এম কামরুজ্জামান,শ্যামনগর সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ শ্যামনগরে আইলা বিদ্ধস্থ মরুভূমি বনে যাওয়া শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নে গাছ নিধনের দায়ে ২০ জনের নামে মামলা হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গাবুরা ইউনিয়নে টেকসই বেড়িবাধ চলমান থাকায় বাধের পাশের গাছ কর্তন করায় ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা নন্দলাল বাদি হয়ে গাছ কাটার সাথে জড়িতদের নামে শ্যামনগর থানায় মামলা করেছে।
গাবুরা ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডে ২০৯০ মিটার ওয়াপদার বেড়িবাঁধের কাজ বর্তমানে চলমান রয়েছে। বেড়িবাঁধের কাজ করতে যেয়ে কপোতাক্ষ নদীর পাড়ে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৩ হাজারের অধিক গাছ কেটে ফেলেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। লক্ষ লক্ষ টাকা মূল্যের কাটা গাছ গুলো নিয়ে স্থানীয়রা জ্বালানি থেকে শুরু করে নিজেদের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করছেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৩ হাজারের ও বেশি গাছ কাটলেও মাথাব্যথা নেই বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। এযেন হরিলুটের বাতসা যে যেভাবে পারছে লুটে নিচ্ছে। ৩ হাজারের অধিক বিভিন্ন ধরনের গাছ গুলো এলাকাবাসী ও শ্রমিকরা প্রতিনিয়ত নিয়ে নিজেদের কাজে লাগাচ্ছে। এভাবে গাছ কর্তন হতে থাকলে মারাত্মক ভাবে হুমকির মুখে পড়বে পরিবেশ ও স্থানীয় জনগোষ্ঠী। আইলা পরবর্তী সময়ে লোনা পানির আগ্রাসনে দ্বীপ বেষ্টিত গাবুরা ইউনিয়ন ধু ধু মরুভূমিতে পরিণত হয়। সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় গাবুরা ইউনিয়নে বিভিন্ন রাস্তার পাশ, বেড়িবাধ এবং নদীর চর বনায়ন করা হলেও কিছু স্বার্থনেষী পরিবেশ বিমুখ মানুষের কারনে উক্ত বনায়ন কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়তে শুরু করেছে।
গাছ কাটার প্রতিবাদে স্থানীয়ভাবে স্থানীয় জনগোষ্ঠী এবং পরিবেশবাদী সংগঠন সম‚হ মানববন্ধন সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ জানান। কোনো কিছুতেই গাছবকাটা বন্ধ না হলে শ্যামনগর বাসস্ট্যান্ডে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিডিও’র উদ্যোগে ব্যাপকভাবে মানববন্ধন করেন সংগঠনের সদস্যবৃন্দ। মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে সার্বিক সহযোগিতা করেন পরিবেশবাদী বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সিএনআরএস। এসময় স্থানীয় জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা সম‚হ মানববন্ধনে সসংহতি প্রকাশ করেন। মানববন্ধনে স্থানীয় সংবাদ কর্মীদের পাশাপাশি জেলার সাংবাদিকেরা সংহতি প্রকাশ করেন এবং ব্যাপকভাবে মানববন্ধন কার্যক্রম সংবাদ প্রচার করেন। মানববন্ধন শেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যেম জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেন মানববন্ধন কারীরা। একাধিক মানববন্ধন সহ বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও গাছ কাটা বন্ধ করেননি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সহ এলাকাবাসী। সকাল হলেই মসজিদের মাইকে প্রচার দিয়েই গাছ কাটার উৎসবে নামেন এলাকাবাসী এমন চিত্র দেখা গেছে গাবুরা ইউনিয়নে। একেরপর এক গাছ কেটে সাবাড় করলেও কতৃপক্ষের যেন কোন টনক নড়েনি। এসময় গাবুরার সুশীল সমাজ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার কারীরা প্রতিদিনের গাছ কাটার দৃশ্য পাবলিশ করেছেন। শ্যামনগর উপজেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি ও পরিবেশবাদী সংগঠন সিডিওর নির্বাহী পরিচালক গাজী আল ইমরান গাবুরার গাছ কাটার ভিডিও পোস্ট করে আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন। এই পোস্ট দেখে সামাজিক বনায়নের সামাজিক বনায়নের সিসিএফ জেলা সামাজিক বনায়ন কর্মকর্তাকে সরজমিনে তদন্তের নির্দেশনা দেন। একই সময়ে বিভিন্ন দপ্তর সহ সাতক্ষীরা ৪ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য এস এম আতাউল হক দোলন কে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করলে তিনি বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রশাসনকে আইনি ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা প্রদান করেন। গাবুরা ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা নন্দলাল বাদি হয়ে শ্যামনগর থানায় ২০জনের নাম সহ অভিযুক্ত অজ্ঞাত ১০০জনের নামে সরকারি সম্পত্তি চুরির মামলা করেন। মামলার পর পরেই ঘটনা স্থল পরিদর্শন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শাখাওয়াত হোসেন।
শ্যামনগর থানার ওসি তদন্ত বলেন,সরকারি জায়গা থেকে গাছ কাটার অভিযোগে ২০ জনের নামে এবং অজ্ঞাত আরো ১শ জনকে বাদি করে শ্যামনগর থানায় মামলা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।
Design & Developed BY- zahidit.com
Leave a Reply