ডেস্ক রিপোর্টঃ করোনার টিকার ক্যাম্পেইনের ৬ দিনই কেন্দ্রগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে দেশ যখন কাবু তখন মানুষের মধ্যে টিকার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে দিন দিন। ক্যাম্পেইনের সময়ে দেশে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলে ৫৮ লাখের বেশি মানুষ টিকা নিয়েছেন। টিকা গ্রহণকারীর চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি মানুষ নিবন্ধন করে বসে আছেন। ১ কোটি ২৭ লাখের বেশি মানুষ ক্যাম্পেইনে টিকা নিতে অনলাইনে নিবন্ধন করেন। সারা দেশে ৭ই আগস্ট শুরু হওয়া গণটিকাদান ক্যাম্পেইন বৃহস্পতিবার শেষ হয়। ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইনে ৩২ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার টার্গেট নিয়েছিল স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু তা দুইদিনে অতিক্রম করেছে।
আপাতত টিকার ক্যাম্পেইন দেয়ার চিন্তা নেই স্বাস্থ্য বিভাগের। আর করোনার নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচি যেভাবে চলছে, সেইভাবেই চলবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ১২ই আগস্ট বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশে প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন ১ কোটি ৫৩ লাখ ১১ হাজার ৬৬৯ জন। আর এর মধ্যে ক্যাম্পেইনের ৬ দিন শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন ৫০ লাখ ২১ হাজার ৮৭২ জন। এর আগে গত ৫ই আগস্ট পর্যন্ত প্রথম ডোজ গ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ২ লাখ ৮৯ হাজার ৭৯৭ জন। অন্যদিকে এ পর্যন্ত মোট দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছেন ৫২ লাখ ২৪ হাজার ৩১১ জন। ক্যাম্পেইনের সময় দ্বিতীয় ডোজ সংগ্রহণ করেছেন ৭ লাখ ৮০ হাজার ৭৯৪ জন। এই দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণকারীরা আগেই নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচি থেকে টিকা নিয়েছিলেন। এর আগে গত ৫ই আগস্ট পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫১৭ জন। ক্যাম্পেইনের সময় প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলে বিতরণ হয়েছে ৫৮ লাখ ২ হাজার ৬৬৬ ডোজ। বিভিন্ন হিসাব করে দেখা যায়, ৩২ থেকে ৩৩ লাখ লোক টিকা নিয়েছেন ক্যাম্পেইনের মূল কর্মসূচিতে। কারণ ক্যাম্পেইনের সময় দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণকারীরা এই ক্যাম্পেইনের টিকার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। তারা আগেই নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচি থেকে টিকা নিয়েছিলেন। আর নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচিতে ক্যাম্পেইনের আগে প্রতিদিন প্রথম ডোজ নিচ্ছিলেন ৩ লাখের মতো।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা মানবজমিনকে বলেন, করোনার টিকার ক্যাম্পেইন শেষ। তবে আপাতত টিকার ক্যাম্পেইন দেয়ার চিন্তা নেই তাদের। করোনার নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচি যেভাবে চলছে, সেইভাবেই চলবে। প্রথম ডোজ যারা নিয়েছেন তাদের দ্বিতীয় ডোজ দেয়াই এখন কাজ। আর যারা নিবন্ধন করেছেন টিকা পাননি তাদের যত দ্রুত সম্ভব টিকা দেয়ার কথা ভাবছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ১২ই আগস্ট পর্যন্ত দেশে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলে বিভিন্ন টিকা দেয়া হয়েছে ২ কোটি ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৯৮০ ডোজ। এর মধ্যে প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন ১ কোটি ৫৩ লাখ ১১ হাজার ৬৬৯ জন। দ্বিতীয় বা পূর্ণ ডোজ টিকা সম্পন্ন করেছেন ৫২ লাখ ২৪ হাজার ৩১১ জন। এই মুহূর্তে দ্বিতীয় ডোজ টিকার দরকার ১ কোটি ৮৭ হাজার ৩৫৮ জনের। আর নিবন্ধনকারীদের মধ্যে এক ডোজও টিকা পাননি এমন সংখ্যা ১ কোটি ৫২ লাখ ২৫ হাজার ৩৩৭ জন। অর্থাৎ প্রত্যেকের ২ ডোজ করে ৩ কোটি ৪ লাখ ৫০ হাজার ৬৭৪ ডোজ টিকা লাগবে। বর্তমানে নিববন্ধনকারীদেরই সবমিলিয়ে টিকা দরকার ৪ কোটি ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৩২ ডোজ। কিন্তু টিকা মজুত আছে ৯৫ লাখ ৬৯ হাজার ১৪০ ডোজ। বিভিন্ন হিসাব করে দেখা যায়, ৩ কোটি ৯ লাখ ৬৮ হাজার ৮৯২ ডোজ টিকার ঘাটতি রয়েছে এখনই। ১২ই আগস্ট বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন ৩ কোটি ৫ লাখ ৩৭ হাজার ৬ জন। অন্যদিকে দেশে এ পর্যন্ত কেনা, উপহার ও কোভ্যাক্স সুবিধায় সবমিলিয়ে ৩ কোটি ১ লাখ ৫ হাজার ১২০ ডোজ টিকা দেশে এসেছে।
প্রসঙ্গত, দেশে করোনার টিকাদান উদ্বোধন হয় চলতি বছরের ২৭শে জানুয়ারি আর গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হয় ৭ই ফেব্রুয়ারি থেকে। আর গ্রামের ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড টিকাদান ক্যাম্পেইন শুরু হয় ৭ই আগস্ট থেকে।
বি: দ্র: প্রকাশিত সংবাদে কোন অভিযোগ ও লেখা পাঠাতে আমাদের ই-মেইলে যোগাযোগ করুন।