,

শেখ হাসিনার বিচার না হলে, আমার ছেলেকে ফেরত দেন : গণঅভ্যুত্থানে নিহতের মা

নিজস্ব প্রতিনিধিঃজুলাই-আগস্টে হাসিনা সরকারবিরোধী আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে তরুণের মৃত্যু ঘটে রাজধানীতে। নিহত যুবকের মা সংবাদমাধ্যমে দেওয়া এক আবেগঘন বক্তব্যে বলেন, “আমার ছেলে ৫ আগস্ট বিকেল আনুমানিক ৫টা ৩০ মিনিটে বাসা থেকে বের হয়। আমি তাকে বলেছিলাম বড় ভাইকে খাওয়াতে। সন্ধ্যা ৭টা ৩৬ মিনিটে আমার সঙ্গে তার শেষবার ফোনে কথা হয়—মাত্র ১৯ সেকেন্ড। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, বাসায় আসবে কি না। সে বলেছিল, ‘আম্মু, আমি এয়ারপোর্টের মাথায়, আধা ঘণ্টার মধ্যে আসতেছি।’ এরপর হঠাৎই মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ফোন আসে—জানা যায়, আমার ছেলেকে গুলি করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “আমি গিয়ে দেখি ওর কাঁধে একটি এবং বুকের পেছনে আরেকটি গুলি লেগেছে। গলায় লাগা একটি গুলিতে ওর সব রগ ছিঁড়ে যায়। ডাক্তাররা নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি। কে বা কারা ওকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে আমি জানি না। কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছে তিন-চার মিনিট সে খুব কষ্ট সহ্য করেও আমার নাম এবং নাম্বার বলে। শুধু বলছিল—আম্মুকে ফোন দেন, আমি ঘরে যাব।”

এই ঘটনার সময়কার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমার ছেলে কোনো সন্ত্রাসী ছিল না। সে মারা গেছে আন্দোলনের সময়, গণঅভ্যুত্থানের দিনগুলিতে। আমি চাই যারা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে তারা যেন এই দেশে আর ফিরে আসতে না পারে। শেখ হাসিনার বিচার চাই। যদি বিচার না হয়, তাহলে আমার সন্তানকে ফেরত দিন। নইলে আল্লাহ আমাকে তুলে নিন, কারণ আমার আর বাঁচার কোনো অবলম্বন নেই।”

এই মায়ের আরেক সন্তান বর্তমানে ক্যান্সারে আক্রান্ত। তিনি বলেন, “ছোট ছেলেকে ৯ আগস্ট পিজি হাসপাতালে ভর্তি করি। পরে ধরা পড়ে থার্ড স্টেজ ক্যান্সার। এখন পর্যন্ত তার ১২টি কেমোথেরাপি এবং ৩৩টি রেডিওথেরাপি সম্পন্ন হয়েছে। আগামীকাল তার সার্জারি হওয়ার কথা। গত ১৮ মার্চ, রমজানের ১৭ তারিখে, তাদের বাবাও মারা গেছেন। এত বড় শোকের পরেও আমরা চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি।”

বিএনপি পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, “বিএনপি পরিবার আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। তারা আমাকে মানসিক ও আর্থিকভাবে যেভাবে সহযোগিতা করেছে, সেটা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। আমি তারেক রহমান ও তার পরিবারকে অন্তর থেকে ধন্যবাদ জানাই। তারা আমার খোঁজ নিচ্ছেন, দেখা করছেন—এই ঋণ আমি কখনো শোধ করতে পারবো না।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *