নিজিস্ব প্রতিনিধিঃ ২০২১ সালে খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলা প্রশাসন থেকে সফল জননী ক্যাটাগরীতে জয়িতা হিসেবে সম্মানিত করা হয়েছে এক সফল মা'কে। সফল এই মায়ের নাম বীণা রাণী দাশ। জন্ম খুলনা জেলার পাইকগাছা থানার রাড়ুলী গ্রামে। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় দূরারোগ্য অসুখে বাবাকে হারান। মা ও দুই ভাইয়ের টানাটানির সংসারে বড় বোনের উপর মাতৃসম দায়িত্বের ভার পড়ে। অভাবের সংসারে দশম শ্রেণিতে থাকতেই তার বিয়ে হয়। সেখানেও দারিদ্রতা পিছু ছাড়েনি; এক নদী থেকে আরেক সাগর, অভাবের। অভাবের সংসার হলেও বিয়ের পরে সংসারের কাজের মাঝে নিজেকে হারিয়ে যেতে দেননি। পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন নিজ আগ্রহে, স্বামীর সহায়তায়। ধীরে ধীরে পড়াশোনার প্রতি অপার আগ্রহে এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার এখানে সমাপ্তি হলেও, নিজের স্বপ্নকে থেমে যেতে দিননি। নিজের অধরা স্বপ্নকে ছুতে চেয়েছেন সন্তানদের মাধ্যমে।
স্বামী একান্নবর্তী পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। সংসারে অন্য কোন কৃষি আয় ছিলোনা। স্বামীর অপ্রতুল আয়ে সন্তানদের পড়াশোনার জন্য তথাকথিত 'দেখভাল' করতে পারেননি। কিন্তু, নিজের ভেতরে থাকা শিক্ষার আলোটা তিল তিল করে সন্তানদের মধ্যে সন্নিবেশ ঘটিয়েছেন এই মা। নিয়মকরে প্রতিদিন সংসারের কাজ শেষে বই নিয়ে বসতেন সন্তানদের সাথে।ছেলেরা বড় হতে থাকে, শিক্ষার খরচ ও সংসারের খরচ বাড়তে থাকে; কিন্তু, সন্তানদের কখনো বুঝতে দেননি। নিজ উদ্যোগে বাড়ির পতিত জমিকে সবজিচাষের উপযোগী করে বাড়তি আয়ের সুযোগ তৈরী করেন।
তার প্রথম সন্তান জনাব সজল সরকার গণিতে স্নাতক এবং বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ কপিলমুনি সহচরী বিদ্যামন্দিরের শিক্ষক, যিনি পাইকগাছায় একাধিকবার উপজেলার সেরা শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন। দ্বিতীয় সন্তান জনাব সুজন সরকার, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইংরেজিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেছেন। তিনি ৩৩তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হন এবং যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে মুজিবনগর, মেহেরপুরে কর্মরত আছেন।
প্রতিকূল পরিবেশে দুই সন্তানকে বড় করেছেন। তার অসীম ধৈর্য, সাহস, দৃঢ় মনোবল, চৌকস বুদ্ধিমত্তা ও পরিশ্রমের ফসল এই দুই সন্তান। তারা আজ স্ব-স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। এই মায়ের সাহসই তাদের অনুপ্রেরণা।
বি: দ্র: প্রকাশিত সংবাদে কোন অভিযোগ ও লেখা পাঠাতে আমাদের ই-মেইলে যোগাযোগ করুন।