে। সেখানে তিনি মধ্যাহ্নভোজ সারেন। মধ্যাহ্নভোজ সেরে তিনি ঢাকা ও ডেনমার্ক থেকে আসা মিডিয়াকর্মীদের সাথে কথাবার্তা বলবেন এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে তার অভিজ্ঞতার বর্ননা দেবেন। রাজকুমারী ম্যারি পরে আবারো হেলিকপ্টারে ফিরে যান ঢাকায়।
সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোঃ হুমায়ুন কবির জানান, রাজকুমারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছিল। পুলিশ সুপার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেছি।নকিপুর সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত জেলা পুলিশের ব্রিফিং প্যারেডে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বনবিভাগ কর্মকর্তারা বলছেন, সুন্দরবনে দুইদিন প্রবেশ নিষেধ করা হয়েছে। মুন্সিগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান অসীম কুমার মৃধা বলেন, আমরা রাজকুমারীকে স্বাগত জানাই। স্থানীয় কয়েকটি বেসরকারি সংস্থাও একইভাবে রাজকুমারীর এই সফরকে স্বাগত জানিয়েছে।
বি: দ্র: প্রকাশিত সংবাদে কোন অভিযোগ ও লেখা পাঠাতে আমাদের ই-মেইলে যোগাযোগ করুন।