,

ভ্যানে লাশের স্তূপ, ব্রাজিলের জার্সি দেখে স্বামীর লাশ শনাক্ত

এন,এন,বিঃ
ভ্যানে লাশের হলুদ জার্সি দেখে নিখোঁজ স্বামীকে শনাক্ত করলেন স্ত্রী লাকি আক্তার। সেই ভিডিওতে কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা দেহগুলোর স্তূপ থেকে ব্রাজিলের জার্সি পরিহিত একটি হাত বের হয়ে থাকতে দেখা যায়। সেই হাত দেখে ওই ব্যক্তিকে স্বামীর লাশ হিসেবে শনাক্ত করেছেন তিনি।

লাকী আক্তার নামের ওই নারী বলছেন, লাশের ভ্যানে থাকা ওই ব্যক্তি তার স্বামী আবুল হোসেন। এক সময় লাকির প্রতিবেশীরাও ওই হাত আবুল হোসেনের হওয়ার কথা বলছেন, যিনি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার খবর শুনে ব্রাজিলের জার্সি পরেই ঘর থেকে বেরিয়েছিলেন।

লাকী আক্তার গত ৫ আগস্ট থেকে তার স্বামী আবুল হোসেনের নিখোঁজ থাকা নিয়ে আশুলিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেছিলেন।

একটি ভিডিওতে ভাইরাল হওয়া ভ্যানে একটির ওপর আরেকটি নিথর দেহ স্তূপ করে রাখার যে ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়েছে সেটি সাভারের আশুলিয়া থানার ঠিক পাশের ঘটনা বলে ইতোমধ্যেই গণমাধ্যমসহ দেশব্যাপী ঝড় তুলেছে।

সেখানকার বাসিন্দা জনাব আলী বলেন, ভিডিওটিতে যে ভ্যানে রক্তমাখা নিস্তেজ দেহগুলো তুলতে দেখা গেছে সেটি দাঁড়ানো ছিল থানার কোনায় জামে মসজিদের ঠিক পেছনে গলির ওপরে। সময় তখন বিকাল ৫টা। এর কিছুক্ষণ পর সড়ক থেকে দেহগুলো ওই ভ্যানে তোলা হয়।

স্থানীয় লোকজন বলেন, পরে পুলিশ চলে যাওয়ার পর থানার সামনে থেকে পুলিশের একটি লেগুনা জ্বলতে দেখা যায়। পরিস্থিতি শান্ত হলে জনগণ সেই আগুন নেভানোর পর সেখানে কয়েকটি পোড়া লাশ দেখতে পান।

৬ আগস্ট সেখানে ছয়টি পোড়া লাশ উদ্ধার করা হয়। সেগুলোর মধ্যে চারটি স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাকি দুইজনের লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে নিকটবর্তী আমতলী গোরস্থানে দাফন করা হয় বলে স্থানীয় সূত্রমতে জানা গেছে।

লাকী আক্তার ও আবুল হোসেন দম্পতি থাকতেন বাইপাইল পশ্চিমপাড়ায় একটি ভাড়া বাড়ির ঘরে। তাদের দুই সন্তান বড়টির বয়স নয় বছর ছোটটি ছয় মাস বয়সি। আবুল হোসেন দিনমজুরির ভিত্তিতে ট্রাক থেকে মালামাল নামানোর কাজ করতেন। লাকী সেখানকার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। তবে ছোট বাচ্চাটির জন্মের পর শারীরিক কারণে কাজ ছাড়তে বাধ্য হন। সংসার চলছিল পুরোপুরি আবুল হোসেনের রোজগারে।

শনিবার ভাড়া বাসায় কথা হয় তার সঙ্গে। কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন বারবার। বলছিলেন, তার সন্তানদের এখন কী হবে?

লাকী আক্তার বলছেন, গত ৫ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন আবুল হোসেন। এরপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

ছয় মাসের বাচ্চা কোলে লাকী এই কয়েক দিন ধরে হাসপাতাল, মর্গ, কারাগার, থানা থেকে শুরু করে সেনানিবাস পর্যন্ত স্বামীর খোঁজে গিয়েছেন। পরে গত শুক্রবার রাতে তার একজন আত্মীয়কে কেউ একজন ভিডিওটি পাঠিয়ে দেখতে বলেন। আত্মীয়টি সেটি তাকে দেখালে তিনি স্বামীকে চিনতে পারেন। সেই সময়ই ভ্যানে ঢাকা চাদর কিছুটা সরে গিয়ে আরও দেহের নিচে চাপা পড়ে থাকা একজনের হাত বের হয়ে যায়। দুই তিন সেকেন্ডের সেই হাতের ছবি দেখে তাকে আবুল হোসেন বলে শনাক্ত করেন তার স্ত্রী, স্বজন প্রতিবেশীরা।

লাকী আক্তার বলছেন, ৫ আগস্ট দুপুরের দিকে ব্রাজিল ফুটবল দলের একটি হলুদ রঙের জার্সি আর লুঙ্গি পড়ে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন তিনি। আশপাশে অনেকেই চেনেন আবুলকে। বাইপাইল মসজিদ থেকে যখন আসরের আজান হচ্ছিল তখনো মসজিদের পাশেই তাকে দেখেছেন স্থানীয়রা।

আবুল হোসেনের প্রতিবেশীরা জানান, ওই দিন শেখ হাসিনার পতনের পর বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে একটি বিজয় মিছিলে আবুল হোসেনকে দেখেছিলেন তিনি। ভিডিওটি দেখে স্থানীয় আলী হোসেন ধারণা করছেন, বিকালে রাস্তায় জমায়েত হওয়া লোকজনকে লক্ষ্য করে পুলিশ যে গুলি চালিয়েছিল তাতে অনেকেই হতাহত হন। যাদের লাশ ভ্যানে করে সরিয়ে ফেলা হয়।

তবে আশুলিয়া থানা পুলিশের কাছে এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। ভ্যানের সেই নিথর দেহ বা লাশগুলো কোথায় গেল সেটিও জানে না পুলিশ। ভ্যানের লাশগুলোই কি লেগুনায় তোলা হয়েছিল কিনা সে তথ্যও নেই তাদের কাছে।

ঢাকা জেলার এসপি আহম্মদ মুইদ কয়েক দিন আগে দায়িত্ব নিয়েছেন। মোবাইল ফোনে তাকে লাকী আখতারের বিষয়টি জানালে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, আমি লাকী আখতারের বিষয়টি শুনলাম। আমি সব খবর নিয়ে আপনার সঙ্গে পরে কথা বলব।

তিনি আরও বলেন, আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি তবে এখনো বিস্তারিত কিছুই জানি না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *