ডেস্ক রিপোর্ট: করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সরকার ঘোষিত লকডাউন শুরু হচ্ছে আজ সোমবার থেকে। লকডাউন চলাকালীন নাগরিকদের চলাচল ও কাজের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এ সময় শুধু জরুরি সেবা ছাড়া প্রায় সবকিছু বন্ধ থাকবে। গতকাল রোববার সরকারের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে লকডাউনে করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ৫ই এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ১১ই এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত এসব নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। মহামারি পরিস্থিতি পর্যালোচনায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় গত ২৯শে মার্চ যে ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়েছিল, তার আলোকে এসব নির্দেশনা দেয়ার কথা জানানো হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। এতে সবধরনের গণপরিবহন এবং শপিংমল বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
কাঁচাবাজার এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাবেচা করতে বলা হয়েছে। এ সময় সকল প্রকার গণপরিবহন (সড়ক, নৌ, রেল ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট) বন্ধ থাকবে। তবে, পণ্য পরিবহন, উৎপাদন ব্যবস্থা, জরুরি সেবার ক্ষেত্রে এই আদেশ প্রযোজ্য হবে না। এ ছাড়া বিদেশগামী বা বিদেশ প্রত্যাগত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না। আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন- ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দর (স্থল, নৌ ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিস এবং তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে। সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অফিস ও আদালত এবং বেসরকারি অফিস কেবল জরুরি কাজ সম্পাদনের জন্য সীমিত পরিসরে প্রয়োজনীয় জনবলকে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় অফিসে আনা-নেয়া করতে পারবে। শিল্পকারখানা ও নির্মাণ কাজ চালু থাকবে। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ শিল্পকারখানা এলাকায় নিকটবর্তী সুবিধাজনক স্থানে তাদের শ্রমিকদের জন্য ফিল্ড হাসপাতাল ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন, সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। খাবারের দোকান ও হোটেল রেস্তরাঁয় কেবল খাবার বিক্রি ও সরবরাহ করা যাবে। কোনো অবস্থায় হোটেল-রেস্তরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ করা যাবে না। শপিংমলসহ অন্যান্য দোকান বন্ধ থাকবে। তবে দোকানগুলো পাইকারি ও খুচরা পণ্য অনলাইনের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই কর্মচারীদের আবশ্যিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং কোনো ক্রেতা সশরীরে মার্কেটে যেতে পারবেন না। কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাবেচা করা যাবে। বাজার কর্তৃপক্ষ বা স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে। ব্যাংকিং ব্যবস্থা সীমিত পরিসরে চালু রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ঢাকার সুবিধাজনক স্থানে ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। সারা দেশে জেলা ও মাঠ প্রশাসন এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ নেবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত টহল জোরদার করবে।
এই আদেশ আমন্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনুনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে, লকডাউনের মধ্যে প্রতি কর্মদিবসে আড়াই ঘণ্টা ব্যাংক লেনদেন চালানোর নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশনের একটি প্রজ্ঞাপনে এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সব ব্যাংকে পাঠানো প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ৫ই এপ্রিল থেকে ১১ই এপ্রিল সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটি বাদে দৈনিক ব্যাংকিং লেনদেন সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হলো। এক্ষেত্রে লেনদেন পরবর্তী কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শাখা এবং প্রধান কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ দুপুর ২টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। লকডাউন চলাকালীন পুঁজিবাজারে লেনদেনের সময় আড়াই ঘণ্টা কমবে। নতুন সূচি অনুযায়ী খোলার দিনে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত লেনদেন হবে। পোস্ট ক্লোজিং সেশন হবে ১৫ মিনিট। সোমবার লকডাউনের প্রথম দিন থেকে এ নিয়ম কার্যকর হবে বলে বাংলাদেশ সিকিউটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মুখপাত্র রেজাউল করিম জানিয়েছেন।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় শনিবার দ্বিতীয় দফায় লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। ঘোষণায় সোমবার থেকে ৭ দিন দেশব্যাপী লকডাউন কার্যকর করার কথা বলা হয়। শনিবার দুপুরে লকডাউন ঘোষণার বিষয়টি ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকে জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনও গণমাধ্যমে লকডাউন নিয়ে ভিডিও বার্তা দেন। লকডাউন বাস্তবায়নের রূপরেখা তৈরিতে শনিবার বিকালে জরুরি বৈঠক করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বৈঠকের সার সংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুমোদনের তা গতকাল প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হয়।
বি: দ্র: প্রকাশিত সংবাদে কোন অভিযোগ ও লেখা পাঠাতে আমাদের ই-মেইলে যোগাযোগ করুন।