রবিউল ইসলাম,শ্যামনগ উপজেলা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধিঃ
তালের পাখা প্রাণের শখা, ভাদ্র মাসে যায় না দেখা প্রচলিত প্রবচন অনুযায়ী তালের পাখা ভাদ্র মাসে দেখা না গেলেও চৈত্র-বৈশাখ মাসে তাল পাখার কদর বাড়ে বেশ। চৈত্র মাসের প্রচণ্ড দাবদাহ ও রুদ্ধশ্বাস গরমে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জনজীবন। হাঁসফাঁস করতে করতে থাকে মানুষ। ঠিক তখনই দেহটিকে একটু শীতল করতে অনেকটা বাধ্য হয়েই মানুষ বেছে নেয় তাল পাতার তৈরি হাত পাখা।
আবহমানকালের গ্রামবাংলার ঐতিহ্যময় ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে তালের পাখা। সারা বছর ভুলে থাকলেও চৈত্র-বৈশাখ মাসে তীব্র দাবদাহ শুরু হলেই মনে পড়ে তালের পাখার কথা। আর প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে গরমকাল আসা মানেই হাতপাখার কদর বেড়ে যাওয়া। এটা যেন তাদের পরম বন্ধু।
তাল গাছের পাতা দিয়ে এক বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি এই হাত পাখা গ্রামীণ জনজীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। আবহমান কাল ধরে যার রয়েছে বেশ কদর। বৈদ্যুতিক পাখার বিকল্প হিসেবে তাল পাখার জুড়ি নেই সুদীর্ঘ কাল থেকে। তাল গাছের কাণ্ডসহ পাতা কেটে রোদে শুকিয়ে বাশের শলা ও সুতার সহযোগিতায় এক বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি করা হয় এই হাত পাখা। প্রকৃতির বৈরিতায় অসহনীয় গরমে হাঁপিয়ে উঠেছে জনজীবন। তবুও থেমে নেই মানুষের দৈনন্দিন জীবনের পথচলা। তবে বিদ্যুৎ চলে গেলেই দুর্বিসহ গরমে হাঁসফাঁস করছে কর্মব্যস্ত মানুষ। তাইতো গাত্র শীতল করতে কিছু সময়ের জন্য হলেও ব্যবহার করছেন সনাতন পদ্ধতিতে তৈরি তাল গাছের পাতা দিয়ে তৈরি এই হাত পাখা।
রঘুনাথ পুর শ্যামনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাজারগুলো ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি হাত পাখা বিক্রি করা হচ্ছে ৪০-৬০ টাকা। যা কিছুদিন আগেও বিক্রি হতো ১০-৩০ টাকায়। দূরদূরান্ত এলাকা থেকে ক্রয় করে এনে বিক্রি করার কারণে ও বিভিন্ন জিনিসের বাজার মূল্যের সাথে সঙ্গতি রাখতেই তাল পাখার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
উপজেলা সদর নকিপুর বাজারের পাখা বিক্রেতা সুধীর বিশ্বাস বলেন, আমি আজ পাঁচ বছর ধরে পাখা বিক্রি করছি। গত কয়েক বছরের চেয়ে এই বছরের শুরুতেই তুলনামূলক অনেক বেশি পাখা বিক্রি হয়েছে তাতে বেশ লাভ হয়েছে।
অপর একজন পাখা বিক্রেতা অজিৎ বিশ্বাস বলেন, অন্য ব্যবসায়ের পাশাপাশি গরমের সিজন আসলেই পাখা বিক্রি করে কিছু টাকা দেড়ি করতে পারি তবে অন্যান্য দ্রব্যের তুলনায় পাখার দাম কম থাকায় তা আর এবছর হবে না।
তবে পাখা ক্রেতারা বলছেন, তাপদগ্ধ জীবনে একটু প্রাণের আস্বাদন পেতে বৈদ্যুতিক পাখার বিকল্প হিসেবে তাল পাখা ব্যাবহার করেন তারা। পাশাপাশি ২০ টাকার পাখা ৬০ টাকায় বিক্রি হওয়ায় সুলভ মূল্যে পাখা ক্রয় করা অনেক কঠিন হয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের।
প্রতি বুধবার ও শনিবার উপজেলা সদর নাজিমগঞ্জ বাজারে চলে তালপাখা বিক্রির ধুম। সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ একটি দুটি ক্রয় করে ছুটেন গন্তব্যের দিকে। নিমিষেই ফুরিয়ে যায় শত শত তালপাখার গাইট। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা এখানে আসে তালপাখা ক্রয় করতে।
সামিম, টুটুল, রোকেয়াসহ এমনি কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, প্রচণ্ড গরমে যখন বিদ্যুৎ চলে যায় তখন চার্জার ফ্যানের পাশাপাশি তাল পাতার পাখা পরিপূরক ভূমিকা পালন করে। তাল পাখার পাশাপাশি প্লাস্টিকের তৈরি বিভিন্ন বাহারি রঙের হাত পাখা বিক্রি হচ্ছে সমানে। তবে প্লাস্টিকের হাত পাখার চেয়ে তাল পাখার কদর বেশি ক্রেতাদের কাছে।
এই দূর্বীষহ গরমে হত-দরিদ্র ও ছিন্নমূল শিশু, রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের একটু স্বস্তি দিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে বিনামূল্যে বা সুলভ মূল্যে জনপ্রতি একটি করে হাতপাখা প্রদানের আহ্বান জানান সাংবাদিক ও গবেষক কবি হাফিজুর রহমান শিমুল । পাশাপাশি প্রত্যেক ব্যক্তিকে বেশি বেশি পানি পান করা ও ছায়া শীতল জায়গায় অবস্থান করার অনুরোধ জানান তিনি।
বি: দ্র: প্রকাশিত সংবাদে কোন অভিযোগ ও লেখা পাঠাতে আমাদের ই-মেইলে যোগাযোগ করুন।