,

অস্ট্রেলিয়াকে টানা তিন ম্যাচ হারিয়ে বাংলাদেশের সিরিজ জয়

নাসুম আহমেদ, সাকিব আল হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান ও শরিফুল ইসলাম দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখানোয় শেষ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার দরকার দাঁড়াল ২২ রান। এরপর শেখ মেহেদী হাসান এলোমেলো বোলিং করলেও সমীকরণ মেলাতে পারল না তারা। অজিদের টানা তিন ম্যাচে হারিয়ে দুই ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জিতে নিল বাংলাদেশ। যেকোনো সংস্করণের ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এটাই টাইগারদের প্রথম সিরিজ জয়।

 

ডেস্ক রিপোর্টঃ শুক্রবার মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে পাঁচ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে ১০ রানে জিতেছে স্বাগতিকরা। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর ফিফটিতে ৯ উইকেটে ১২৭ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। জবাবে অস্ট্রেলিয়া পুরো ২০ ওভার খেলে মাত্র ৪ উইকেট খুইয়েও করতে পারে কেবল ১১৭ রান।

 

সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন মাহমুদউল্লাহ। তবে আলাদা করে নজর কাড়েন বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। ৪ ওভারে উইকেট না পেলেও কেবল ৯ রান দেন তিনি। এর মধ্যে ডট ছিল ১৫টি।

মন্থর উইকেটে অজিদের বেঁধে রাখতে বাংলাদেশের শুরুটা হয় জুতসই। দ্বিতীয় ওভারেই বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদের শিকার হন ম্যাথু ওয়েড। শর্ট ফাইন লেগে তার ক্যাচ নেন শরিফুল ইসলাম। আগের দুই ম্যাচে ব্যর্থ অজি অধিনায়ক ওয়েড করেন ৫ বলে ১ রান। দলীয় ৮ রানে পতন হয় প্রথম উইকেটের।

এদিন ওপেনিং জুটিতে পরিবর্তন আনে অস্ট্রেলিয়া। জশ ফিলিপি বাদ পড়ায় ওপেন করতে নামেন একাদশে ঢোকা বেন ম্যাকডারমট। তার সঙ্গী হন ওয়েড। তিনি গত দুই ম্যাচে মিডল অর্ডারে খেলেছিলেন। তবে উপরে উঠেও সুবিধা করতে পারেননি।

পরের ওভারে রিভিউ নিয়ে বাঁচেন মিচেল মার্শ। সাকিবের বল উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহানের হাতে জমা পড়ায় ক্যাচ আউটের সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন আম্পায়ার। তবে রিপ্লেতে দেখা যায়, ব্যাটে-বলে সংযোগ হয়নি।

পাওয়ার প্লেতে অস্ট্রেলিয়া ১ উইকেট হারিয়ে তুলতে পারে কেবল ২০ রান। তবে উইকেটে জমে যাওয়ায় এরপর রানের চাকায় দম দেওয়া শুরু করে তারা। ম্যাকডারমট এক-দুই নিয়ে এগোলেও মার্শ খেলতে থাকেন হাত খুলে।

 

সপ্তম ওভারে নাসুমকে চার-ছক্কা মারেন মার্শ। দুই ওভার পর শরিফুলকে দুইবার চারে সীমানাছাড়া করেন তিনি। ১৩তম ওভারে জুটি ভাঙার সুযোগ হাতছাড়া হয় বাংলাদেশের। মোস্তাফিজুর রহমানের বলে ফাইন লেগে ম্যাকডারমটের লোপ্পা ক্যাচ ফেলে দেন শরিফুল।

 

দ্বিতীয় জীবনে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ম্যাকডারমট। পরের ওভারে আক্রমণে ফিরে তাকে বিদায় করে বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক থ্রু দেন সাকিব। তার বলে সুইপ খেলতে গিয়ে ব্যাটে লাগার পর বল ভেঙে দেয় স্টাম্প। ম্যাকডারমট থামেন ৪১ বলে ৩৫ করে। তার ইনিংসে ছয় ২টি।

