,

শ্যালকের চড়ের প্রতিশোধ নিতেই শ্যালিকা ও দুই শিশু কন্যাকে গলাকেটে হত্যা করে দুলাভাই

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : নারায়ণগঞ্জে সিদ্ধিরগঞ্জে স্ত্রীর সাথে বিরোধের জের ধরে শ্যালিকা ও তার দুই শিশু কন্যাকে গলাকেটে হত্যা করে দুলাভাই আব্বাস ব্যাপারী (৩৫)। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় সিদ্ধিরগঞ্জের পাওয়ার হাউজের সামনে থেকে তাকে আটক করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ। নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করে আব্বাস ব্যাপারী জানিয়েছে, প্রায়ই তার স্ত্রী তার সাথে রাগ করে শ্যালক হাসান ও শ্যালিকা নাজমিনের বাড়িতে চলে আসত। কয়েকদিন আগে তার শ্যালক হাসান তাকে চড় মেরে আব্বাসের স্ত্রী, সন্তানসহ তার শ্যালিকা নাজমিনের ফ্ল্যাটে চলে আসে। এর জের ধরেই বৃহস্পতিবার সকালে আব্বাস এই তিনটি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটায়।
ঘাতক আব্বাস পটুয়াখালী জেলার পইক্কা গ্রামের আবুল কালামের ছেলে। সে সিদ্ধিরগঞ্জ বাতেনপাড়া এলাকায় ভাড়া থাকতো। পেশায় সে বাবুর্চী।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুরে নিহত নাজমিনের স্বামী সুমন মিয়া সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সিদ্ধিরগঞ্জের ১নং ওয়ার্ডের সিআই খোলা এলাকার ৬তলা ভবনের ৬ তলার বাসা থেকে তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ।
নিহতরা হলো- সুমন মিয়ার স্ত্রী নাজমিন বেগম (২৬), তাঁর দুই মেয়ে নুসরাত (৮) ও খাদিজা (২)। একই সময় ঘটনাস্থল থেকে রক্তাক্ত জখম অবস্থায় নাজমিনের বোন ও আব্বাস ব্যাপারীর মেয়ে সুমাইয়াকে (১৫) উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এর ্আগে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ জানান, পারিবারিক কলহের জের ধরেই তিনটি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টায় ঘটনাটি ঘটেছে। এ হত্যাকান্ডের মূলহোতা নিহত নাজমিনের দুলাভাই আব্বাস। আব্বাসের সাথে তার স্ত্রীর বিরোধ ছিল। ওই বিরোধের কারণেই রাগ করে প্রায়ই স্ত্রী ইয়াসমিন আব্বাসের শ্যালিকার বাসায় চলে আসে। ইয়াসমিন একটি গার্মেন্টে চাকরি করে। বৃহস্পতিবার সকালে সে কারখানায় চলে গেলে শ্যালিকা ও তার দুই মেয়েকে গলাকেটে হত্যা করে। আর আব্বাস তার প্রতিবন্ধী মেয়েকেও হত্যার চেষ্টা চালায় ।
এদিকে আব্বাসের মেয়ে আহত সুমাইয়া হাসপাতালে পুলিশকে জানান, তার বাবা আব্বাস ব্যাপারীই তাকে হত্যার চেষ্টা করেছে এবং তার খালা নাজমিন বেগম ও তার দুই মেয়েকে হত্যা করেছে।
নিহতের নাজমিনের ছোট ভাই হাসান জানান, প্রায়ই মাদক সেবন করে আমার বড় বোনের স্বামী আব্বাস মিয়া বাড়িতে এসে মারধর করতো সকলকে। এ ঘটনায় তার বোন ও ভাগ্নি সুমাইয়া বাড়ি থেকে লুকিয়ে খালার বাসায় বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) চলে আসে। মনে হয় এর পরই আব্বাস বাসায় এসে তিনজনকে হত্যা করে।
নিহতের স্বামী সুমন জানান, নিহত নাজমিনের স্বামী সুমন সানাড়পাড় এলাকায় জোনাকি পাম্প স্টেশনের চাকরী করে। ডিউটি শেষে সকালে সুমন বাসায় ফিরে দেখে স্ত্রী ও দুই কন্যার লাশ পড়ে আছে। পরে তার ডাক চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এসে পুলিশকে খবর দেয়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ জানান, এ হত্যাকান্ডের মূলহোতা আব্বাস ব্যাপারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করে জানিয়েছে, ঘটনার কয়েকদিন আগে তার শ্যালক হাসান তাকে থাপ্পড় দেয়। আর এ কারণেই সে প্রতিশোধ নিতে এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে। আরো বিস্তারিত জানার জন্য তাকে রিমান্ডে নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *