মো:আল আমিন গাজী,শ্যামনগর মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি:জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় মানুষের কণ্ঠকে শক্তিশালী করতে শ্যামনগর উপজেলার মাইক্রোস্ট্যান্ডে গ্লোবাল অ্যাকশন ডে-২০২৫ পালন করেছে উন্নয়ন সংগঠন লিডার্স। শনিবার সকাল ১০ টায় আয়োজিত এ কর্মসূচিতে উপকূলের সংকট, মানবিক দুর্দশা ও প্রয়োজনীয় করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়। কপ৩০ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বিশ্ব জলবায়ু নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এ আয়োজন করা হয়।
কর্মসূচিতে সুশীল সমাজ, নারী, যুব সম্প্রদায়, কৃষক, জেলে, সাংবাদিক, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন ও আলোচনার মধ্য দিয়ে উপকূলের ভয়াবহ জলবায়ু সংকট তুলে ধরা হয়।
উপকূলের বাস্তবতা তুলে ধরে উপজেলা জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব নজরুল ইসলাম বলেন- “জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত আজ উপকূলের মানুষের জীবন–জীবিকা, কৃষি, পানিসংস্থান, স্বাস্থ্য- সবকিছুতে প্রভাব ফেলছে। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ছে, নদীভাঙনে মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে, নিরাপদ পানির অভাব চরমে। কপ৩০–এ বিশ্ব নেতাদের প্রতি আমাদের প্রত্যাশা—উপকূলীয় মানুষের টিকে থাকার লড়াইকে গুরুত্ব দিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
ফোরামের সম্পাদক জনাব রণজিৎ কুমার বর্মন বলেন- “লবণাক্ততার কারণে ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে, কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, মিষ্টি পানির উৎস নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। অনেক পরিবার এখনো পুনর্বাসনের প্রতীক্ষায়। জলবায়ু অভিযোজন কর্মসূচিতে বিনিয়োগ না বাড়ালে উপকূলের মানুষ ভবিষ্যতে আরও বড় সংকটে পড়বে।”
তিনি আরও বলেন,“আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিলে উপকূলের অধিকার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশকে আরও শক্তিশালী কণ্ঠে কথা বলতে হবে।”
ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের জলবায়ু-প্রভাবিত নারী হিরন্ময়ী রানী নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, “ঘূর্ণিঝড় আম্পানে আমাদের ঘর ভেসে যায়। এরপর লবণ পানির কারণে জমিতে আর ফসল হয় না। পানযোগ্য পানি পেতে কয়েক কিলোমিটার হাঁটতে হয়। আমাদের কষ্টগুলো যেন বিশ্বমঞ্চে পৌঁছায়- এই আশা নিয়েই আজ এখানে এসেছি।”
যুব প্রতিনিধি মোছা. সীমা পারভীন বলেন-
“জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে অনিশ্চয়তায় আছে তরুণ প্রজন্ম। চাকরি, শিক্ষা, নিরাপদ পানি- সবকিছুই ঝুঁকির মধ্যে। জলবায়ু ন্যায়বিচারের জোরালো দাবি তুলতে উপকূলের তরুণরা আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে প্রস্তুত।”
আয়োজক প্রতিষ্ঠান লিডার্সের পক্ষ থেকে জানানো হয়-
উপকূলীয় মানুষের জীবন–জীবিকা, পানিসংস্থান, কৃষি, স্বাস্থ্য এবং দুর্যোগ-সহনশীল অবকাঠামো নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে অভিযোজন এবং জলবায়ু ক্ষতিপূরণ তহবিল দ্রুত কার্যকর করা জরুরি।
লিডার্স আরও জানায়, উপকূলের নারী, শিশু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকায় টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিকল্পনা প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানের সমাপনীতে বক্তারা বলেন- গ্লোবাল অ্যাকশন ডে-২০২৫ এর মতো উদ্যোগ উপকূলবাসীর কণ্ঠকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও জোরালোভাবে তুলে ধরতে সাহায্য করবে। বিশ্ব জলবায়ু নেতারা যদি যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, তাহলে উপকূলীয় মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।”
Design & Developed BY- zahidit.com
Leave a Reply