মোঃ রাজিব হোসেন জেলা,মানিকগঞ্জ,প্রতিনিধিঃ
মানিকগঞ্জে ঘিওর উপজেলা সদরে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লাভলু আহমেদ (৩৭) নিহত হয়েছেন। মারাত্নক আহত হয়েছেন আরও ৬ জন। গতকাল সোমবার দুপুরে ঘিওর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর সামনে এই ঘটনাটি ঘটে। স্থানীয়দের সুত্রে জানা গেছে, এলাকার আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
নিহত লাভলু আহমেদ ২০০৩ সালে ঘিওর উপজেলা ছাত্রদলের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। গত চার মাস আগে কুয়েত থেকে দেশে ফিরে লাভলু আহমেদ বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেন। নিহত লাভলু কুস্তা গ্রামের মৃত আব্দুল হালিমের ছেলে। আহতরা হলেন, কুস্তা গ্রামের মৃত দীন ইসলামের ছেলে ঘিওর সদর ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি রাহাতুজ্জামান খান আলতাফ (৪২), একই গ্রামের শওকত দর্জির ছেলে ওয়ার্ড যুবদল নেতা হিমেল দর্জি (২৫), উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক মো: আফিকুল ইসলাম, ঘিওর উপজেলা মোড় এলাকার বাসিন্দা মো: রফিকের ছেলে সোহাগ (২৫), আজাদ খানের ছেলে তামিম (২৫) ও শাহ আলমের ছেলে মো: সেলিম (২৮)।
আহতদের ঘিওর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় ঘিওর উপজেলা সদরে থমথমে ভাব বিরাজ করছে। যে কোন সময় আরো বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় একাধিক সুত্রে জানা গেছে, গত তিন মাস ধরে স্থানীয় আধিপত্য বিস্তার এবং রাজনৈতিক কোন্দল নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ চলে আসছিল। এ নিয়ে কয়েক দফা মারামারি, শালিস বৈঠক ও হামলা-ভাংচুরের ঘটনাও ঘটেছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা বিএনপির শীর্ষস্থানীয় দুই নেতা জানান, এলাকার ক্ষমতা আর আধিপত্ত বিস্তারের জের ধরে ঘিওর সদর (উপজেলা মোড়) ও কুস্তা গ্রামের বিএনপি নেতা কর্মীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে এই দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এ বিষয়টি নিয়ে জেলা বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দও কয়েক দফায় আলোচনা করে মিমাংশা করে দিয়েছেন। নেতাদের সামনে সমঝোতা হলেও আড়ালে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েই যায়। এরই ফলশ্রুতিতে আজকের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ এবং হতাহতের স্বজনদের মারফত জানা গেছে, আজ সোমবার বেলা বারোটার দিকে ঘিওর বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় যুবদল নেতা কুস্তা গ্রামের বাসিন্দা হিমেলকে উপজেলা মোড় এলাকার সোহাগ, তানভীর, বাবু, শীতল, তামিম, সেলিমসহ আরো অন্তত ১৫-২০ জন বেধড়ক পেটায়। এসময় দুই গ্রুপের মারামারিতে আহত হিমেল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাবার পথে পুনরায় তাদের উপর হামলা চালায়। এরপর ওই আহতদের দেখার জন্য ছাত্রদলের সাবেক নেতা লাভলু মিয়া, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক আফিকুল ইসলাম, ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি রাহাতুজ্জামান আলতাফ হাসপাতালের গেটে যাওয়ার পর পরই তাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায় প্রতিপক্ষ। এসময় দেশিয় চাপাতি ও রামদা দিয়ে কুপিয়ে আহত করা হয় লাভলু, আলতাফ ও হিমেলকে। খবর পেয়ে ঘিওর থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। গুরুতর আহত লাভলুকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে সেখানকার দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে সেখান থেকে মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষনা করে। আর আহত আলতাফকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।
এবিষয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর মানিকুজ্জামান মানিক বলেন, আমি এলাকায় ছিলাম না। এ বিষয়ে কিছু জানিও না। কোন মন্তব্যও নেই।
এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক এস এ জিন্নাহ কবির বলেন, দলীয় ভাবে এ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঘিওর থানা পুলিশের নিস্কৃয়তার কারনেই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম- লাভলু আহমেদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক বিএনপি নেতা মারা গেছেন। কয়েকজন আহত আছে। তদন্ত করা হচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টাও চলছে। মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
Design & Developed BY- zahidit.com
Leave a Reply