ম্যাকডারমটের বিদায়ে থামে ৭১ বলে ৬৩ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি। ৩ রানের মধ্যে ফের উল্লাসে মাতে বাংলাদেশ। শরিফুলের ফুল লেংথের বলে মিড অনে মোজেজ হেনরিকসের ক্যাচ নেন শামিম পাটোয়ারী। তিনি ৩ বল খেলে করেন ২ রান।

 

আগের দুই ম্যাচেই ৪৫ রান করেছিলেন মার্শ। অস্ট্রেলিয়ার অন্য ব্যাটসম্যানরা খাবি খেলেও তিনি আছেন রানের মধ্যে। এদিন তিনি তুলে নেন ফিফটি। মুখোমুখি হওয়া ৪৫ বলে ব্যক্তিগত মাইলফলকে পৌঁছান তিনি।

 

শেষ ৩ ওভারে অজিদের প্রয়োজন পড়ে ৩৪ রান। কিন্তু ১৮তম ওভারের প্রথম বলেই তাদের প্রধান ভরসা মার্শকে আউট করেন শরিফুল। তার বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে লং অফে নাঈম শেখের ক্যাচ হন মার্শ। ৪৭ বলে ৫১ রানের ইনিংসে ৬টি চার ও ১টি মারেন তিনি।

 

ওই ওভারে পরে ২টি চার হজম করেন শরিফুল। তাতে ২ ওভারে ২৩ রানে দাঁড়ায় অজিদের জয়ের সমীকরণ। পিচ কঠিন হলেও উইকেট হাতে থাকায় অসম্ভব ছিল না সেটা। কিন্তু সিরিজজুড়ে আলো ছড়ানো মোস্তাফিজ তাক লাগিয়ে দেন ১৯তম ওভারে। পাঁচটি ডট দিয়ে মাত্র ১ রান খরচ করেন তিনি। এর মধ্যে চারটি ডট করেন ড্যান ক্রিস্টিয়ানকে।

 

এরপর শেষ ওভারে শঙ্কা জাগলেও শেখ মেহেদী শেষ পর্যন্ত দেন ১১ রান। তার প্রথম বলে ছক্কা হাঁকান অ্যালেক্স ক্যারি। পরের বলে হয় সিঙ্গেল। এরপর ডট ক্রিস্টিয়ানের। কিন্তু পরের ডেলিভারিটি শেখ মেহেদী করেন কোমরের ওপরে ফুল টস। কিন্তু সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি ক্রিস্টিয়ান। নোয়ের সঙ্গে হয় সিঙ্গেল।

 

ফ্রি হিটের বলটি দারুণ করায় ১ রানের বেশি নিতে পারেননি ক্যারি। এরপর ফের ডট দিয়ে ম্যাচের শেষ বলে সিঙ্গেল নেন ক্রিস্টিয়ান। ফলে সিরিজ জয়ের সুতীব্র উল্লাসে মাতে বাংলাদেশ দল।

এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩ রানের মধ্যে দুই ওপেনার নাঈম ও সৌম্য সরকারকে হারিয়ে ফেলেছিল বাংলাদেশ। তবুও তারা লড়াইয়ের পুঁজি পায় মাহমুদউল্লাহর কল্যাণে। এক প্রান্ত আগলে ক্যারিয়ারের পঞ্চম ফিফটি তুলে নিয়ে ৫৩ বলে তিনি করেন ৫২ রান। তার ইনিংসে চার ৪টি।

সাকিবের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে ৩৬ বলে ৪৪ রানের জুটি গড়েন মাহমুদউল্লাহ। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়লেও তিনি ক্রিজে জমে থাকেন, সাজঘরে ফেরেন শেষ ওভারের চতুর্থ বলে। এছাড়া, সাকিব ১৭ বলে ২৬ ও আফিফ হোসেন ১৩ বলে ১৯ রান করেন।

অজিদের হয়ে নাথান এলিস ৩৪ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ছিলেন সবচেয়ে সফল বোলার। ইনিংসের শেষ তিন বলে মাহমুদউল্লাহ, মোস্তাফিজ ও শেখ মেহেদীকে ঝুলিতে পুরে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন তিনি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অভিষেকে হ্যাটট্রিকের প্রথম নজির গড়ে ইতিহাসে ঢুকে পড়েন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *