মোঃ ইসমাইলুল করিম নিজস্ব প্রতিবেদক:
পার্বত্য জেলার বান্দরবানের পাহাড়ে ফলদ বাগানের পাশাপাশি কফি চাষ করেছেন বান্দরবান চিম্বুক এলাকার বাসিন্দা ঙুইইন ম্রো।ভালো ফলন ও বাজারদর ভাল পাওয়ায় কফি চাষেই ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন তিনি। একসময় আমাদের দেশে কফি পানের তেমন প্রচলন না থাকলেও বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।কফির মেটে আর পোড়া সৌরভ মানবদেহের নাসারন্ধ্রকে সেঁধিয়ে স্বাদন্দ্রিয়কে তাতিয়ে শরীর-মনে চাঙ্গা ভাব অনুভুত হয়ে দূরহয় ক্লান্তি।ফলে যান্ত্রিক জীবনে ক্লান্তি দূরকরতে অধিকাংশ কর্মজীবীরা চুমুক তোলেন ধোঁয়া উঠা কফির কাপে। বিশ্বে ঠিক কত সালে এই কফি উদ্ভাবিত হয়েছিল তার তথ্য পাওয়া না গেলেও ইথিওপিয়া ও পরে ইয়েমেনে উৎপত্তি হয়েছিল বলে ধারাণা করা হয়।১৫ শতকে ইয়েমেনের সুফি-মঠে প্রার্থনার সময় ঘনত্বের জন্য ব্যবহার করা হলেও কফি ১৬ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে বাণিজ্যিক ভূমধ্যসাগরীয় বানিজ্য পথের মাধ্যমে ইতালি, ১৭ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ভারতে পৌঁছে। কফিতে ক্যাফেইন থাকায় মানব দেহের ক্লান্তি দূর করতে সহায়ক বলে ধারণা করেন পুষ্টি বিদেরা। কফি একসময় শুধু শহরেই জনপ্রিয় ছিল সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে বর্তমানে গ্রাম অঞ্চলেও সমান জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কফি, তাই চাহিদাও বেশী।বিশ্বে নানা প্রজাতির কফি পাওয়া গেলেও বান্দরবানে অ্যারাবিকা, রোবাস্তার পাশাপাশি চাষ হচ্ছে চন্দ্রগীরী। অ্যারাবিকা ও রোবাস্তার চেয়ে উচ্চ ফলনশীল হওয়ায় চন্দ্রগীরী কফি চাষে ঝুকছেন বান্দরবানের অনেক চাষি। জেলা শহর থেকে ২৬কিলোমিটার দুরে সমুদ্রপৃষ্ট থেকে আড়াই হাজার ফুট উচ্চতায় চিম্বুক পাহাড়ে সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চিম্বুক পাহাড়ের রোয়াংছড়ি উপজেলার তারাছা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড বাবু পাড়া এলাকার পাহাড়ে ১০ একর পাহাড়ি জমি জুড়ে আম,জাম্বুরা, ড্রাগন,লিচুর পাশাপাশি আবাদ করেছেন কফি।কফি গাছ গুলোতে ঝুলছে লাল সবুজের সারিসারি কাঁচা পাকা কফি চেরি।যা অজান্তেই চোখ জুড়িয়ে প্রশান্তির দোলাদেয় অবচেতন মনে। কফিচাষী ঙুইইন ম্রো জানান, ২০১৫ সালে তার এক আত্নীয়ের পরামর্শে ১ হাজার চন্দ্রগীরী কফি গাছের চারা রোপন করেন তিনি। বর্তমানে তার প্রায় ৪হাজার চন্দ্রগীরী কফি গাছ রয়েছে। যার মধ্যে ১ হাজার গাছ থেকে বছরে প্রায় দেড় টন কফি চেরি পাওয়া যাচ্ছে। চেরি হিসেবে যার বাজার মূল্য প্রায় ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। এই ১০ একর জমিতে চাষ করা ৪ হাজার গাছের সব গুলোতে একই সাথে কফির ফলন পাওয়া গেলে বছরে অন্তত ১০ টন কফি চেরির উৎপাদন হবে। যার বাজার মূল্য ১০ লাখ ২০ হাজার হবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, বর্ষা মৌসুমে চারা লাগানো হয়, লাগানোর পরবর্তী তিন বছর পর ফলন পাওয়া যায় ,বছরে দুইবার ফলন দেয়, তবে অক্টোবর -নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে এই ফলন বেশী পাওয়া যায় , তার আবাদ করা চন্দ্রগীরী কফি গাছ লাগানোর ৩ বছর থেকে ফলন দেওয়া শুরু করেছে তিনি আশা প্রকাশ করেন এই কফিগাছ পরিচর্চা করলে ৮০ বছর পর্যন্ত ভালো ফলন দেবে ।এই জাতের গাছে রোগবালাই কম এবং তেমন পরিচর্যা করতেও হয়না।ফলে উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় লাভও বেশী হয়। তার বাগানের ৮শত আম,৪ শত ড্রাগন, ১শ জাম্বুরা গাছ থেকে বছরে যেখানে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা পান সেখানে অন্যান্য গাছে মাঝামাঝিতে লাগানো কফি গাছ গুলোর একাংশ থেকে প্রাপ্ত চেরি থেকেই ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পাওয়া যায়।সব মিলে এই কফি থেকেই ভবিষ্যতে তার ভাগ্য বদলাবে বলে প্রত্যাশা করছেন তিনি। কফি চাষ বিশেষজ্ঞ তৈদু রাম ত্রিপুরা জানান তিনি ১৫বছর ধরে কফি নিয়ে কাজ করছেন। তিনি বিভিন্ন দেশে কফি চাষ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নিয়েচেন বর্তমানে তার সেই অভিজ্ঞতা চিম্বুক-রোয়াংছড়ি-রুমা এলাকার কফি চাষীদের সাথে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন।সারা বিশ্বের পাশাপাশি আমাদের দেশেও বেড়েছে কফির চাহিদা।উৎপাদিত কফি বিক্রিতে সিন্ডিকেট না থাকায় কৃষকেরা কফির ন্যায্য মূল্যে পেয়ে থাকেন। দেশে কফির চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ার কারনে ইথিওপিয়া-ব্রাজিলসহ বিভিন্ন দেশ থেকেও কফি আমদানি করা হয়। কফি ক্রয়-বিক্রয়কারী প্রতিষ্টান নর্দান আ্যন্ড কফি রোস্ট কোম্পানির সাথে স্থানীয় কফি চাষীদের সরাসরি যোগাযোগ থাকায় বান্দরবানের উৎপাদিত পাকা কফি ফল খোসাসহ প্রতি কেজি ১৭০টাকা করে বিক্রয় করতে পারছেন। জেলার চিম্বুক এলাকা, রোয়াংছড়ি, রুমা ও লামা এলাকায় চন্দ্রাগীরি কফির চাষ হচ্ছে বলে জানান তিনি। বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ এম এম শাহ নেওয়াজ জানান, ২০২০-২১ সাল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নন বোর্ড ও তাদের সহায়তায় জেলা জুড়ে ২শত ৫০ একর জমি জুড়ে অ্যারাবিকা ও রোবাস্তা জাতের কফির আবাদ শুরু হয়। সেই থেকে ক্রমান্বয়ে সাড়ে ৭ হাজার চাষীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় এবং বর্তমানে তাদের পরামর্শে ১৮শ ৫০ একর জমিতে এই দুই জাতের কফির আবাদ হচ্ছে। যা থেকে একর প্রতি ৭০০ কেজি শুকনো কফির বিন পাওয়া যাচ্ছে। ছবিক্যাপশনঃ চিম্বুক এলাকায় নিজের কফি বাগানে কফিচাষী ঙুইইন ম্রো।
Design & Developed BY- zahidit.com
Leave a Reply