আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের পুরো কাজটি করা হয় শেখ হাসিনার পরিকল্পনায় এবং আদালতকে ব্যবহার করে। পরে হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে স্বীকারও করেন যে, তিনি অনেক আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, ক্ষমতায় এলে খালেদা জিয়াকে তার বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করবেন।
ডেস্ক রিপোর্টঃ
মঙ্গলবার আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দ্বিতীয় দিনের মতো জবানবন্দী দিয়েছেন আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষের ৪৬ তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দী শেষে তাকে জেরা করেন শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।। এ সময় ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে আজ সকালে আদালত শুরু হলে মাহমুদুর রহমান তার দ্বিতীয় দিনের অসম্পূর্ণ জবানবন্দী শেষ করেন। ট্রাইব্যুনালের বাকি সদস্যরা হলেন– বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১ টায় ট্রাইব্যুনালের কাযক্রম শুরু হলে রাজধানীর রামপুরায় ভবনের কার্নিশে ঝুলে থাকা শিক্ষার্থী আমির হোসেনকে গুলি এবং একই এলাকায় অন্য দুজনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গঠন আগামী বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করে ট্রাইব্যুনাল।
এর পরই আমার দেশ সম্পাদক তার দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্য শুরু করেন। তিনি বলেন, জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ আছে যে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গণহত্যা চালানোর জন্যে সরাসরি নির্দেশ দিয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রতি রাতে তার বাড়িতে কোর কমিটির সভা করতেন। সেখানে পুলিশ, র্যাব এবং অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নিতেন। সেই সভায় তারা বিক্ষোভকারী এবং আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছাত্রদের উপরে সর্বাত্মক শক্তি প্রয়োগের উপায় নিয়ে আলোচনা করতেন। সেই সব সভায় তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাতে জানিয়েছেন যেন আন্দোলনকারীদের উপর মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রকাশ্যে গণমাধ্যমে ঘোষণা করেছিলেন যে, আন্দোলনকারীদের দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের হত্যা করে লাশ গুম করবার নির্দেশ দিয়েছেন। জাতিসংঘের রিপোর্টে প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সিনিয়র কর্মকর্তাদের সরাসরি নির্দেশে গণহত্যা চালানো হয়েছে।
জবানবন্দী শেষে তাকে জেরা করেন শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। জেরার প্রশ্নোত্তরে ট্রাইব্যুনালে মাহমুদুর রহমান বলেন, জাতিসংঘের প্রকাশিত রিপোর্টেও বলা হয়েছে যে, পুলিশের ডিআইজিসহ উচ্চ পদস্ত পদগুলোয় শেখ হাসিনা নিজের পছন্দের লোকদের পদোন্নতি দিতেন।
অন্য এক জেরার প্রশ্নের জবাবে তিনি ট্রাইব্যুনালে জানান, বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী সম্পর্কে শেখ হাসিনার অবস্থান যে বিদ্বেষমূলক তার প্রমাণ মেলে সাবেক ভারতীয় হাইকমিশনার শ্রী কৃষ্ণান শ্রীনিবাসন এর বই ‘দি জামদানি রেভুলেশন’ -এ । বইটি ২০০৯ সালে প্রকাশিত হওয়ার পরও শেখ হাসিনা ১৫ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন, কিন্তু বইটির কোনো তথ্য নিয়ে শেখ হাসিনা কখনো প্রতিবাদ করেননি।
জবানবন্দী শেষে মাহমুদুর রহমান ব্রিফিংকালে সাংবাদিকদের বলেন, শেখ হাসিনা হিটলারকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন। হিটলার কখনো বলেননি হত্যা কর এবং লাশ গুম করে ফেল। হিটলার বিভিন্ন ম্যাকানিজমে হলোকাস্ট করেছেন, কিন্তু হাসিনার মতো হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলার কথা বলেননি।
আমি চাই অপরাধীরা যেন সাজা পায়, শহীদ পরিবার, আহত জুলাই যোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের শোক ন্যায়বিচারের মাধ্যমে কিছুটা হলেও যেনো লাঘব হয়। এছাড়া ফ্যাসিস্ট শাসনের বিষয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা গেলে ভবিষ্যতের সরকারগুলো সতর্ক হবে বলে আমি প্রত্যাশা করি।
এদিকে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুমুদুর রহমানের দ্বিতীয় দিনের জবানবন্দী ও জেরা শেষে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, একজন সাংবাদিক, লেখক, গবেষক ও চিন্তাবিদ হিসেবে মাহমুদুর রহমান আওয়ামী লীগের অতীত ও বর্তমান চিত্র তুলে ধরেছেন। এ প্রসংগে তিনি জুলাই আগস্টের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছেন। কীভাবে আওয়ামী লীগ ও দলটির সভানেত্রী ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠেন তার সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরেছেন। জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন মানবাধিকার রিপোর্ট পর্যালোচনা করে তিনি দেখিয়েছেন জুলাই আগস্টে ঘটে যাওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধ ছিল ওয়াইড স্পেড ও সিস্টেমেটিক। শেখ হাসিনার কমান্ডে এটা হয়েছিল এবং একটি কমান্ড স্ট্রাকচার ফলো করে পরিকল্পিতভাবে এটা করা হয়েছিল। এসব কিছুই ছিলো সুসংগঠিত, যা তিনি তার জবানবন্দীতে তুলে এনেছেন। আমরা মনে করি তার এই সাক্ষ্য শেখ হাসিনাসহ অপরাধীদের নৃশংসা প্রমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে থাকবে এবং আদালত এগুলো পযালোচনা করে তার অভিমত জানাবেন।
গতকালের কার্যক্রমে ট্রাইব্যুনালে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম, বি এম সুলতান মাহমুদ প্রমুখ।
Design & Developed BY- zahidit.com
Leave a Reply