,

সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি -প্লাবিত গ্রামের পর গ্রাম- ভয়ংকর রুপ নিচ্ছে সুরমা

মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী,বিশেষ প্রতিনিধিঃ সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হচ্ছে। অতিবৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে বাড়ছে সব নদীর পানি।

মঙ্গলবার (১৮ জুন) সকাল থেকে সুরমা, কুশিয়ারা, সারিগোয়াইন ও সারী নদীর পানি ৬ পয়েন্টে বিপদসীমার ওপরে বইছে। নদীর পানি বাড়ায় হাওর উপচে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। ফলে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ১৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

একই সময়ে উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৩৯৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ফলে উজানের পাহাড়ি ঢলে সিলেট ও কানাইঘাটে সুরমা নদীর, জকিগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর এবং সারীঘাটে সারিনদীর ও গোয়াইনঘাটে সারীগোয়াইন নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে।

নদনদী ও হাওরে পানির উচ্চতা বাড়ায় নতুন করে গ্রামীণ সড়ক ও উপজেলা সদরের সড়কগুলো প্লাবিত হচ্ছে। গোয়াইনঘাট উপজেলার সাথে যোগাযোগ রক্ষাকারী ৪টি সড়ক প্লাবিত হয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে।

এছাড়া বসতবাড়িতে পানি ঢুকায় আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে শুরু করেছেন পানিবন্দি লোকজন। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে ১৯ হাজার ৭৫০টি পরিবার পানিবন্দি জীবনযাপন করছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৯৮ হাজার ৪০০ লোক এ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টার অতিবৃষ্টি ও সুরমা নদীর পানি বাড়তে থাকায় সিলেট নগরীর নদী তীরবর্তী ওয়ার্ডগুলোর প্রধান সড়ক ও বাড়িঘরে এখনো হাঁটুর ওপরে পানি। অনেক নিচু এলাকার মানুষজন বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। নগরীর সব নিচু এলাকা পানিতে নিমজ্জিত। বিশেষ করে শাহজালাল উপশহর প্রায় পুরোটাই পানির নিচে। অনেকের বাসার নিচতলায় গলা পর্যন্ত পানি।

এছাড়া বাগবাড়ি, যতরপুর, মেন্দিবাগ, শামীমাবাদ, শিবগঞ্জ, রায়নগর, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, কামালগড়, মাছিমপুর, তালতলা, জামতলা, কাজিরবাজার, মদিনা মার্কেট, আখালিয়া ও মেজরটিলাসহ মহানগরের অধিকাংশ এলাকা বন্যা কবলিত। এছাড়া মহানগরের মধ্যে অনেক প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পানি রয়েছে। এয়ারপোর্ট সড়ক, সিলেট-তামাবিল সড়ক, দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর সড়কসহ বিভিন্ন সড়কের বেশ কয়েকটি স্থান পানির নিচে।

ঈদের দিন সোমবার (১৭ জুন) দুপুরের পর বৃষ্টি থামলে নামতে শুরু করে নগরীর পানি। মঙ্গলবার (১৮ জুন) ভোররাত থেকে ফের সিলেটে শুরু হয় বৃষ্টিপাত। ফলে আজ (মঙ্গলবার) সকাল থেকে আবারও বাড়তে শুরু করে সিলেট নগরীর পানি। ডুবেছে নতুন নতুন সড়ক ও বাসাবাড়ি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) উত্তর পূর্বাঞ্চল সিলেটের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী খুশীমোহন সরকার জানান, দুপুরে সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপদসীমা থেকে ১৩৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

নদীটির সিলেট পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার উপরে রয়েছে। কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৭৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সারী নদীর সারিঘাট পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার এবং নদীর সারিগোয়াইন পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জসহ কয়েকটি উপজেলার গ্রামীণ অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অনেক কৃষিজমির ফসল তলিয়ে গেছে, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। কোম্পানীগঞ্জ থানা কমপ্লেক্সে পানি ঢুকে পড়ায় থানার কার্যক্রম নিচতলা থেকে দোতলায় স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি গোলাম দস্তগীর। তিনি বলেন, উপজেলা জুড়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। থানা, উপজেলা কমপ্লেক্সে যেমন পানি ওঠেছে, তেমনি উপজেলার বৃহৎ একটা অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসাইন জানিয়েছেন, সিলেটে ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার ৬টা পর্যন্ত ১৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। মঙ্গলবার সকল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৪৪ মিলিমিটার, ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ১২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আগামী দুইদিন সিলেটে টানা বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি।

এদিকে ভারতে আইএমডি ওয়েবসাইটে দেখা যায়, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ওয়েস্ট জৈন্তা হিলস ও ইস্ট খাসি হিলস জেলায় বুধবার ৩২৩মিলিমিটার ও বৃহস্পতিবার ৭২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম সময়ের আলোকে জানিয়েছেন, উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ২০৬ গ্রাম বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এছাড়াও প্রায় ১৫০০ হেক্টর কৃষি জমি নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।

১৯ হাজার ৭৫০টি পানিবন্দি পরিবারে ক্ষতিগ্রস্ত লোক সংখ্যা ৯৮ হাজার ৪০০ জন। ইতোমধ্যে ৫টি আশ্রয় কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এতে আশ্রয় নিয়েছেন ২৯৬ জন। পাশাপাশি তাদের ৮৬টি গবাদিপশুও আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হয়েছে।

সিলেট জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সিলেটের সব উপজেলায় মোট ৫৩৮টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র এর মধ্যে প্রস্তুত রয়েছে। ৫টি উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ৩৪৩ জন আশ্রয় নিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *