অন্তরা রায়,রংপুর সদর প্রতিনিধিঃ রংপুরে শুক্রবার বাজারে মাছ, মুরগি, ডিম ও সবজি কয়েক সপ্তাহ ধরেই বাড়তি দামে কিনছেন ক্রেতারা। এর ওপর হুট করে বেড়েছে ভোজ্য তেল ও চিনির দাম। গেল দুই সপ্তাহে পণ্য দুটিতে ক্রেতার খরচ বেড়েছে ২০ টাকার চেয়েও বেশি। এর মধ্যে চিনির দাম আগের সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে কেজিপ্রতি বেড়েছে ১০ টাকা করে।
আর এই সপ্তাহে বাড়ে ভোজ্য তেলের দাম। প্রতি কেজি সয়াবিন তেলের দাম আট টাকা কিংবা তার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। যদিও বাজারের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ঠেকাতে পণ্য দুটির দাম বেঁধে দিয়েছে মিল মালিক ও সরকার। তবে বেঁধে দেওয়া দামে বাজারে তেল ও চিনি তেমন মিলছে না। দাম বাড়ার হুজুগে প্রায় সব বাজারেই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে তেল ও চিনি।
গত সপ্তাহে খুচরা বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১৩৫ থেকে ১৩৮ টাকা কেজি। সেই হিসাবে লিটার ছিল ১২২ থেকে ১২৪ টাকা। কিন্তু সপ্তাহের মাঝামাঝি হঠাৎ তেলের দাম লিটারে চার টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেন মিল মালিকরা। এ ক্ষেত্রে খোলা সয়াবিন তেল ১২৯ টাকা এবং বোতলজাত তেল ১৫৩ টাকা লিটার নির্ধারণ করা হয়, যদিও সরকারের অনুমোদন নিয়েই এই দাম বাড়ে। এখন সেই দামেও খুব একটা মিলছে না সয়াবিন তেল। রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৩ টাকায়। বোতলজাত তেল গত সপ্তাহ পর্যন্ত ১৪৫ থেকে ১৪৮ টাকায় পাওয়া গেলেও চলতি সপ্তাহে তা ১৫০ টাকার ওপরে উঠেছে।
এর আগে গত সপ্তাহে হঠাৎ বাড়ে চিনির দাম। তিন দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি চিনির দাম বাড়ে আট থেকে ১০ টাকা। ৭০ টাকা থেকে বেড়ে প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হয় ৭৮ থেকে ৮০ টাকায়। চিনির বাজারেও চলে বিশৃঙ্খলা, যে যেমন ইচ্ছা দাম রাখে। চিনির বাজারে শৃঙ্খলা ফেরাতে অবশেষে গতকাল দাম বেঁধে দেয় সরকার। খোলা চিনির কেজি ৭৪ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনি ৭৫ টাকা কেজি দাম ঠিক করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও মিল মালিকরা।
তবে এই দামে খুচরা বাজারে মিলছে না পণ্যটি। রংপুরের বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা পর্যন্ত দামে। আর প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৮৪ থেকে ৮৬ টাকায়। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে রংপুর নগরীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হয়েছে ৭৮ থেকে ৮০ টাকায়।
যাদের সংসারে সপ্তাহে এক কেজি চিনি ও এক কেজি তেল লাগে তাদের অন্যান্য পণ্য ছাড়াই শুধু তেল আর চিনিতে সপ্তাহের বাজার খরচ বেড়েছে ১৬ থেকে ১৯ টাকা। এ ছাড়া মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম আগে থেকেই বেশি রয়েছে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, ইলিশের সরবরাহ কম থাকায় অন্য মাছের দাম খুচরায় কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। বেড়েছে সোনালি ও ব্রয়লার মুরগি এবং ডিমের দামও। সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লারের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। সরবরাহ কম থাকার অজুহাতে সোনালি মুরগির দামও কেজিতে ৫০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মুরগির ডিমের দাম বেড়েছে ডজনে পাঁচ থেকে ১০ টাকা।
এ ছাড়া চাল, ডাল, সবজির বাড়তি দাম তো রয়েছেই। বাজার এখন চালের দাম বছরের যেকোনো সময়ের চেয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। চালে ভোক্তার খরচ অনেকটাই বেড়েছে। সবজির বাজারও চড়া। বাজারে এখন গড়ে সবজির কেজি ৫০ টাকা। পটোল, ঢেঁড়সসহ কিছু সবজি ৪০ টাকায় পাওয়া গেলেও কিছু সবজি ৬০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তবে আলুর দাম রয়েছে সহনীয়।
রংপুর সিটি বাজারে কথা হয় হোসেন আলী নামের এক ক্রেতার সঙ্গে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বাজারে পণ্যের দাম যে হারে বেড়েছে তাতে হিসাব করলে শুধু মাছ, মুরগি, ডিম, তেল ও চিনি—এই ছয়টি পণ্যেই সপ্তাহের ব্যবধানে আমার খরচ বাড়েছে কমপক্ষে ৮৬ টাকা।’
চিনির কেজি সর্বোচ্চ ৭৫ টাকা : চিনির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনারস অ্যাসোসিয়েশন। প্রতি কেজি খোলা চিনির সর্বোচ্চ খুচরা দর ৭৪ টাকা এবং প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনির সর্বোচ্চ খুচরা দর ৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গতকাল অ্যাসোসিয়েশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। অপরিশোধিত চিনির আন্তর্জাতিক বাজারদর এবং স্থানীয় পরিশোধনকারী মিলগুলোর উৎপাদন ব্যয় বিবেচনায় এনে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে গতকাল এই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
Design & Developed BY- zahidit.com
Leave a Reply