,

যুক্তরাষ্ট্রে ঘরে ৬ বাংলাদেশির লাশ, ‘হত্যার পর আত্মহত্যার’ ধারণা

ডেস্ক রিপোর্ট:  বিষণ্নতা থেকে’ পরিবারটির দুই তরুণ সহোদর তাদের মা-বাবা, নানী ও একমাত্র বোনকে হত্যার পর নিজেরাও আত্মহত্যা করেছে বলে পুলিশের ধারণা।

 

স্থানীয় সময় সোমবার ভোর রাতে টেক্সাস স্টেটের ডালাসসংলগ্ন এলেন সিটির বাসা থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয় বলে এলেন সিটি পুলিশের সার্জেন্ট জন ফেলী জানান।

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে এক বাড়ি থেকে ৬ বাংলাদেশির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ, যাদের মধ্যে পাঁচজনই একই পরিবারের সদস্য।

ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সম্ভবত শনিবার নৃশংস ঘটনাটি ঘটেছে। ১৯ বছর বয়সী একজনের ফেইসবুক স্ট্যাটাস থেকে হত্যার পর আত্মহত্যার ঘটনা বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেখানে ঘটনার সঙ্গে রয়েছে হতাশার ধারাবিবরণী।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব নর্থ টেক্সাসের সচিব নাহিদা আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঘটনার সময় ওই বাড়িতে তৌহিদুল ইসলাম (৫৬), তার স্ত্রী আইরিন ইসলাম নীলা (৫৫), দুই ছেলে তানভির তৌহিদ (২১) ও ফারহান তৌহিদ (১৯), মেয়ে পারভিন তৌহিদ (১৯) ও তার তৌহিদের শাশুড়ি আলতাফুন্নেসা (৭৭) ছিলেন। তারা সবাই মারা গেছেন।

“পারভিন পড়তেন নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে। সপ্তাহখানেক আগে তাকে নিউইয়র্ক থেকে বাসায় নেওয়া হয়। ফারহান গত বছর ভর্তি হয়েছিলেন অস্টিনের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসে। তানভিরও পড়তেন ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের অস্টিনে। তার এবারই গ্র্যাজুয়েশনের কথা। ফারহান আর পারভিন ছিলেন যমজ। আর আলতাফুন্নেসার গত সপ্তাহে বাংলাদেশে ফেরার কথা ছিল। করোনাভাইরাস জটিলতায় তা স্থগিত হয়ে যায়।”

 

একসময়কার পুরান ঢাকার বাসিন্দা তৌহিদুল ৮ বছর আগে টেক্সাসের এই সিটিতে বসতি গড়ার আগে নিউইয়র্কে বাস করতেন। তিনি সিটি ব্যাংকে চাকরি করতেন।

 

তৌহিদের পরিচিত পর্যটন ব্যবসায়ী শাহীন হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোনো কারণে তৌহিদের দুই ছেলেই বিষণ্নতায় আক্রান্ত ছিল।”

 

ফেইসবুকে ঘটনার বিষয়ে লম্বা এক স্ট্যাটাস দিয়েছেন ফারহান। সেখানে তিনি ২০১৬ সালে নবম গ্রেডে পড়াবস্থায় ‘বিষন্নতায় আক্রান্ত’ হওয়ার কথা চিকিৎসকের বরাতে জানান। এজন্য তার শিক্ষাজীবন বির্পযস্ত হয়। অবস্থা গুরুতর হলে বন্ধুরা তাকে ত্যাগ করে। এক পর্যায়ে জীবন দুর্বিষহ হলে তিনি আত্মহত্যার কথা ভাবেন। কিন্তু তিনি মারা গেলে পরিবারের অন্যরা কষ্ট পাবেন। তাই তাদেরও হত্যার পরিকল্পনা করেন। এর সঙ্গে ভাইকে যুক্ত করে তারা বন্দুক কেনেন।

আমি যদি আত্মহত্যা করি তাহলে গোটা পরিবার সারাটি জীবন কষ্ট পাবে। সেটি চাই না। সেজন্যে পরিবারের সকলকে নিয়ে মারা যাবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে বড় ভাইকে শামিল করলাম। দুই ভাই গেলাম বন্দুক ক্রয় করতে। আমি হত্যা করব ছোটবোন আর নানীকে। আমার ভাই হত্যা করবে মা-বাবাকে। এরপর উভয়ে আত্মহত্যা করব। কেউ থাকবে না কষ্ট পাবার।

অস্ত্র কেনার বিষয়ে লেখা হয়েছে, “বন্দুক ক্রয়ের ব্যাপারটি খুবই মামুলি। বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইনের নামে তামাশা চলছে সর্বত্র। বড়ভাই গেলেন দোকানে। বললেন যে, বাড়ির নিরাপত্তার জন্যে বন্দুক দরকার। দোকানি কয়েকটি ফরম ধরিয়ে দিলে সেখানে স্বাক্ষর করলেন ভাই। এরপর হাতে পেলাম কাঙ্খিত বস্তুটি, যা দিয়ে নিজের কষ্ট এবং পরিবারের কষ্ট সহজে লাঘব করা যাবে।”

ফোবানার সাবেক চেয়ারম্যান ও ক্যানসাসের ডেমক্র্যাটিক ককাসের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপার্সন রেহান রেজা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এমন নিষ্ঠুর পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি রোধে অভিভাবকদের সচেতন হওয়া দরকার। সময়মত যথাযথ চিকিৎসার পদক্ষেপ নিলে হয়তো এহেন দুঃখজনক পরিস্থিতির অবতারণা হতো না।

 

অবিলম্বে বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইনের দাবিও জানিয়েছেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *