ডেস্ক রিপোর্টঃ
বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ দেশে ফেরত আনা এবং ব্যবস্থাপনার জন্য আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্স পুনর্গঠন করেছে সরকার। এই টাস্কফোর্স এখন পর্যন্ত জুলাই বিপ্লবে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবার এবং ১০ শিল্পগোষ্ঠীর প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ শেয়ার জব্দ করেছে আদালত। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা তাদের প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা জব্দ করা হয়। একইসঙ্গে বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে ৮৪ জনকে।
মঙ্গলবার দুপুরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্সের সপ্তমতম সভায় এসব তথ্য জানানো হয়। তদন্তের প্রেক্ষিতে দ্রুততম সময়ে মামলা করে তা নিষ্পত্তির নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপর বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেন গভর্নর।
বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা বলেন, অর্থপাচার নিয়ে যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করে, তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে। সভায় গভর্নর অর্থপাচার-সংক্রান্ত কাজ এগিয়ে নিতে জোরদারের পাশাপাশি মামলা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে তা শেষ করার এবং পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন।
শেখ হাসিনা পরিবারের বাইরে যে ১০ শিল্পগোষ্ঠী নিয়ে তদন্ত চলছে, সেগুলো হলো- এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, নাবিল গ্রুপ, সামিট গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, জেমকন গ্রুপ, নাসা গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, সিকদার গ্রুপ ও আরামিট গ্রুপ। এসব গ্রুপের পাশাপাশি গ্রুপের প্রধান ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত আর্থিক বিষয়ও তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে। তাদের অনেকেই বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন।
গত সেপ্টেম্বরে বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ দেশে ফেরত আনা এবং ব্যবস্থাপনার জন্য আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্স পুনর্গঠন করেছে সরকার। ওই সময়ে পুনর্গঠিত টাস্কফোর্সের সদস্য কমিয়ে সভাপতিসহ ৯ জন করা হয়েছে। আগে টাস্কফোর্সের জন্য আহ্বায়ক কমিটি ছিল, যার আহ্বায়ক ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল। আর কমিটি ছিল ১৪ সদস্যের।
টাস্কফোর্স পুনর্গঠনের পরই অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এ বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে বলা হয়। এরপর থেকে জোরেশোরে কাজ শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বয়ে যৌথ তদন্ত দল। সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। বাংলাদেশ ব্যাংকে বিশেষ নিরাপত্তাবিশিষ্ট কক্ষে চলছে তদন্তের নথিপত্র প্রস্তুতের কাজ। পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর লন্ডন সফর করেন।
গভর্নরের লন্ডন সফর নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস অফিস লিখিত তথ্য দিয়েছে, যেখানে লন্ডনে গভর্নর কী কী ধরনের কর্মসূচি ও আলোচনায় অংশ নিয়েছেন, তার উল্লেখ রয়েছে। এতে বলা হয়, পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে গঠিত টাস্কফোর্সের প্রধান আহসান এইচ মনসুর যুক্তরাজ্য সফরকালে সরকারি-বেসরকারি খাতের অংশীজনদের সঙ্গে বড় পরিসরে বৈঠক করেছেন, যেখানে তিনি দেশ থেকে চুরি হওয়া এই অর্থ উদ্ধারের ওপর জোর দিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস অফিস বলেছে, ‘লন্ডনে গভর্নর বিশ্বের বড় তিনটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। মামলা পরিচালনায় তহবিল সহায়তা দেওয়া এসব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের সম্পদ উদ্ধারে আইন সংস্থা ও তদন্তকারী নিয়োগে সহায়তা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।’
প্রতিষ্ঠান তিনটি বলেছে, যদি মামলা করার মতো পর্যাপ্ত প্রমাণ জোগাড় করতে পারে, তাহলে ৫ কোটি ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ করবে তারা। গভর্নর তাদের যত শিগগির সম্ভব বাংলাদেশে এসে অর্থ পাচারের মামলাগুলো পর্যালোচনা করে দেখার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
বি: দ্র: প্রকাশিত সংবাদে কোন অভিযোগ ও লেখা পাঠাতে আমাদের ই-মেইলে যোগাযোগ করুন।