,

শ্মশান দখল করে বাংলো বাড়ি, ভাঙচুর-আগুন

মোঃরাজিব হোসেন,জেলা প্রতিনিধি মানিকগঞ্জঃ
মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার কাসাদহ গ্রামে শশ্বান ঘাট দখল করে বাংলো বাড়ি নির্মাণ করা হয়। দখল করা হয় কাসাদহ-গোয়ালখালী রাস্তাটি। একইসঙ্গে বাংলো বাড়ির পাশে থাকা একটি কালি মন্দিরও দখল করে নেয়। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হলেও দখলকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পাননি কেউ।

কালি মন্দিরটিতে উত্তর কাসাদহ, দক্ষিণ কাসাদহ, গোয়ালখালী, কোখাদি, রিশাদি ও নবগ্রাম এলাকার লোকজন পূজা র্অচনা করতেন।
৪-৫ বছর আগে স্বপন কুমার দেবনাথ নামে এক ব্যক্তি রাস্তা, শশ্বান ঘাট ও পুজার্থীরা যে বট গাছের নিচে আশ্রয় নিতো তা দখল করে বাংলো বাড়িটি নির্মাণ করেন। যিনি বরিশাল-৪ আসনের সদ্য বিলুপ্ত সংসদ সদস্য পঙ্কজ কুমার দেবনাথের একান্ত সহযোগি। একইসঙ্গে সাউদার্ন গ্রুপের পরিচালক। সাবেক এমপি পঙ্কজ কুমার দেবনাথের ক্ষমতার দাপটে ধরাকে স্বরাজ্ঞান মনে করতেন স্বপন কুমার দেবনাথ। ফলে শশ্বান ঘাট ও রাস্তা দখল করলেও তার বিরুদ্ধে কেউ টু শব্দ করতে সাহস পাইনি। তাই এলাকাবাসী ছিল নীরব।

কাসাদহ গ্রামে শতাধিক বিঘা জমিও কিনেছেন স্বপন কুমার দেবনাথ। তার একান্ত সহযোগি প্রদীপ কুমার দেবনাথ বাংলো বাড়ি ও জমিজমা দেখাশোনা করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে মদ ও সুন্দরী নারী নিয়ে ফুর্তিতে মেতে উঠতেন তারা। তাদের এ আয়োজনে পঙ্কজ কুমার দেবনাথও মাঝে মাঝে শরিক হতেন।

জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন শুরু হলে পঙ্কজ কুমার দেবনাথ সরকারের পক্ষ নিয়ে আন্দোলনের বিরোধীতা করেন। ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতা শিবালয় ঘাট এলাকায় জড়ো হয়ে মিছিল করলে পঙ্কজ কুমার দেবনাথ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে আড়পাড়া মোড়ে অবস্থান নেন।

একই ঘটনা ঘটে ৫ আগস্ট সকালেও। ছাত্র-জনতা শিবালয় ঘাট এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করলে পঙ্কজ কুমার দেবনাথ ফের স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে আড়পাড়া মোড়ে অবস্থান নেন। শিবালয় ঘাট এলাকায় ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি করে পুলিশ। এতে রফিক (২১) নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়।

এরপর নিহত শিক্ষার্থীকে নিয়ে মিছিল করে ছাত্র-জনতা। মিছিলটি শিবালয় থানায় গিয়ে শেষ হয়। খবর আসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।
এ খবরে উত্তেজিত হয়ে বিকেলে ছাত্র-জনতা ও উত্তর কাসাদহ, দক্ষিণ কাসাদহ, গোয়ালখালী, কোখাদি, রিশাদি ও নবগ্রাম এলাকার লোকজন হামলা করে স্বপন কুমার দেবনাথের বাংলো বাড়িতে। বাড়ির দরজা-জানালা ভাঙচুরের পাশাপাশি আগুন ধরিয়ে দেয় বাড়িটিতে। এসময় বাংলো বাড়ির কর্মচারীরা পালিয়ে যায়। বাড়ির কেয়ারটেকার সুমন সাহা আশ্রয় নেয় পশ্চিম পাশের একটি ঘরের চৌকির নিচে।

সুমন বলেন, সেদিন বিকেলে তিনি গেটের কাছে ছিলেন। এমন সময় দেখেন হাজার হাজার লোক বাংলো বাড়ির দিকে আসছে। অন্যান্য কর্মচারীরা যে যার মত পালিয়ে যায়। সুমন আশ্রয় নেয় চৌকির নিচে। সেদিন কারা বাড়িটিতে হামলা করেছে তা দেখেননি সুমন।

কারা বাড়িটিতে হামলা চালিয়েছে, ভাঙচুর করেছে, আগুন দিয়েছে তা না জানলেও ওই ঘটনায় বিএনপির নেতাকর্মীদের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়। মামলার ১ নম্বর আসামী করা হয় জাহাঙ্গীর নামের এক ব্যক্তিকে। এই জাহাঙ্গীর স্বপন কুমার দেবনাথের খুব কাছের ছিলেন। স্বপন কুমার দেবনাথ যেদিন বাংলো বাড়িতে আসতেন জাহাঙ্গীরও সেদিন সঙ্গে থাকতেন। এলাকাবাসী বলছেন, স্বপন কুমারের অপকর্মের অনেক তথ্য জানতেন জাহাঙ্গীর। যে কারণে তাকে ১ নম্বর আসামী করে মামলা করা হয়েছে।

এদিকে, শশ্বান ঘাট দখল করে বাংলো বাড়ি নির্মাণের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। তারা স্বপন কুমার দেবনাথ ও তার সহযোগি প্রদীপ কুমার দেবনাথের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে উত্তর কাসাদহ, দক্ষিণ কাসাদহ, গোয়ালখালী, কোখাদি, রিশাদি ও নবগ্রাম এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের ৮৮ জন গণস্বাক্ষর দেন।
তারা শশ্বান ঘাট ও রাস্তা দখলমুক্ত করার পাশাপাশি স্বপন কুমার দেবনাথ ও প্রদীপ কুমার দেবনাথের শাস্তি দাবি করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *