,

খুলনা মেডিকেলে চিকিৎসা সেবা বন্ধ, ভোগা‌ন্তি চরমে

মোঃ নুরউল্লাহ হোসেনঃ
খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে চি‌কিৎসা ব‌্যবস্থা ভে‌ঙে প‌ড়ে‌ছে। অজানা এক ভয়ে পা‌লিয়ে বেড়া‌চ্ছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. গৌতম কুমার পাল। এরই মধ্যে পদত্যাগ করেছেন হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মো. আকতারুজ্জামান। আর ৪১ চি‌কিৎসক‌কেও অবা‌ঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে একরকম বন্ধ হয়ে গেছে খুমেকের চিকিৎসা সেবা।

এমন উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) খুমেকের ব‌হির্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগের অর্ধশত চি‌কিৎসক অনুপ‌স্থিত রয়েছেন। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন দূর-দূরান্ত থে‌কে আসা রোগীরা।

সকাল ৯টা থে‌কে বেলা ১১টা ৪০ পর্যন্ত স‌রেজমিনে দেখা যায়, ব‌হির্বিভা‌গে ২০ জন চি‌কিৎসক অনুপস্থিত রয়েছেন । এ ছাড়া আন্তঃবিভা‌গে রে‌জিস্ট্রার, সহকা‌রী রে‌জিস্ট্রার, কনসালট‌্যান্টসহ আরও ২১ চি‌কিৎসকের দেখা নেই। এতে পু‌রো হাসপাতা‌লে চি‌কিৎসাব্যবস্থার বেহালদশা তৈরি হয়েছে। রোগীরা সেবা না পে‌য়ে ফিরে যা‌চ্ছেন।

বা‌গেরহাট থে‌কে চিকিৎসা নিতে আসা কুলসুম বেগম কাল‌বেলা‌কে বলেন, ব্রেস্ট টিউমার নি‌য়ে খুলনা মে‌ডি‌কেল ক‌লেজ হাসপাতা‌লে চি‌কিৎসা নি‌তে এসেছি। কাউন্টারে টি‌কিট কে‌টে নির্ধারিত কক্ষে এসে দে‌খি ডাক্তার নেই। এখন ফেরত যে‌তে হ‌বে। ক‌বে এ অবস্থা ঠিক হ‌বে জা‌নি না।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও বিএম কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ, আহত ৪০
প্রায় একই অভিযোগ রুপসা থেকে আসা দে‌লোয়ার হো‌সেন ও তার ছে‌লে ফা‌হিমের।

এসব বিষয়ে খুমেকের প‌রিচালক, উপপ‌রিচালক, সহকারী প‌রিচালক, আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) এবং আরএস কেউ কর্মস্থলে না থাকায় কারও বক্তব‌্য নেওয়া সম্ভব হয়‌নি। এ ছাড়া তাদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ‌্য প‌রিচালক ডা. মনজুরুল মু‌র্শিদ কাল‌বেলা‌কে ব‌লেন, হাসপাতাল সরাস‌রি আমা‌দের অধীনে না। তারপ‌রও আমি ‌বিভাগীয় ক‌মিশনারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। এরই মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সব জানানো হয়েছে।

সং‌শ্লিষ্ট সূ‌ত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) খুলনা মে‌ডি‌কেল ক‌লে‌জের শিক্ষার্থী‌দের এক‌টি অংশের চাপে হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মো. আকতারুজ্জামান পদত্যাগ করেন।

মঙ্গলবার দুপুরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে মেডিকেল কলেজের শতাধিক শিক্ষার্থীকে নিয়ে উপস্থিত হন কার্ডিওলোজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. মোস্তফা কামাল। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এমন ৪১ জন চিকিৎসক একটি তালিকা নিয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। এতে আতঙ্কে ভয়ে দুটি কাগজেই স্বাক্ষর করেন ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আক্তারুজ্জামান।

এই ৪১ জন চিকিৎসকের মধ্যে পরিচালক, উপপরিচালক, সহকারী পরিচালক, আরএস, আরএমও, রেজিস্ট্রারসহ গুরুত্বপূর্ণ সব পোস্টের চিকিৎসক রয়েছেন।

উপপরিচালক ডা. আক্তারুজ্জামান বলেন, জীবনে কেউ আমাকে আওয়ামী লীগ ও স্বাচিপ কোনো কিছুর প্রাথমিক সদস্য হয়েছি কোনো দিন দেখাতে পারলে আমি সব শাস্তি মাথা পেতে নেব। আমি কোনো দিন সরকারি চাকরি ছাড়া কোনো দিন কোনো আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়েছি এমন কোনো রেকর্ড নেই। বরং আমাকে আওয়ামী লীগ সরকার বারবার শাস্তিমূলক বদলি করেছে। নিচের গ্রেডে নামিয়ে দিয়েছে। এতকিছুর পর গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ভাবলাম এবার হাসপাতালের জন্য কিছু করতে সুযোগ পাব; কিন্তু আমাকে জোরপূর্বক পদত্যাগ করানো হলো। আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম।

খুলনা মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসক ফোরামের সদস্য সচিব ডা. তাহমিদ মাশরুর বলেছেন, স্যার ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে ছিল এমন অভিযোগে তাকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা পদত্যাগ করিয়েছেন এমন কোনো বিষয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা অবগত নন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *