,

রিমান্ডে মুখ খুলছেন আ.লীগ নেতারা, ফাঁস হচ্ছে চাঞ্চল্যকর তথ্য

ফাইল ফটো

এম,এন,বিঃ
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকেই ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদের কেউ সাবেক সরকারের মন্ত্রী ছিলেন, কেউ ছিলেন সংসদ সদস্য। ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দলীয় ও সরকারপ্রধান দেশ ছাড়ার পর সবই হারিয়েছেন তারা। যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের সবার বিরুদ্ধেই হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। সবাইকেই রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার সপ্তাহ-চারেকের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন আওয়ামী লীগের আলোচিত ডজনখানেক নেতা। গ্রেপ্তারের পর তাদের আদালতে তুলে রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। সবাইকেই রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন আদালত। কাউকে কাউকে দফায় দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সেখানে তারা দিচ্ছেন চাঞ্চল্যকর তথ্য।

স্বৈরাচারের সহযোগী হিসেবে নিজেদের দায় এড়াতে না পারলেও তারা বলছেন, সব দলীয় ও সরকারপ্রধানের (শেখ হাসিনা) নির্দেশে করেছেন। তাদের দিয়ে অন্যায্য কাজ করানো হয়েছে বলে অকপটে স্বীকারও করেছেন অনেকেই। গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠভাজন ও সহযোগী হিসেবে পরিচিত সালমান এফ রহমান জিজ্ঞাসাবাদে দিয়েছেন চাঞ্চল্যকর তথ্য। তিনি দাবি করেছেন, নতুন নতুন প্রকল্প বের করার তাগাদা দিতেন শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যরা। নতুন প্রকল্প মানেই বড় অঙ্কের কমিশন। এর সবকিছুই জানতেন শেখ হাসিনা। তবে তিনি কখনো তাতে না করেননি।

সালমান এফ রহমানের বরাত দিয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এস আলমের মাধ্যমে দেশ থেকে পাচার হওয়া দেড় লাখ কোটি টাকার অর্ধেকই শেখ রেহানা এবং সজীব ওয়াজেদ জয়কে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সরাসরি তত্ত্বাবধানে এসব অনিয়ম হয়। তবে এসব বিষয়ে কেউ কথা বলার সাহস পাননি। কেবল অর্থ পাচার নয়, দেশের ইস্টার্ন রিফাইনারি, চিনিকল হাতিয়ে নিলেও এস আলমের বিষয়ে সবাই নীরব ছিলেন।

সালমান এফ রহমান জানান, শেখ পরিবারের অতি লোভের কারণেই দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এতটা শোচনীয় হয়েছে। তাতে সব সময়ই সায় দিতেন সরকারের শীর্ষস্থানীয় কিছু ব্যক্তি। শেখ হাসিনাকে বোঝাতে গিয়ে অনেকে ছিটকে পড়েছেন। কারণ, তিনি সব সময়ই তার নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকতেন বলে দাবি সালমানের।

দফায় দফায় রিমান্ডে যাওয়া সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক দাবি করেন, তিনি এবং সালমান এফ রহমান কোটা আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন। রিমান্ড শুনানির সময় আনিসুল হক বলেন, ‘আমরা দুজনই (আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমান) কোটা আন্দোলনের পক্ষে ছিলাম। আমি নির্দোষ। ঘটনার বিষয় কিছুই জানি না। আদালতের কাছে ন্যায়বিচার চাই।’

সাবেক আইনমন্ত্রী জিজ্ঞাসাবাদে ডিবিকে জানিয়েছেন, জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে দেশের সম্পদ না বানিয়ে আওয়ামী লীগের সম্পদ বানিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটা ছিল শেখ হাসিনার ভুল সিদ্ধান্ত। তিনি নিজেকে এবং তার বাবাকে বেশি ফোকাস করতে গিয়ে জনগণের বিরাগভাজন হয়েছেন।

আনিসুল জানান, সারাদেশে গ্রামে-গঞ্জে, জেলা-উপজেলায় শেখ মুজিবের এত ভাস্কর্য না বানিয়ে যদি একটি বা দুটি আন্তর্জাতিক মানের ভাস্কর্য বানাতেন তবে সেটা দেখতে ভিড় করতেন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। এতে শেখ মুজিবের সম্মান অনেক বাড়ত।

রিমান্ডে থাকা সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু জিজ্ঞাসাবাদে বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের প্রথম ৫ বছর আমি মন্ত্রী ছিলাম। পরের ১০-১১ বছরে আমরা সরকারে ছিলাম না। তবে ১৪ দলে জোটের শরিক ছিলাম। জোটের শরিক হিসাবে আমরা শেখ হাসিনাকে অনেক পরামর্শ দিয়েছি। ছাত্রদের দাবি মেনে নিতে বলেছি। যেসব পুলিশ সদস্য ছাত্রদের ওপর গুলি চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। টাকা পাচারকারীদের ধরতে বলেছিলাম। উনি চীন সফরে যাওয়ার আগেও বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছিলাম। আমাদের কোনো পরামর্শই তিনি কানে নেননি।

ওবায়দুল কাদেরের সমালোচনা করে ইনু বলেন, ছাত্র আন্দোলন দমনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, তাদের দমাতে ছাত্রলীগই যথেষ্ট। এই মন্তব্যটি ছাত্র-জনতার ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল। এ সময় এই আন্দোলনের জন্য ওবায়দুল কাদেরকে দায়ী করেন ইনু।

জিজ্ঞাসাবাদে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননও শেখ হাসিনার কড়া সমালোচনা করেন। বলেন, ‘১৯৭৫ সালে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার কারণে এ দেশের মানুষের প্রতি চরম ক্ষোভ ছিল শেখ হাসিনার। তাই তার আচার-আচরণ এমন ছিল যে, দেশের মানুষ মরুক বা বাঁচুক এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। তিনি চেয়েছিলেন শুধু ক্ষমতা। আজীবন ক্ষমতায় থাকার লোভ তাকে পেয়ে বসেছিল। এই মানসিকতাই তার জন্য কাল হয়েছে।

মেনন বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলন কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমরা অনেক পরামর্শ দিয়েছিলাম। তিনি আমাদের কোনো কথাই শোনেননি।

ডিবি সূত্র জানিয়েছে, শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালে ঘুষ বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ বিষয়ে দীপু মনিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি অনেক অভিযোগের কথাই স্বীকার করেছেন। বিশেষ করে টাকার বিনিময়ে উপাচার্য ও অধ্যক্ষ নিয়োগের কথা স্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

ডিবি হেফাজতে রিমান্ডে থাকা সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু অবৈধ সম্পদ অর্জন বিষয়ে বলেন, আমার কোনো অবৈধ সম্পদ নেই। আমার বাবার ব্যবসা ছিল। আমার যা সম্পদ সবই ওই ব্যবসার মাধ্যমে অর্জিত। তিনি দাবি করেন, আমি যখন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলাম তখন মন্ত্রী ছিলেন অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, যা করার তিনিই করেছেন।

সূত্র জানিয়েছে, রিমান্ডে মুখ খুলেছেন সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকও। তিনি জানিয়েছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, শেখ রেহানা পুত্র রাদওয়ান সিদ্দিক ববি, সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এবং সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবং সিআরআই (সেন্টার ফর রিসার্চ এবং ইনফরমেশন) সিন্ডিকেট কীভাবে দুর্নীতির রামরাজত্ব কায়েম করেছিলেন।

জিজ্ঞাসাবাদে এনটিএমসির প্রাক্তন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান জোরপূর্বক গুম এবং হত্যার ভয়ংকর তথ্য দিয়েছেন বলে জা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *