,

প্লাস্টিক ছেড়ে পাটের তৈরি পণ্য ব্যবহারের আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার

প্লাস্টিকের তৈরি পণ্য বর্জন করে পাটের তৈরি পণ্য ব্যবহার বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বিশ্বব্যাপী পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে প্লাস্টিকের তৈরি পণ্য।

আজ বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা, ২০১৮ এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষ মেলা ২০১৮-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদান করা ৩০ লাখ শহীদের স্মরণে সারা দেশে একযোগে জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩০ লাখ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিরও উদ্বোধন করেন। দেশে প্রথমবারের মতো এ ধরনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠানে পাটের তৈরি পণ্যের গুরুত্ব বোঝাতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাটের সোনালি দিন ফিরিয়ে আনতে সরকার নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। বিজ্ঞানীরা পাটের তৈরি পরিবেশবান্ধব পলি ব্যাগ আবিষ্কার করেছেন। এটিকে ‘সোনালি ব্যাগ’ নাম দেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই সোনালি ব্যাগ আমরা পলিথিনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে পারি। তা ছাড়া পাটের ছোট ছোট ব্যাগও ব্যবহার করা যায়। এমনকি ফ্যাশনের জন্যও ব্যবহার করা যায়।’ নিজের হাতের ব্যাগটি দেখিয়ে তিনি জানান, সেটি পাটের তৈরি।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্লাস্টিকের পণ্য ব্যবহার নিষিদ্ধ করে এর বিকল্প পণ্যের সন্ধান করা হয়েছিল।

সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য এবং রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিয়েছে। তিনি বলেন, ’৭৫-পরবর্তী শাসকেরা সুন্দরবনের নদ-নদী, খাল ও চ্যানেলগুলো বন্ধ করে চিংড়ি চাষ প্রকল্প করায় এখানকার পানি লবণাক্ত হয়ে পড়েছিল। তাঁর সরকার এই নদী এবং খাল পুনঃখনন করে নাব্যতা বৃদ্ধির পাশাপাশি তা জাহাজ চলাচলের উপযুক্ত করে তুলেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা এবং এ দেশের গর্ব বেঙ্গল টাইগারের ব্রিডিং পয়েন্ট উন্নত করা ও বেঙ্গল টাইগারের সুরক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ’৯৬ সালে সরকারে এসেই আওয়ামী লীগ ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি করে। এই পানি চুক্তি করার পর সুন্দরবনের গড়াই নদী খননের কাজ শুরু হয়।

গড়াই নদ খননের ফলে সুন্দরবন অঞ্চলের লবণাক্ততা দূর হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই লবণাক্ততা দূর করা একান্তভাবে প্রয়োজন ছিল। কারণ, এই গড়াই নদের হোগলা বন এলাকাটিই বাঘের ব্রিডিং পয়েন্ট।

সুন্দরবনের অভ্যন্তরে জাতির পিতার ঘাসিয়ার খাল খননের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই চ্যানেলটি বন্ধ করে পরবর্তীকালে ক্ষমতায় আসা শাসকেরা সেখানে চিংড়ি চাষের প্রকল্প গ্রহণ করে। ফলে জীববৈচিত্র্যের জন্য সুন্দরবনের গুরুত্বপূর্ণ এবং ডলফিনের আবাসস্থল সালনা নদীতে জাহাজ চলাচল শুরু হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘাসিয়ার খালের সঙ্গে সংযুক্ত প্রায় আড়াই শ ছোট ছোট খাল বন্ধ করে চিংড়ি চাষ করা হয়। সেটি বন্ধ করে চ্যানেলটি পুনরুদ্ধারে তাঁর সরকারকে বেগ পেতে হয়। তিনি বলেন, ‘একে একে প্রায় সব খালের মুখ আমরা খুলে দিয়েছি। ৮০টি এখনো বাকি আছে এবং ঘাসিয়ার খাল পুনঃখনন করে সেখান দিয়েই জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। তাতে জাহাজ চলাচলের সময়ও বেঁচে যাচ্ছে। তা না হলে জাহাজগুলোকে অতিরিক্ত ১৪-১৫ কিলোমিটার ঘুরে সালনা নদী দিয়ে আসতে হতো। এখন খুব সহজেই জাহাজগুলো মোংলা বন্দরে চলে আসতে পারছে।’

পরিবেশ পদক ২০১৮-এর জন্য নির্বাচিত ব্যক্তি ও সংস্থা এবং বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন-২০১৮, বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার-২০১৭ ও সামাজিক বনায়নের লভ্যাংশের চেকপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে পদক ও চেক বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ওই মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাছান মাহমুদ বক্তব্য দেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল্লাহ মহসিন চৌধুরী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *