ডেস্ক রিপোর্টঃ বেসরকারি টিভি চ্যানেল মাই টিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথীর ছেলে কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যাচাই করছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। রিমান্ডে তাঁকে পাঁচ দিনের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাতে এসব তথ্য পাওয়া যায়। বর্তমানে আফ্রিদি কারাগারে রয়েছেন।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, মামলা তদন্তকালে অফ্রিদির নানা অপকর্মের অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। জিজ্ঞাসাবাদে আফ্রিদি বলেছেন, মোবাইল ফোন ও কম্পিউটারে তাঁর কাজের সব তথ্য সংরক্ষণ করে রাখেন তিনি। একসময় প্রতিদিন কনটেন্ট ক্রিয়েট করাই তাঁর মূল কাজ ছিল। সেটা করতে গিয়ে তাঁকে নানা কৌশল অবলম্বন করতে হতো।
এতে কেউ বাধা দিলে তিনি তার অপরাধ জগতে সহযোগিতাকারী পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক এমপি, মন্ত্রীসহ আরো কয়েকজনের দ্বারস্থ হতেন।
আফ্রিদির কাছ থেকে জব্দ করা তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল, সিপিইউ ও আই ম্যাকে আগের অনেক অপকর্মের তথ্য পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন সিআইডির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য আইটি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। শিগগিরই ফরেনসিক প্রতিবেদন পাবেন সিআইডির তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক খান মো. এরফান বলেন, গ্রেপ্তার তৌহিদ আফ্রিদিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। সেসব তথ্য যাচাই চলছে। তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল, সিপিইউ ও আই ম্যাক থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার আশা করছেন তাঁরা। এসব ডিভাইসের ফরেনসিক পরীক্ষা চলছে।
আফ্রিদিকে জিজ্ঞাসাবাদকারী কর্মকর্তা বলেন, রিমান্ডে নিয়ে অফ্রিদিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সাবেক সরকারের সময় তাঁর অবৈধভাবে অর্থ কামানোর তথ্য মিলেছে।
বিশেষ করে অফ্রিদির বাবা মাই টিভির মালিক নাসির উদ্দিন সাথীর ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে অনেক অপকর্মে জড়ানোর তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে মাই টিভি দখল করার বিষয়ে অফ্রিদি যে তথ্য দিয়েছেন, তার তদন্ত চলছে। নাসির উদ্দিন সাথী মাই টিভির প্রকৃত মালিক, না বিলকিস জাহান নামের এক নারী এর মালিক—সে বিষয়ে আরো তদন্ত চলছে। সিআইডির কাছে তথ্য রয়েছে, ওই নারীর কাছ থেকে জাল-জালিয়াতি এবং পেশিশক্তির ভয় দেখিয়ে মাই টিভি চ্যানেলটি দখল করে নেওয়া হয়। ওই নারীর সঙ্গে এরই মধ্যে এ নিয়ে কথা বলেছেন সিআইডির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। আফ্রিদির কাছ থেকে পাওয়া তথ্য যাচাইয়ের পাশাপাশি তদন্তে বাবা-ছেলের দুর্নীতির তথ্যের অনুসন্ধান চলছে।
গত বছরের ২৪ জুলাই সেলিব্রেটি ও অন্য কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বন্ধ করতে প্ররোচিত করেছিলেন আফ্রিদি। জিজ্ঞাসাবাদে তা তিনি স্বীকার করেছেন জানিয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সাবেক সরকারের বেশ কয়েকজন এমপি, মন্ত্রী ও প্রভাবশালী নেতার সহযোগিতায় এই তৎপরতা চালান তিনি। এ ছাড়া জিজ্ঞাসাবাদে আফ্রিদি তাঁর বাবার অবৈধ সম্পদের বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন।
তৌহিদ আফ্রিদি গ্রেপ্তারের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে নিয়ে যেসব আলোচনা ও সমালোচনা হয়, সেদিকে সিআইডির নজর ছিল জানিয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, সোশ্যাল মিডিয়ায় অফ্রিদিকে নিয়ে যেসব তথ্য ভাইরাল হয়, তা যাচাই করে অনেক তথ্যেরই সত্যতা পেয়েছেন তাঁরা। আবার অনেক তথ্য বিভ্রান্তিমূলক মনে হয়েছে তাঁদের। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বিস্তারিত থাকবে।
তদন্তে উঠে এসেছে, ২০১৫ সালে ইউটিউবার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে পথচলা শুরু করেন তৌহিদ আফ্রিদি। পরে নিজেকে অপরাধ জগতের ‘ডন’ ভাবতে শুরু করেন বলেও জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য মেলে। বিশেষ করে তাঁর সঙ্গে উঠতি নায়িকা ও মডেলদের ঘনিষ্ঠতার কথাও তিনি স্বীকার করেন। এক সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, এ কাজে তাঁকে নেপথ্যে থেকে সহযোগিতা করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক গোয়েন্দাপ্রধান হারুন অর রশীদ।
সিআইডি বলছে, আফ্রিদি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার একটি হত্যা মামলার আসামি। গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় মামলাটি করেন মো. জয়নাল আবেদীন নামের এক ব্যক্তি। মামলায় তৌহিদ আফ্রিদি ও তাঁর বাবা মাই টিভির মালিক নাসির উদ্দিন সাথীসহ ২৫ জনকে আসামি করা হয়।
Design & Developed BY- zahidit.com
Leave a Reply