,

শ্বাসরুদ্ধ ম্যাচে হারলো বাংলাদেশ

শ্বাসরুদ্ধ ম্যাচে শেষ বলে এসে পরাজয় বরণ করতে হলো বাংলাদেশকে। এতে করে তিন ম্যাচ সিরিজে সমতায় ফিরল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৭ রানের। প্রথম বলেই হোল্ডারের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে আসেন মুশফিকুর রহিম। দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে মোসাদ্দেককে দিয়ে ডট আদায় করে নেন হোল্ডার। চতুর্থ বলে দুই রান তুলে নেন মোসাদ্দেক। পঞ্চম বলে এক রান নিয়ে মাশরাফিকে স্ট্রাইকে দেন মোসাদ্দেক। শেষ বলে জয়ের জন্য প্রয়োজন পড়ে পাঁচ রানের, কিন্তু মাশরাফিকে এক রান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। এতে করে বাংলাদেশ তিন রানে পরাজয়বরণ করে।

গায়ানার প্রোভিডেন্ট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। ৪৯.৩ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৭১ রান সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ম্যাচের মতো ক্যারিবীয় ওপেনার এভিন লুইসকে ফিরিয়ে শুরুটা দারুণ করেছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। বলা যায় স্বাগতিকদের লাগাম টেনে ধরেছিল টাইগার বোলাররা।

লুইসকে বিদায় করলেও আরেক ওপেনার ক্রিস গেইল এগোচ্ছিলেন ঠাণ্ডা মাথায়। যদিও গেইল সেটা ধরে রাখতে পারেননি বেশিক্ষণ। ৩৮ বলে এক ছয় আর তিন চারে ২৯ রান করে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন। দুই নম্বরে ব্যাট করতে আসা শাই হোপও খেললেন ধীরে। ৪৩ বলে ২৫ রান করে বিদায় হন সাকিবের বলে।রুবেলের করা ২৪তম ওভারের শেষ বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ তুলে দেন ১২ রান করে জেসন মোহাম্মদ। এরপর রভম্যান পাওয়েল ও শিমরন হেটমেয়ার মিলে করেন ১০৩ রানের জুটি। তবে অর্ধশতক হাঁকানোর ৬ রান আগেই রুবেল হোসেনের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন পাওয়েল।

কিন্তু দিনটা হেটমেয়ারের। আগের ম্যাচে অর্ধশতক হাঁকানো এই বাম-হাতি ব্যাটসম্যানের ৭৯ রানের সময় ক্যাচ ফেলে দেন সাকিব। এরপর ৮৪ বলে চার ছয় আর তিন চারে তুলে নেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শতক। শতক হাঁকিয়েই যেন দ্বিগুণ জ্বলে উঠলেন ২১ বছর বয়সী এই তরুণ। রুবেলের এক ওভারে দুই ছয়ে নেন ২২ রান। ইনিংসে শেষ ওভারে মুস্তাফিজকে এক ছয় হাঁকিয়ে ৯৩ বলে ১২৫ রান করে তবেই বিদায় হন এই সেঞ্চুরিয়ান।

টাইগারদের হয়ে রুবেল হোসেন নেন সর্বোচ্চ ৩টি, মুস্তাফিজ ও সাকিব ২টি, মাশরাফি ও মিরাজ ১টি করে উইকেট নেন। ২৭২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ইনিংসের শুরুতে ছোট ঝড় তোলেন আগের ম্যাচে রান না পাওয়া বিজয়। যদিও ম্যাচের আগে লিটন দাসের একাদশে ঢোকার জোর গুঞ্জন শোনা যায়। কিন্তু জল্পনার অবসান ঘটিয়ে একাদশেই থাকেন বিজয়। এদিন তিনি চেষ্টা করেছিলেন রানে ফিরতে। কিন্তু ব্যাটে বলে হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত ৯ বলে ২ ছক্কা ও ২ চারে ২৩ রান করে জোসেফের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান তিনি।

দ্বিতীয় উইকেটে সাকিবকে নিয়ে তামিম বড় কিছুর ইঙ্গিত দেন। কিন্তু এদিন সফল হতে পারেননি। যদিও দ্বিতীয় উইকেটে ৯৭ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়ে দেবেন্দ্র বিশুর বলে আউট হয়ে ফিরে যান তামিম। অবশ্য তার আগে ৮৫ বলে ৬ চারের সাহায্যে ৫৪ রান করেন। এটি ছিল তামিমের ক্যারিয়ারের ৪২ তম হাফসেঞ্চুরি। তামিম ফিরে যাবার পর কারিয়ারের ৩৯তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন সাকিব, ৬২ বলে। তামিম-সাকিব জুটিতে আসে মূল্যবান ৯৭ রান।

সাকিব-তামিমের পর হাল ধরেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। সাকিব আউট হবার পর বস্তুত চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। আস্তে আস্তে সেই চাপ থেকে দলকে টেনে তুলতে থাকেন তারা। ৮৭ রানের মুল্যবান জুটি গড়ার পর ৫১ বলে ৩৯ রান করে আউট হন রিয়াদ। তখন দলের রান ৪ উইকেটে ২৩২, ৪৫.১ ওভারে।রিয়াদ আউট হবার পরপরই ৫৬ বলে ক্যারিয়ারের ২৯তম হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন মুশফিক। শেষ ১৮ বলে বাংলাদেশের দরকার ছিল ২৭ রান। মুশফিকের সঙ্গে উইকেটে ছিলেন সাব্বির। ৪৮তম ওভারে আসে ১৩ রান। কিন্তু ৪৯তম ওভারের শেষ বলে ১১ বলে ১২ রান করে আউট হয়ে যান সাব্বির। শেষ ৬ বলে তখন দরকার ৮ রান।

হোল্ডারের প্রথম বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে আউট হয়ে ফিরেন মুশফিক। তার আগে ৬৭ বলে ৫ চার ও ১ চয়ে করেন ৬৮ রান। পরের বলে কোনো রান নিতে পারেননি মোসাদ্দেক। চার বলে দরকার ৮ রান। সহজ সমীকরণ কঠিন হয়ে গেল। পরের বলেও রান পেলেন না মোসাদ্দেক। চতুর্থ বলে দুই রান নিলে শেষ দুই বলে দরকার ৬ রান। পঞ্চম বলে আসে এক রান। শেষ বলে মাশরাফি নেন ১ রান।

ক্যারিবীয়দের হয়ে জোসেফ, হোল্ডার, নার্স, পাওল, বিশু সকলেই একটি করে উইকেট লাভ করেন। অনবদ্য সেঞ্চুরির কল্যাণে সিমরন হেটমায়ার প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।  যদিও এ মাঠে সর্বোচ্চ ৩০৮ রান তাড়া করে জয়ে রেকর্ড ছিল গত বছর পাকিস্তানের বিপক্ষে করেছিল ক্যারিবীয়রাই। আগামী ২৮ জুলাই সেন্ট কিটসে হবে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *