ডেস্ক রিপোর্ট: ফেনীতে লকডাউনে সড়কের মধ্যে রিকশা থেকে নামিয়ে যুবককে পিটিয়ে হাতকড়া পরিয়ে আটকের ঘটনায় এসআইসহ তিন পুলিশ সদস্যকে শোকজ করেছে জেলা পুলিশ প্রশাসন। সোমবার রাতে ফেনী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) যশমন্ত মজুমদারসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে শোকজ করে মঙ্গলবার তাদের ঘটনার কারণ দর্শাতে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সুপার খোন্দকার নূরুন্নবী।
লকডাউনের ৫ম দিন রোববার বিকেলে ফেনী শহরের মডেল হাই স্কুলের সামনে পুলিশের দায়িত্বরত সদস্যদের সঙ্গে এক ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ যুবকের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, সড়কে দায়িত্বরত পুলিশের এক সদস্য এক রিকশা আরোহী যুবকে জামার কলার ধরে পাকড়াও করেন। যুবকটিও তাকে পাল্টা আঘাত করেন। পুলিশের সঙ্গে মারামারিতে লিপ্ত হওয়া ওই যুবকের নাম শহিদুল ইসলাম (৩২)। তিনি ফেনী সদর উপজেলার মোটবী ইউনিয়নের বাসিন্দা। শহিদুল ইসলাম যুবলীগের সক্রিয় কর্মী বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দলীয় নেতা নিশ্চিত করেছে।
পুলিশ সুপার খোন্দকার নূরুন্নবী বলেন, ‘লোকটি মানসিক ভারসাম্যহীন। পুলিশ কর্তব্য পালনকালে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে পুলিশের উপর ক্ষেপে যায় এবং মারতে আসে।
তখন পুলিশ আত্মরক্ষার চেষ্টা করেছে। তার গায়ে হাত তোলা পুলিশের উদ্দেশ্য নয়।’
পুলিশ সুপার খোন্দকার নূরুন্নবী বলেন, ফেনী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) যশমন্ত মজুমদারসহ ঘটনার সময় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ঘটনার কারণ দর্শাতে মঙ্গলবার তাদের পুলিশ সুপার কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে। তাদের বক্তব্য শোনার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ওয়া তিন মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে দেখা যায়, লকডাউন চলা অবস্থায় রিকশায় বসে থাকা এক যাত্রীর সঙ্গে কথা বলছেন একাধিক পুলিশ সদস্য। চলমান লকডাউনে মাস্ক পরা ও বিনাপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে চলাচল করতে বাধা দিচ্ছিলেন তারা। এ সময় ওই যাত্রীর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় এবং তাকে রিকশা থেকে নামতে বলেন পুলিশ সদস্যরা। একপর্যায়ে রিকশায় থাকা ওই যুবক উচ্চস্বরে দায়িত্বরত পুলিশদের উদ্দেশে বলে ওঠেন, ‘এই দেশে পুলিশের অনেক ক্ষমতা, না!’
এ সময় এক পুলিশ সদস্য তাকে জোর করে রিকশা থেকে নামাতে চাইলে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তির শুরু হয়। রিকশা থেকে নামিয়ে ফেলা ওই যুবক বলতে থাকেন, ‘তুই অন্য রিকশা ছাড়ছিস, আমারটা ধরলি ক্যান?’ একাধারে তিনি পুলিশদের গালাগালি করতে থাকেন। এসময় পুলিশ ওই যুবককে টেনে হিঁচড়ে রিকশা থেকে নামিয়ে চড়-থাপ্পড়, লাথি মারতে থাকে। হাতাহাতির একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় একাধিক পুলিশ সদস্য তাকে যাপটে ধরে এবং হ্যান্ডকাফ পরানোর চেষ্টা করেন। ৪/৫ জন পুলিশ সদস্য তাকে হ্যান্ডকাফ পরানোর জন্য জোরপূর্বক মাটিতে ফেলে চাপ প্রয়োগ করেন। এক পুলিশ সদস্য চিৎকার করে বলতে থাকেন, হ্যান্ডকাফ লাগা, ধর। এ সময় উপস্থিত জনতার তোপের মুখে তারা আবার ওই ব্যক্তিকে ধরে উঠান এবং হ্যান্ডকাফ পরান। ঘটনাস্থলে উচ্ছুক জনতার ভিড় জমতে শুরু করলে ওই যুবক শহিদুল ইসলাম সবার উদ্দেশে বলেন, ‘মসজিদে কোরআন পড়তে যাচ্ছিলাম, বলছি আমাকে ছেড়ে দেন। এ সময় ওই হ্যান্ডকাফ পরতে অস্বীকৃতি জানান এবং গালাগালিসহ এলোপাথাড়ি হাত-পা ছুড়তে থাকেন। একই সময় তিনি উপস্থিত জনতার উদ্দেশে চিৎকার করে ভিডিও করতে বলেন।’
পরে একপর্যায়ে যুবক শহিদুল ইসলাম এটা আওয়ামী লীগের দেশ বলে চিৎকার করতে থাকেন। পরে তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়।
ফেনী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ওমর হায়দার জানান, আটক যুবক শহিদুলের মানসিক সমস্যা রয়েছে। হাতাহাতির এই ঘটনার জন্য তিনি সেই যুবককে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ‘থানায় নেয়ার পর জানা গেছে ওই যুবক কিছুদিন পরপর ভাইরাল হতে চায়। তাকে হাজতখানায় রাখার পর চিৎকার করে সবাইকে অস্থির করে তোলেন। একপর্যায়ে তার স্বজনদের ডেকে আনলে তারা তার মানসিক সমস্যার কথা জানায়। পরে মুচলেকা নিয়ে তাকে পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।’
বি: দ্র: প্রকাশিত সংবাদে কোন অভিযোগ ও লেখা পাঠাতে আমাদের ই-মেইলে যোগাযোগ করুন।