প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে কিছুই অর্জন করা যায় না। দেশের মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে কিছুই অর্জন করা যায় না। এটা অন্যায়। কোনো কিছু অর্জন করতে হলে জনগণের শক্তির প্রয়োজন। সে জন্য অগ্নিসন্ত্রাসের পথ পরিহার করে এবং জনগণের কল্যাণে কাজ করার ও তাদের পাশে থাকা প্রয়োজন।
গতকাল সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০২৩ উপলক্ষে ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি মাল্টি পারপাস কমপ্লেক্সে ‘মুক্তিযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত নির্বাচিত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীগণকে সংবর্ধনা প্রদান’ অনুষ্ঠানে দেয়া ভাষণে তিনি একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ২০২২-২৩ সালে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ শান্তিকালীন পদকপ্রাপ্ত সদস্যগণকে পদকে ভূষিত করেন। সরকার প্রধান বলেন, আমি চাই তাদের (অগ্নিসন্ত্রাসী) চেতনা জাগ্রত হোক যে, মানুষকে পুড়িয়ে মেরে কোনো কিছু অর্জন করা যায় না। অর্জন করতে হলে জনগণের শক্তির দরকার হয়। তাদের পাশে থাকতে হয়। জনগণের অকল্যাণ করে, তাদের পুড়িয়ে মেরে কিছু অর্জন করা যায় না-অন্তত এই বিষয়টা যেন যারা এগুলো করছে তারা বুঝতে পারেন।
তিনি বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস, জ্বালাও পোড়াও মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলে। আমি জানি না, একজন মানুষ কীভাবে আরেকটা জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারে। এমনটি দেখেছিলাম ’৭১ সালে। তখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বস্তিতে আগুন দিতো। আর মানুষ বেরিয়ে এলে সঙ্গে সঙ্গে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারতো। দুঃখের বিষয় এরপর ২০১৩-১৪ সালে এবং এখন ইদানীং সেই অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছে। পোড়া মানুষগুলোর ক্ষতবিক্ষত দেহ এবং তাদের আত্মচিৎকার ও পরিবারগুলো কী অবস্থায় আছে। শেখ হাসিনা বলেন, যে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে লাখো বাঙালি স্বাধীনতার জন্য নিজের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল, পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর সেই স্লোগানও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। যে ৭ই মার্চের ভাষণ এ দেশের মানুষকে উজ্জীবিত করেছিল, সেই ভাষণও নিষিদ্ধ ছিল।
কিন্তু আজ সেই ভাষণ আন্তর্জাতিক প্রামাণ্য দলিল হিসেবে স্থান পেয়েছে। আড়াই হাজার বছরে সামরিক-বেসামরিক নেতারা যত ভাষণ দিয়েছেন, জাতির পিতার ৭ই মার্চের ভাষণ তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, এটুকু আমরা করতে পেরেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্নগুলো চিহ্নিত করা, যেখানে গণকবর আছে সেগুলো সংরক্ষণ করা, স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে তোলার পাশাপাশি প্রত্যেকটি উপজেলায় আমরা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স তৈরি করেছি। সেখানে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন স্মৃতি ধরে রাখার জন্য মিউজিয়াম হবে। ‘ইতিহাস থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। নতুন প্রজন্মকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও বীরত্বের ইতিহাস জানানো দরকার। স্বাধীনতা পেয়েছি বলেই আজকে আমরা নিজেদের পরিচয় দিতে পারি। কিন্তু একসময় সেটা পারিনি। এখন আমাদের স্বাধীন দেশে আমরা স্বাধীনভাবে চলতে পারি। তিনি বলেন, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী শুধু দেশে নয়, বিদেশে শান্তিরক্ষা মিশনে বিরাট অবদান রেখে যাচ্ছে। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ইতিমধ্যে অনেকে জীবন দিয়েছেন। তাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে প্রধানমন্ত্রী সকালে সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০২৩ উপলক্ষে ঢাকা সেনানিবাসে শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শিখা অনির্বাণে পৌঁছলে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম. নাজমুল হাসান, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আবদুল হান্নান এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান তাকে স্বাগত জানান। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে যান। সেখানে তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক এবং তিন বাহিনীর প্রধানগণ তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তিনি বলেন, বহির্বিশ্বের যে সকল বরেণ্য রাষ্ট্রনায়ক, রাজনীতিবিদ, দার্শনিক, শিল্পী-সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, বিশিষ্ট নাগরিক এবং সংগঠন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ঐতিহাসিক অবদান রেখেছেন তাদেরকে সম্মাননা প্রদানের লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে ‘বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননা’, ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ এবং ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ প্রদান করা হচ্ছে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যদের সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের গতি অব্যাহত রেখেই দেশকে আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। তিনি বলেন, ইতিহাস থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে এবং ভবিষ্যতের দিকে আমরা এগিয়ে যাবো জ্ঞানভিত্তিক প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে আমরা শিক্ষা-দীক্ষায় এগিয়ে যাবো।
বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বে আমাদের স্থান করে নেবো। ‘বিগত ১৫ বছরে বাংলাদেশের অনেক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। ‘আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ,’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। কারণ, আমাদের উন্নয়ন শহরকেন্দ্রিক নয়, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল পর্যায় পর্যন্ত আমরা উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছে দিতে পেরেছি। তিনি বলেন, তার সরকার নানা ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা এনে দিতে পেরেছে। বাংলাদেশ ২০২৬ সাল থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যাত্রা শুরু করবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এর প্রস্তুতি নিচ্ছি। শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট দেশে পরিণত করতে কাজ করে যাচ্ছে। এসময় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং তিন বাহিনীর প্রধানগণ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপ
Design & Developed BY- zahidit.com
Leave a Reply