,

সড়কে হারিয়ে গেল তিন পরিবারের স্বপ্ন

ডেস্ক রিপোর্টঃ সড়ক দুর্ঘটনায় আবারও ঝরল তাজা প্রাণ। সেই সঙ্গে শেষ হলো তিন পরিবারের স্বপ্ন। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে দিনাজপুরের সদর উপজেলার নশিপুর এলাকার সাত মাইল বাঁকে ঘটনা এই দুর্ঘটনায় একসঙ্গে তিন তরুণ প্রাণ হারিয়েছেন। এতে গুরুতর আহত হয়েছেন আরও দুই জন। নিহতের পরিবারগুলোতে চলছে শোকের মাতম। অন্যদিকে আহতদের সুস্থ কামনায় স্রষ্টার কাছে প্রার্থনারত রয়েছেন তাদের বন্ধু আর পরিবার।

নিহতরা হলেন- দিনাজপুর শহরের সুইহারীর বাসিন্দা ও ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কপিল বসাকের ছেলে বর্ণ বসাক (২২)। ঢাকা সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই ডিপার্মেন্টের ছাত্র মুন্সিপাড়া এলাকার মৃত নুরুল আমিন সিদ্দিকীর ছেলে ইমন (২৩) এবং সৈয়দপুর বাউস্টের ছাত্র ও কসবা এলাকার শফিকুল ইসলামের ছেলে শাহরিয়ার শাওন (২৪)।

আহতরা হলেন- মুন্সিপাড়া এলাকার মাহাবুবের ছেলে তামজিদ (১৯) এবং বাহাদুর বাজার এলাকার ডিস লাইন ব্যবসায়ী ও পিএমএন ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্কের মালিক মাহামুদুন নবি পলাশের ছেলে রওনাক নবী প্রিয় (২৩)।

সরিজমিনে গিয়ে জানা যায়, নিহত বর্ন বসাকরা এক ভাই , এক বোন। মেয়ের বিয়ে হয়েছে। বর্ন নিয়েই তার বাবা-মায়ের যত স্বপ্ন। সেই ছেলেকে হারিয়ে বর্ণর বাবা কপিল বসাকও মা পাগলপ্রায়। কথা বলার মত ভাষাও তারা হারিয়ে ফেলেছেন।

কপিলেশ্বর বসাকের বেয়াই (মেয়ের শ্বশুর) মুকুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, বর্নরা একভাই ও এক বোন। খুব ভালো ছেলে ছিল সে। তাকে ঘিরে বাবার স্বপ্ন ছিল অনেক। মানুষের মত মানুষ করবে, বড় হয়ে বাবার মুখ উজ্জ্বল কএব এটাই ভাবতেন তার বাবা।

এলাকার চৈতি মহন্ত বলেন, মেয়ে ও ছেলেকে খুব ভালোবাসেন কপিলেশ্বর বসাক। ছেলের সব আবদার পূরন করার চেষ্টা করেছেন তিনি।

নিহতদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমন আগে অভিনয় করতো। ইমনকে হাতে-কলমে শিক্ষা দিয়েছেন নাট্যকর্মী আমির হোসেন। তিনি বলেন, ছোট থেকেই ইমন ছিল অনেক প্রতিভাবান। ছোট বেলায় নাটক, অভিনয় করতো, অনেক আদর করে শিখাতাম। অল্পতেই নিজেকে সেইভাবে তৈরি করে নিতে পারতো ইমন। দীর্ঘদিন কোন যোগাযোগ নেই। গতকাল রাত প্রায় ১২ টা থানা মোড় ছিলাম। হঠাৎ করে দেখলাম ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের গাড়ি ফুল স্পিডে যাচ্ছে। সবাই বলাবলি করছিল কোন দুর্ঘটনা ঘটেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনি দুর্ঘটনায় তিন জন নিহত হয়েছে, যার একজন ইমন।

দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েল শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমরা একটি সংগঠনে জড়িত ছিলাম, যেই সংগঠনে ইমন জড়িত ছিল। খুব ভালো ছেলে। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে তার সাথে আমার যোগাযোগ ছিল না।

পুলিশ জানায়, রাতে দশমাইলের দিক থেকে একটি প্রাইভেট কার দ্রুত গতিতে দিনাজপুর শহরের দিকে ফিরছিল। পথিমধ্যে সাতমাইল বাঁক এলাকায় গাড়ীটি পৌছলে কারটির চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাল্টি খেয়ে রাস্তার ধারে খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে বর্ণ বসাকের মৃত্যু হয়। স্থানীয়রা গুরুতর আহত ৪ জনকে উদ্ধার করে রাত ১২টায় দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ইমনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় শাহরিয়ার শাওনকে জিয়া হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল এন্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউটে ভর্তি করা হয়। পরে রাত আড়াইটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাওনের মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত তামজিদ ও প্রিয়কে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। দুর্ঘটনা কবলিত প্রাইভেট কারটি রাতেই দশমাইল হাইওয়ে পুলিশ নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে। এই ঘটনায় থানায় একটি ইউডি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পরিবারের আপত্তি না থাকায় মরদেহ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করে পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *