,

তানোরে টানা বর্ষণে বন্যা: পানিতে ডুবেছে শতাধিক হেক্টর আমন ধান, হতাশ কৃষক

মমিনুল ইসলাম মুন,রাজশাহী প্রতিনিধি:টানা দুই দিনের ভারী বর্ষণে রাজশাহীর তানোর উপজেলায় রোপা আমন ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও লাগাতার বৃষ্টির কারণে উপজেলার বিভিন্ন মাঠে কৃষকদের সোনালী স্বপ্নের ফসল এখন পানির নিচে। এতে হতাশায় কপালে ভাঁজ পড়েছে কৃষকদের মুখে।

গত বুধবার (২৯ অক্টোবর) দিবাগত রাত ও শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত টানা বৃষ্টিপাতের কারণে তানোরের বিভিন্ন গ্রামীণ রাস্তা, পুকুর ও খাল উপচে আশপাশের জমিতে পানি ঢুকে পড়ে।
উপজেলার চান্দুড়িয়া, কামারগাঁ, পাঁচন্দর, কলমা ইউনিয়ন, বাধাইড় ও তানোর পৌরসভার অধিকাংশ আমন জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, পাকতে থাকা সোনালী ধানের ক্ষেতজুড়ে থইথই করছে পানি। একরের পর একর জমির ধান পানির নিচে, কোথাও কোথাও ধানের মাজা ভেঙে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে।

তালন্দ ইউনিয়নের লালপুর গ্রামের কৃষক শরিফুল ইসলাম, সেলামপুর গ্রামের আকরাম বলেন,
দুই দিনের ঝোড়ো হাওয়া আর টানা বৃষ্টিতে মাঠের সব ধান পড়ে গেছে। দ্রুত পানি না নামলে সব ধান পচে যাবে।

তানোর পৌর এলাকার ধানতৈর গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলাম বলেন,

আমাদের জমিতে এমনভাবে পানি ঢুকেছে যে, এখনই যদি পানি না নেমে যায় তাহলে ধানের গাছে আগাছা ও পচন ধরবে।

উজান থেকে এখনো পানি নামছে বলে জানান স্থানীয়রা। অনেক জায়গায় ব্রিজের নিচ দিয়ে স্রোত বইছে, মাঠজুড়ে থইথই করছে পানি। এতে শুধু ধান নয়, পুকুরের মাছ ও শীতকালীন সবজি ক্ষেতও ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে,
তানোর উপজেলার কামারগাঁ, পাঁচন্দর ও চান্দুড়িয়া ইউনিয়নসহ পৌর এলাকায় মোট ২০৩ হেক্টর রোপা আমন ধান পানিতে ডুবেছে। এর মধ্যে ৪৬ হেক্টর সম্পূর্ণ এবং ১৫৭ হেক্টর আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে, বাধাইড় ইউনিয়নের শিবরামপুর সাইধারা মাঠে বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ওই গ্রামের কৃষক ও গণমাধ্যম কর্মী মমিনুল ইসলাম মুন জানান,
আমার দুই একর জমির সব ধানই পানিতে তলিয়ে গেছে, কিছুই বাঁচেনি।

আরেক কৃষক আনারুল ইসলাম বলেন,

আমার চার বিঘা জমির ধান পুরোপুরি বিনষ্ট হয়েছে। এখন সারের দেনা কিভাবে পরিশোধ করব বুঝতে পারছি না।

দরিদ্র কৃষক হেফাজ উদ্দিনের দুই বিঘা জমির ধানও সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুধু শিবরামপুর গ্রামেই অন্তত ৩৯ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বলেন,

তানোরে মোট ২২ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ২০৩ হেক্টর জমি পানিতে ডুবেছে। যদি তিন-চার দিনের মধ্যে পানি নেমে যায়, তাহলে ক্ষতি তুলনামূলক কম হবে। তবে এর বেশি সময় পানি থাকলে ধান নষ্ট হয়ে যাবে।”

তিনি আরও জানান,
পানি কমে গেলে ক্ষতির সঠিক হিসাব নিরূপণ করা সম্ভব হবে এবং প্রয়োজনীয় সহায়তার বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।

স্থানীয় কৃষকদের আশঙ্কা, টানা বর্ষণ চলতে থাকলে এবার আমনের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে, যা সরাসরি প্রভাব ফেলবে তাদের জীবিকা ও স্থানীয় খাদ্য নিরাপত্তায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *