এম,এন,বি,প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনাভাইরাসের মতো অদৃশ্য শত্রুর মোকাবিলায় শান্তিরক্ষীদের যথাযথ প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাবের এ সময়ে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের নতুন সংকট নিরসনে শান্তিরক্ষীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জামাদি দিয়ে প্রস্তুত করা এখন সময়ের দাবি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সোমবার সেনাবাহিনী আয়োজিত অনুশীলন ‘শান্তির অগ্রসেনা’র সমাপনী অনুষ্ঠানে দেওয়া প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে বঙ্গবন্ধু সেনানিবাসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তিনি ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনগুলোতে বর্তমানে শান্তিরক্ষীদের বহুমাত্রিক ও জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। সম্প্রতি শান্তিরক্ষীদের প্রাণহানির সংখ্যাও উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।
এ পর্যন্ত ১৫৮ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী প্রাণোৎসর্গ করেছেন এবং ২৩৭ জন আহত হয়েছেন। তিনি বলেন, এক হাজার ৮০০ জন নারীসহ এক লাখ ৭৫ হাজারের বেশি বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী পাঁচটি মহাদেশের ৪০টি দেশের ৫৪টি মিশনে অংশগ্রহণ করেছেন। বর্তমানে সাত হাজারের বেশি বাংলাদেশি সেনা ও পুলিশ সদস্য ১০টি মিশনে শান্তিরক্ষার উদ্দেশ্যে মোতায়েন আছেন। তিনি বলেন, আমাদের শান্তিরক্ষীরা যে মিশনেই গেছেন, সেখানে জাতিসংঘের পতাকাকে সমুন্নত রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সমুজ্জ্বল করেছেন। এ কারণে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা অপারেশনে আগামী দিনের নতুন সংকটগুলো মোকাবিলায় শান্তিরক্ষীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জামাদি দিয়ে প্রস্তুত করা এখন সময়ের দাবি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশ্বশান্তি নিশ্চিত করা অতীতের চেয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, করোনার মতো অদৃশ্য শত্রুর আবির্ভাব, প্রযুক্তির দ্রুত প্রসার এবং সময়ের অগ্রযাত্রার সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন হুমকির উপাদান সৃষ্টি হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে ৪-১২ এপ্রিল ‘শান্তির অগ্রসেনা’ অনুশীলনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারত, ভুটান ও শ্রীলংকার অংশগ্রহণকারী সামরিক সদস্যদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তরিক অভিবাদন জানান। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক, সৌদি আরব, কুয়েত ও সিঙ্গাপুর থেকে আসা আমন্ত্রিত পর্যবেক্ষকদেরও তিনি স্বাগত জানান। তিনি বলেন, জাতির পিতার শান্তি দর্শন প্রতিষ্ঠায় এ বহুজাতিক অনুশীলন একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে ধারণ করে তার প্রতি সম্মান জানাতে আমরা ২০২০-২০২১ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি। পাশাপাশি সমগ্র বাঙালি জাতি গৌরবের সঙ্গে মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে। বিশ্বের ১১৬টি দেশের নেতারা ভিডিও এবং লিখিত অভিনন্দনবার্তা পাঠিয়েছেন। এসব বার্তায় এ অঞ্চলসহ বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবদানের স্বীকৃতি মিলেছে। বার্তা প্রেরণকারী দেশগুলোর প্রতি তিনি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা স্বাধীন বাংলাদেশে একটি সুশৃঙ্খল ও পেশাদার সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন এবং অত্যাধুনিক সামরিক একাডেমি প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি কুমিল্লার সামরিক একাডেমিতে বঙ্গবন্ধুর প্রদত্ত ভাষণের উদ্ধৃতি শেখ হাসিনা এ সময় তুলে ধরেন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘পূর্ণ সুযোগ-সুবিধা পেলে আমাদের ছেলেরা যে কোনো দেশের যে কোনো সৈনিকের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারবে। আমার বিশ্বাস, আমরা এমন একটি একাডেমি সৃষ্টি করব, সারা দুনিয়ার মানুষ আমাদের এ একাডেমি দেখতে আসবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব শান্তি সুসংহত করার প্রয়াসে দেশ-বিদেশের শান্তিরক্ষীদের অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে ১৯৯৯ সালে ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং (বিপসট)’ প্রতিষ্ঠা করি। এ প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা, কৌশল ও উন্নয়ন বিষয়ে সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের উচ্চতর প্রশিক্ষণের সুযোগ রয়েছে। অত্যন্ত পেশাদার ও প্রশিক্ষিত সামরিক বাহিনী গঠনের লক্ষ্য তার সরকার ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ শীর্ষক দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। ২০১৬ সালে ‘বাংলাদেশ পিস বিল্ডিং সেন্টার (বিপিসি)’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
অনুশীলন শান্তির অগ্রসেনা বিষয়ে একটি ভিডিও চিত্র অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয়। এতে ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ বক্তৃতা করেন।
বাংলাদেশ সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ স্বাগত ভাষণ দেন এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান ও শ্রীলংকার অংশগ্রহণকারী ১২৩ জন সেনা সদস্যদের মধ্যে প্রতিটি দেশের দু’জন করে সনদ পত্র প্রদান করেন। সমাপনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ অপারেশন, ভুটান সেনাবাহিনী, মালি ও দক্ষিণ সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত ফোর্স কমান্ডাররা, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা, বিভিন্ন দেশের ডিফেন্স এ্যাটাশে/সামরিক এডভাইজার ও পর্যবেক্ষকরা, বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং অনুশীলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর সদস্যরা।
বি: দ্র: প্রকাশিত সংবাদে কোন অভিযোগ ও লেখা পাঠাতে আমাদের ই-মেইলে যোগাযোগ করুন।