ডেস্ক রিপোর্টঃ এই ব্যস্ত কর্মসূচির মাঝেই ১ ও ২ মার্চ পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার আরামবাগ ও নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে সভা করবেন তিনি। এরপর উত্তর ২৪ পরগণার বারাসতেও সভা করার কথা রয়েছে তার। লোকসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিতে লক্ষ্য যখন ‘ভোটব্যাঙ্ক’ তখন রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিটা পদক্ষেপের পিছনে বিশেষ কারণ রয়েছে এমনটাই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। একই ভাবে সভাস্থল হিসাবে আরামবাগ ও কৃষ্ণনগরকে বেছে নেয়ার পিছনেও বিশেষ কারণ রয়েছে, এমনটাই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
‘এটা নির্বাচনের সময়। এই সময়ে বিরোধিতা এবং বিরোধীদের বিরুদ্ধে প্রচার সাধারণত তুঙ্গে ওঠে। ফলে সভা কোথায় এবং কবে হবে সেটা নির্বাচন করাটাও গুরুত্বপূর্ণ’, বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক শিখা মুখার্জী, ‘এক্ষেত্রে বিজেপি বেছে নিয়েছে আরামবাগ, কৃষ্ণনগর এবং বারাসাতকে। বিজেপি মনে করে প্রধানমন্ত্রী যদি এই জায়গাগুলিতে এসে বক্তব্য রাখেন তাহলে তারা রাজনৈতিক ভাবে লাভবান হবে।’ ‘এবং এই বক্তব্যগুলোও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ কারণ তৃণমূলকে মূলত দুর্নীতি, হিংসা, হুমকি দেওয়া, নারী নির্যাতন, দরিদ্রদের ইস্যু নিয়ে কড়া ভাষায় আক্রমণ করা হবে,’ বলছিলেন তিনি।
এই রাজ্যে প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচির মাঝে হুগলী জেলার আরামবাগকেই বেছে নেওয়া হয়েছে প্রথম সভার জন্য। এর পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্য। তার কথায়, ‘গত লোকসভা ভোটে আরামবাগ কেন্দ্রে স্বল্প ব্যবধানে তৃণমূলের কাছে হেরেছিল বিজেপি। এটা এমন একটা কেন্দ্র যেখানে রাজনৈতিক সন্ত্রাসের অভিযোগ কিন্তু বহু পুরনো। ৯০ এর দশক থেকে এটা চলে আসছে। এখানে একতরফা ভোট হওয়াটাই রীতি।’
এই পরিস্থিতিতে গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের কাছে স্বল্প ব্যবধানের হারকে ‘ইতিবাচক’ বলেই মনে করছে গেরুয়া শিবির। ‘২০১৯ সালে হেরে যাওয়ার পর থেকেই তাদের নজর কিন্তু ছিল আরামবাগ কেন্দ্রের দিকে,’ বলেছেন ভট্টাচার্য। এর পাশাপাশি অন্য একটি কারণও আছে আরামবাগ কেন্দ্রে প্রথম সভা করার পিছনে। ‘দলিত এবং মুসলিমদের প্রাধান্য আছে ওই অঞ্চলে। গোঘাট এবং আরামবাগে অনেকটা আদিবাসী এবং তপশিলি জাতি এবং উপজাতির মানুষ আছেন।’ ‘খানাকুল এবং পুরশুড়াতে মুসলিম জনসংখ্যা বেশি। দলিত এবং আদিবাসী মানুষদের মধ্যে তারা মুসলিম বিরোধী চিন্তাধারা তৈরি করতে পেরেছে। যে কারণে আরামবাগ বিজেপির নিশানায় রয়েছে,’ বলছেন হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির পর্যবেক্ষক ভট্টাচার্য।
নদীয়ার কৃষ্ণনগরে দ্বিতীয় সভা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ‘কৃষ্ণনগরকে বেছে নেয়ার পিছনে বিশেষ কারণ রয়েছে। এটা মহুয়া মৈত্রের নির্বাচনী কেন্দ্র,’ বলেছেন শিখা মুখার্জী। গত বছর ‘ক্যাশ ফর কোয়ারি’ বা ‘অর্থের বিনিময়ে প্রশ্ন’ করার অভিযোগ উঠেছিল মহুয়া মৈত্রর বিরুদ্ধে। এথিক্স কমিটির প্রস্তাব মেনে তাকে লোকসভা থেকে বহিষ্কার করা হয়। তবে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে কৃষ্ণনগর থেকেই লড়বেন মহুয়া মৈত্র। ২০১৯ সালে ওই আসনটি জিতেছিলেন মিজ মৈত্র।
দুর্নীতিকে কেন্দ্র করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগবে বিজেপি নেতৃত্ব, এমনটাই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে লক্ষ্য হল মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোট আদায় করা। স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্য বলেন, ‘কৃষ্ণনগর তৃণমূলের হাতে থাকলেও আগে বিজেপি জিতেছিল। কৃষ্ণনগরকে কেন্দ্র করে সভা করার কারণ মতুয়া সম্প্রদায়।’ ‘বনগাঁ, রানাঘাটের পাশাপাশি কৃষ্ণনগরেও মতুয়া ভোট যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। কৃষ্ণনগরে সভাকে কেন্দ্র করে বিজেপি পুরো মতুয়া সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে কথা বলবে।’
লোকসভা নির্বাচনের আগে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনও (সিএএ) আলোচনার একটি বড় বিষয়। ‘মার্চেই নাগরিকত্ব আইন যে বলবৎ হতে পারে আর এটি কিন্তু মতুয়াদের কাছে একটি বড় বিষয়,’ বলেছেন ভট্টাচার্য। পশ্চিমবঙ্গে তাদের গতবার পাওয়া ১৮টি আসনের সংখ্যা এবার আরও বাড়াতে চায় বিজেপি। ভট্টাচার্য ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘রানাঘাট এবং বনগাঁ এই দুটি সিটের বিষয়ে বিজেপি নিশ্চিত। এখন কৃষ্ণনগর আর বারাসাত আসনেও জিতে গেলে তৃণমূলের সঙ্গে একটা জোরদার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা যাবে এমনটা মনে করছে তারা।’
রাজ্য রাজনীতি যখন সন্দেশখালি ইস্যু নিয়ে উত্তাল তখন উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাতকে সভাস্থল হিসাবে বেছে নেওয়াটা বিশেষ ইঙ্গিতপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। সন্দেশখালিতে সাধারণ মানুষের উপর তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান ও তার দলবলের অত্যাচার, নারী নির্যাতন এবং গত ফেব্রুয়ারি মাসে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের আধিকারিকদের উপর হামলা-সহ একাধিক ইস্যুকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে বিরোধীরা।
রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্তরে বিজেপি-র শীর্ষ নেতারাও এই অভিযোগগুলিকে কেন্দ্র করে তোপ দেগেছেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার হয়েছেন শেখ শাহজাহান। এই পরিস্থিতিতে বারাসাতে সভার বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে বলে মনে করেন অনেকেই। ‘বারাসাত এবং বসিরহাট যেহেতু একই জেলায়, তাই বারাসাতকে কেন্দ্র করে বিজেপি সোচ্চার হতে চায়।’ ‘সন্দেশখালিতে তৃণমূল দুর্নীতি, নারী বিরোধী কার্যকলাপকে উৎসাহ দিয়ে এসেছে এবং দলের বাহুবলীদের দিয়ে তারা (তৃণমূল) এই কাজগুলো করে থাকে – এইটাই বলতে চাইবে বিজেপি। এটা কিন্তু তাদের তৃণমূলের বিরুদ্ধে অল আউট অ্যাটাক,’ বলেছেন শিখা মুখার্জী।
কোন রাজনৈতিক দল কোন বিষয়টিকে হাতিয়ার করে ভোটের ময়দানে নামবে তা প্রায় স্পষ্ট। ‘এ রাজ্যের মানুষ রাজনৈতিক ভাবে সচেতন। তারা ধারণা করছে এই দুটি বিষয় এবং সন্দেশখালি নিয়ে ধর্মভিত্তিক যে রাজনীতি এবং সংঘাত চলছে সেটা নির্বাচনে একটা বড় ইস্যু হবে। আশঙ্কা রয়েছে ধর্মভিত্তিক যে ইস্যুগুলো আছে সেটা কীভাবে উসকানি পেতে পারে। তবে প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়গুলিকে নিয়ে কী বলেন সেটাই দেখার ‘ বলছেন শিখা মুখার্জি। সূত্র: বিবিসি।
Design & Developed BY- zahidit.com
Leave a Reply