মোঃ আবুল বাসার,নোয়াখালী প্রতিনিধিঃ
তদারকির অভাবে খুঁড়িয়ে চলছে মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের নির্মাণকাজ। এ ছাড়া জিও ব্যাগে ভরাট করা বালু, জিও ব্যাগ ডাম্পিং, প্লেসিংসহ বাঁধ রক্ষা কাজের মান নিয়েও অভিযোগ উঠেছে। বাঁধের কাজের ধীরগতির ফলে বর্ষা মৌসুমে তীব্র ভাঙনের শঙ্কা প্রকাশ করছেন উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা বলছেন, কাজে ধীরগতি থাকলেও নিয়মমাফিক টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন হবে তীর রক্ষা বাঁধের নির্মাণ
কাজ
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে,সুবর্ণচর উপজেলার উরিরচর ও হাতিয়া উপজেলার চানন্দী ইউনিয়নের নলের চরে মেঘনা নদীর বাঁ তীরে দীর্ঘ ২০ বছরের অব্যাহত ভাঙনে প্রায় ২০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নদীর তীর রক্ষা বাঁধ না থাকায় প্রতিনিয়ত ভাঙনের কবলে পড়ছেন নদী-তীরবর্তী বাসিন্দারা। এতে বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন হাজারো মানুষ। ভাঙনের মুখে প্রতিদিনই কোনো না কোনো মানুষ হারাচ্ছেন তাদের ভিটেমাটি।
ভাঙন ঠেকাতে ও নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবিতে নানা সময়ে আন্দোলন করে আসছিলেন উপকূলীয় সুবর্ণচর উপজেলার বাসিন্দারা।
পাউবো নোয়াখালী বিভাগের তথ্যমতে, ২০২৩ সালে ৩৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩টি প্যাকেজে মেঘনা নদীর ৩৭৭ মিটার তীর রক্ষা প্রকল্পের কাজের টেন্ডার দেয় এই বিভাগ। টেন্ডার শেষে চলতি বছরের ৮ এপ্রিল প্রকল্পের কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে আশার আলো দেখতে শুরু করেন নদীতীরের বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাসিন্দা ও চানন্দী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোঃ শাহজাহান,বিএনপি নেতা মোঃ আকবর হোসেন যুবলীগ নেতা শাহারাজ হোসেন, মোঃ সামছুদ্দিন, মোঃ বাহার উদ্দিন ও মোঃ জহিরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ২০২৩ সালে কাজের বরাদ্দ পাস হলেও কাজ শেষের মেয়াদ রয়েছে আর মাত্র ছয় মাস। এই সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৮ থেকে ১০ শতাংশ। বর্ষার আগেই প্রকল্পের কাজ শেষ না করলে ওই মৌসুমে এই বাঁধের নির্মাণকাজ করা যাবে না। ফলে যেটুকু কাজ হবে, তা ফের ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, প্রকল্পের ২২, ২১ ও ১৭ নম্বর প্যাকেজের ঠিকাদার মেসার্স রহমান ইঞ্জিনিয়ার্স যেটুকু কাজ করেছে, তাতে জিও ব্যাগে ৮০+ এফএম বালু ব্যবহারের কথা থাকলেও কম মূল্যের ৬৫ থেকে ৭০ এফএম বালু দিয়ে অদক্ষ শ্রমিকের মাধ্যমে নদীর তীরে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত নদীর যেখান থেকে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করার কথা সেই গভীরে কোনো জিও ব্যাগ প্লেসিং করা হয়নি। যে কারণে বর্ষা মৌসুমের আগেই জিও ব্যাগের চিকন বালু বেরিয়ে ব্যাগগুলোর প্লেসিং ডিসপ্লেসিং হয়ে যাচ্ছে। এতে টেকসই তীর রক্ষা বাঁধ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা।
বাঁধ নির্মাণকাজে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তদারকির অভাব রয়েছে দাবি করে স্থানীয় মোস্তফা মাহমুদ বলেন, ঠিকাদারের কাছ থেকে কাজের মান ও সময়মতো কাজ বুঝে নেওয়ার কথা থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা আসেন ১৫ থেকে ২০ দিন পর। তাও সরেজমিনে কাজ না দেখেই ঠিকাদারের অফিসে বসে গল্প করে সময় কাটিয়ে চলে যান তারা। এই সুযোগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রহমান ইঞ্জিনিয়ার্স ৮০+ এফএম বালুর স্থলে মাত্র ৬৫ থেকে ৭০ এফএম চিকন ও ভিজা বালু দিয়ে জিও ব্যাগ ভরাট করছে। নিম্নমানের বালু দিয়ে ভরাট করা জিও ব্যাগ নদীতীরে ফেলার সঙ্গে সঙ্গে স্রোতের পানিতে ব্যাগ থেকে চিকন বালু বের হয়ে ডাম্পিং ডিসপ্লেসিং হয়ে যাচ্ছে। এভাবে কাজ করলে এই তীর রক্ষা বাঁধ বর্ষার শুরুতেই ভেঙে নদীতে ভেসে যাবে বলেও মনে করছেন নদীতীরের বাসিন্দারা।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রহমান ইঞ্জিনিয়ার্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যানেজার মোস্তাফিজুর রহমান কাজের মান সঠিক হচ্ছে দাবি করে বলেন, বালু পরীক্ষার মেশিনারি দিয়ে পরীক্ষা করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা কাজ বুঝে নিচ্ছেন। লোকাল মানুষ না বুঝেই এমন মিথ্যা অভিযোগ করছেন।
সরেজমিনে প্রকল্পের কাজ পর্যবেক্ষণে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালীর কার্য সহকারী নুরুল আফসারের সঙ্গে কাজের অনিয়মের বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন।
পরে মোবাইল ফোনে তিনি জানান, আসলে সরকার পতনের পর ওই এলাকার কিছু লোকজন ঠিকাদারের পেছনে লাগছে। তারা চাচ্ছে সেখানে তারাই বালুগুলো সরবরাহ করবে কিন্তু যিনি বর্তমানে বালুগুলো সরবরাহ করছেন, তার বালুগুলো ভালো ও মানসম্মত। তাই আমরা এই বালুগুলোই রিসিভ করছি। এতে বালু সরবরাহের অনুমতি না পেয়ে ওই বিএনপি নেতাকর্মীরাই এসব মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন।
মেঘনা নদীতীর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের নির্মাণকাজে নিম্নমানের বালু ব্যবহার ও অনিয়মের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ হালিম সালেহী। তিনি বলেন, এবার নোয়াখালীতে ভয়াবহ বন্যার কারণে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করতে একটু দেরি হওয়ায় এরই মধ্যে ৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নিয়মমাফিক টেকসই বাঁধ নির্মাণকাজ শেষ করা হবে বলে আশা করছি।
উপকূলীয় এলাকার অবশিষ্ট অবকাঠামো রক্ষায় কাজের সঠিক মান বজায় রেখে চলতি শীত মৌসুমের মধ্যেই টেকসই নদীতীর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের কাজ শেষ করার দাবি জানিয়েছেন ভিটামাটি হারানো মেঘনাতীরের বাসিন্দারা।
Design & Developed BY- zahidit.com
Leave a Reply