,

কঠোর অবস্থানে ইসি

আর মাত্র তিন দিন পর রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটিতে ভোট। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই কমিশনের অধীনে বর্তমান সরকারের মেয়াদের বড় পরিসরের নির্বাচন এটি। দলীয় প্রতীকের অধীনে সিটিগুলোর প্রথম ভোটও। এখানে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ শেষ করতে এবার অনেকটা কঠোর নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ব্যালটে সিলমারা বন্ধে নেওয়া হচ্ছে কৌশলী পদক্ষেপ। সুষ্ঠু নির্বাচনের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবেন দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকগণ।

এ দিকে, তিন সিটির নির্বাচনকে ঘিরে নেওয়া হচ্ছে তিন স্তরের নিরাপত্তা। পুলিশ আনসার সদস্যদের মতো মাঠে থাকবে র‌্যাব, বিজিবি এবং ম্যাজিস্ট্রেট। তবে, শান্তিপূর্ণ পরিবেশের স্বার্থে নিরাপত্তা রক্ষীর কলেবর বাড়াতে পারবেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার। তবে, নির্বাচনে মোতায়েনে থাকছে না সেনাবাহিনীর সদস্য।

আর এমপি-মন্ত্রীদের (ভিআইপি) আচরণবিধি মেনে নির্বাচনী এলাকায় চলাচল না করতে জাতীয় সংসদের স্পিকারকে চিঠি দিয়েছে কমিশন। সংসদের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দল বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।

এ ছাড়া বাড়তি শঙ্কা থাকা কিছু কেন্দ্রে রাখা হয়েছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)। রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট এ তিন সিটিতে থাকছে এ ব্যবস্থা। তবে, নির্বাচনের কারসাজি বন্ধে রাখা হয়নি সিসি ক্যামেরা। তা ছাড়া আগামীকাল শনিবার মধ্যরাতে প্রার্থীদের এতদিন বিরামহীন প্রচারণা বন্ধ হবে। কারণ আগামী রোববার দিবাগত রাত পোহালেই ভোট। ভোটের আগে দুই দিন, ভোটের পরের দিন এবং ভোটের দিনসহ মোট চার দিনের জন্য মাঠে থাকবে বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা। এ কয়েকদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দখলে চলে যাবে ওই তিন নগর। ভোটারসহ সাধারণ মানুষকে এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জেরার মুখে পড়তে হতে পারে। গতি বিধি নজরদারি করবেন ওই সব নিরাপত্তারক্ষীরা।

নির্বাচনের পরিকল্পনা ছক বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে. (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, সাধারণ যেকোনো নির্বাচনে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অন্য যেকোনো নির্বাচনের মতো এখানেও রাখা হয়েছে কমিশনের নিজস্ব পর্যবেক্ষক।

ভোটের রাতে ব্যালটে সিলমারা সংক্রান্ত যে ধরনের অভিযোগ পেলে রাতেই এসব পর্যবেক্ষকদের কেন্দ্রে কেন্দ্রে গিয়ে টহল ও নজরদারি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ভোট শুরুর আগে সব ব্যালট অক্ষত রয়েছে কি না তাও নিশ্চিত হতে ভোট কর্মকর্তাদের কমিশনকে তথ্য জানাতে বলা হয়েছে। এজেন্টদের উপস্থিতি এবং কোথায় এজেন্ট আছে কোথায় নেই তাও জানাতে বলা হয়েছে।

শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, কেন্দ্রের দায়িত্বরত প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলা হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ভোটের ৪০০ গজের মধ্যে কোনো ধরনের জটলা না সৃষ্টি হয় সে বিষয়ে নজর রাখতে নির্দেশ দিয়েছি। ভোটের দিন প্রত্যেক সিটিতে বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে একটি কন্ট্রোল রুম থাকবে, সেখানে স্থানীয় সব বিভাগের প্রধানরা উপস্থিত থেকে পুরো সিটির নির্বাচনের পরিস্থিতি নজরদারি করবেন। তিনি বলেন, এমনকি ভোট গণনা থেকে ফলাফল প্রকাশ না করা পর্যন্ত যাতে সবাই সতর্ক অবস্থানে থাকেন, সে জন্য বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা জানান, আগের রাতে ব্যালটে সিলমারা বন্ধ, ইভিএম এবং নির্বাচন কর্মকর্তাদের সুচারু দায়িত্ব পালন করছে কি না তাও গোপনে নজরদারি করা হবে। কারো বিরুন্ধে অভিযোগ পেলে ১৯৯১ সালে কর্মকর্তা বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে ইসি।

রাজশাহীর রিটার্নিং কর্মকর্তা সৈয়দ আমিরুল ইসলাম বলেন, তার সিটিতে ৩০ ওয়ার্ডের ১৩৮ ভোটকেন্দ্রে কক্ষের সংখ্যা ১০২৬টি। এখানে সাধারণ ওয়ার্ডে পুলিশের নেতৃত্বে আনসারসহ ২২ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ২৪ জন সাধারণ নিরাপত্তারক্ষী দায়িত্ব পালন করবেন। আর পুলিশ, আর্মস পুলিশ ব্যাটালিয়ান ও ব্যাটালিয়ান আনসারের সমন্বয়ে মোবাইল ফোর্স ৩০ জন ও স্ট্রাইকিং ফোর্স ১০ জন, প্রতিটি ওয়ার্ডে র‌্যাবের একটি করে (৩০) টিম এবং প্রতি দুই ওয়ার্ডে বিজিবির এক প্লাটুন অর্থাৎ ১৫ প্লাটুন সদস্য মোতায়েন থাকবে। এ সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন; যার মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৫৬ হাজার ৮৫ জন ও নারী এক লাখ ৬২ হাজার ৫৩ জন। তবে, পুরুষের চেয়ে এখানে নারী ভোটার বেশি।

বরিশালের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মুজিবুর রহমান বলেন, এ সিটির ৩০ ওয়ার্ডে ১২৩ ভোটকেন্দ্রে কক্ষের সংখ্যা ৭৫০টি। সাধারণ ওয়ার্ডে পুলিশের নেতৃত্বে আনসারসহ ২২ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ২৪ জন সাধারণ নিরাপত্তারক্ষী দায়িত্ব পালন করবেন। আর পুলিশ, আর্মস পুলিশ ব্যাটালিয়ান ও ব্যাটালিয়ান আনসারের সমন্বয়ে মোবাইল ফোর্স ৩০ জন ও স্ট্রাইকিং ফোর্স ১০ জন, প্রতিটি ওয়ার্ডে র‌্যাবের একটি করে (৩০) টিম এবং প্রতি দুই ওয়ার্ডে বিজিবির এক প্লাটুন অর্থাৎ ১৫ প্লাটুন সদস্য মোতায়েন থাকবে। এ সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা দুই লাখ ৪২ হাজার ১৬৬ জন; যার মধ্যে পুরুষ এক লাখ ২১ হাজার ৪৩৬ জন ও নারী এক লাখ ২০ হাজার ৭৩০ জন। তবে, এ সিটিতে পুরুষ ভোটার বেশি।

সিলেটের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলীমুজ্জামান বলেন, এ সিটির ২৭ ওয়ার্ডে ১৩৪ ভোটকেন্দ্রে কক্ষের সংখ্যা ৯২৬টি। সাধারণ ওয়ার্ডে পুলিশের নেতৃত্বে আনসারসহ ২২ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ২৪ জন সাধারণ নিরাপত্তারক্ষী দায়িত্ব পালন করবেন। আর পুলিশ, আর্মস পুলিশ ব্যাটালিয়ান ও ব্যাটালিয়ান আনসারের সমন্বয়ে মোবাইল ফোর্স ২৭ জন ও স্ট্রাইকিং ফোর্স ১০ জন, প্রতিটি ওয়ার্ডে র‌্যাবের একটি করে (২৭) টিম এবং প্রতি দুই ওয়ার্ডে বিজিবির এক প্লাটুন অর্থাৎ ১৪ প্লাটুন সদস্য মোতায়েন থাকবে। এ সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ২১ হাজার ৭৩২ জন; যার মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৭১ হাজার ৪৪৪ জন ও নারী এক লাখ ৫০ হাজার ২৮৮ জন। তবে, এ সিটিতে পুরুষ ভোটার বেশি।

উল্লেখ্য, রাজশাহীতে মেয়র পদে পাঁচজন, বরিশালে সাতজন এবং সিলেট সিটিতে সাতজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। প্রচার এবং আলোচনায় সরকার সমর্থিত মেয়র এবং সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি প্রার্থীরা। তবে, তিন সিটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী লড়ছে পাঁচজন। আগামী ৩০ জুলাই নির্বাচনের মাধ্যমে ভোটার তাদের আগামী পাঁচ বছরের জন্য নগরপিতা নির্বাচন করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *