,

কালিয়াকৈরে বহিরাগত শ্রমিকদের তান্ডব,আতঙ্কে দেশ ছাড়ছেন ল্যাভেন্ডার এ কর্মরত চাইনীজ নাগরিকরা।

শাকিল হোসেন,কালিয়াকৈর গাজীপুর প্রতিনিধিঃগাজীপুরের কালিয়াকৈরে বহিরাগত শ্রমিকদের সাথে আন্দোলনে যোগ না দেওয়ায় ল্যাভেন্ডার গার্মেন্টেসে হামলা ভাংচুর ও লুটপাট চালায় একই এলাকায় অবস্থিত এটিএস অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা। এ ঘটনায় ৭ চাইনিজ নাগরিকসহ ল্যাভেন্ডার ৫০ কর্মকর্তা কর্মচারীকে মারাত্মক জখম করা হয়।আহতদের মাঝে ৮ জন সংক্রামুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। হামলার ঘটনায় আতঙ্কে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়ে একে একে দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন কারখানাটিতে বিনিয়োগকারী চাইনিজ নাগরিকরা।

গত বুধবার (২২ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে আট টায় উপজেলার কামরাঙ্গাচালা এলাকায় ল্যাভেন্ডার গার্মেন্ট লিমিটেড নামক ওই কারখানায় হামলা ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।এই ঘটনায় কালিয়াকৈর থানায় একটি সাধারণ ডাইরি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন চাইনিজ নাগরিক ও কারখানাটির কর্তৃপক্ষ।

পুলিশ ও কারখানা কতৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়,
গাজীপুরে অবস্থিত চীনা মালিকানাধীন ল্যাভেন্ডার গার্মেন্টস লিমিটেডে গত বুধবার সকাল একই এলাকা অবস্থিত এটিএস অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা সকাল সাড়ে আটটায় এক ভয়াবহ হামলা চালায়।এসময় ল্যাভেন্ডার গার্মেন্টস এর প্রধান ফটক ভেঙ্গে অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ব্যপক ভাংচুর চালিয়ে প্রায় ২.৫০-৩ কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংসের পাশাপাশি ব্যাপক লুটপাট চালানো হয়েছে।এই হামলার পর ল্যাভেন্ডার গার্মেন্টসে কর্মরত চীনা নাগরিকরা চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে, এবং প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। সেদিনের হামলার পর থেকেই কারখানাটি বন্ধ রয়েছে।আতঙ্কে কারখানাটিতে বিনিয়োগ কারী এবং কর্মরত চাইনিজ নাগরিকরা বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যেতে শুরু করেছেন।

কোম্পানির হেড টেকনিশিয়ান চাইনিজ নাগরিক মিস উইকি বলেন, এটি আমাদের দলের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক এবং দুঃখজনক একটি ঘটনা। আমরা সবসময় স্থানীয় কর্মীদের সঙ্গে মিলে-মিশে কাজ করার চেষ্টা করি এবং বাংলাদেশ সরকারের শ্রম আইন অনুযায়ী সকল ধরনের সুবিধা দিয়ে থাকি কিন্তু এই ধরনের ঘটনা আমাদের নিরাপত্তার বিষয়ে বড় প্রশ্ন উত্থাপন করেছে।
মিস উইকি আরও বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি দীর্ঘদিন ধরে এবং সবসময় চেষ্টা করেছি কর্মীদের জন্য একটি সুরক্ষিত ও আরামদায়ক কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে। কিন্তু এই হামলার কারণে আমরা এখন আমাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম বাংলাদেশ থেকে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে চিন্তা করছি। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে আমাদের বাংলাদেশে থাকা অসম্ভব হয়ে যাবে।
ল্যাভেন্ডার গার্মেন্টসের সহকারি মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ আবু জাফর বলেন, বুধবার সকাল সাড়ে আট টায় এটিএস এ্যাপারেলস এর অসোন্তষ্ট শ্রমিকরা আমাদের কারখানা বন্ধ করার দাবিতে কারখানাটির মূল ফটকে এসে কারখানায় হামলা চালালে আমাদের শ্রমিকরা তা প্রতিহত করেন। পরে এটিএস এ্যাপারেলস এর কয়েকশ শ্রমিক পূনরায় একত্রীত হয়ে আমাদের কারখানায় হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট চালান। ইতোমধ্যে আমাদের ৭ চাইনিজ নাগরিক সহ ৫০ জন লোক আহত হয়েছেন এর মধ্যে ৮ জন মারাত্বকভাবে জখম হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এঘটনায় কারখানায় আনুমানিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমান আড়াই থেকে তিন কোটি টাকা। এখন বড় উদ্ভিগ্নের বিষয় হচ্ছে চীনা বিনিয়োগকারীগণ আমাদের দেশ থেকে তাদের বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছেন। যদি চিনা নাগরিকরা বিনিয়োগ তুলে নেয় তাহলে আমাদের দেশের জন্য বড় একটি অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটবে।

কালিয়াকৈর থানার অফিসার ইনচার্জ রিয়াদ মাহবুব বলেন, এটি এস এ্যাপারেলসিএর শ্রমিকদের দ্বারা এ ধরনের হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা নিশ্চিত করব যে, যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে আমরা বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ পুলিশের হাই কমান্ড থেকে নির্দেশনা পেয়েছি। এবং অনতিবিলম্বে উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *