এস,কে আলীম,কপিলমুনি খুলনা। আজ ৯ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক কপিলমুনি মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে ১৫৬ জন রাজাকারকে গনআদালতের রায়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। অবসান ঘটে পাকিস্তানী হানাদার রাজাকারদের নির্মম অত্যাচার নিপীড়ন-নির্যাতন সহ অনৈতিক কর্মকান্ডের লোমহর্ষক ঘটনা। কপিলমুনির স্থপতি স্বর্গীয় রায়সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু মহোদয়ের বাসভবন রাজাকাররা তাদের সুরক্ষিত দূর্গ হিসেবে বেছে নিয়েছিল। ৭১ সালের মুক্তি যুদ্ধের সময় বাড়িটি দীর্ঘ নয় মাস ব্যবহার করেছিল পাকিস্তানী দোসর রাজাকাররা। সেখানে খুন, গুম, ধর্ষনসহ অনেক অনৈতিক ঘটনার অবতারণা করা হয়। আর সেসব দিনের স্মৃতি চিহ্ন নিয়ে ইতিহাসের স্বাক্ষ্য বহন করে চলেছে দ্বিতল বিশিষ্ট বাড়িটি।জানাযায়, বাড়ির অভ্যন্তরে এমন কোন অপরাধ নেই যা তারা করেনি। কথিত আছে কপিলমুনিসহ পাশ্ববর্তী এলাকা থেকে সংখ্যালঘু ও রাজাকারদের সাথে বৈরি সম্পর্কের লোকদের অর্থৎ মুক্তিকামী মানুষদেরকে ধরে এনে কপোতাক্ষ নদীর পাড়ে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে নির্মম ভাবে হত্যাযজ্ঞ চালাতো পাক হানাদাররা। প্রতিদিন এই বধ্যভূমিতে মানুষের লাশ কুকুর, কাক, শকুনে ছিড়ে ছিড়ে খাওয়ার দৃশ্য ছিল খুবই লোমহর্ষক ও মর্মপীড়াদায়ক। সূত্রমতে, ১৯৭১ সালে ১১ই নভেম্বর ক্যাপ্টেন আরিফিনের নের্তৃত্বে একদল মুক্তি বাহিনী কপিলমুনি রাজাকারদের ঘাঁটিতে আঘাত হানে। কিন্তু সুরক্ষিত দূর্গ আর রাজাকারদের শক্ত অবস্থানের কারণে সে যুদ্ধে কোন সফলতা পাওয়া যায়নি। জানাযায়, রায় সাহেবের সুরক্ষিত এই বাড়ির আঙ্গিনায় ২০০ জন রাজাকারের সর্বদা টহল নিয়োজিত থাকতো। এমতাবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা পুণরায় পরিকল্পনা করেন কিভাবে কপিলমুনিকে শত্রুমুক্ত করা যায়। আর পরিকল্পনা গ্রহনের জন্য দক্ষিণ খুলনার বিভিন্ন এলাকার কমান্ডিং অফিসাররা উপজেলার রাড়ুলীতে একত্রিত হন। পরিকল্পনায় অংশ গ্রহন করেন গাজী রহমত উল্যাহ (দাদু), স.ম. বাবর আলী, ইউনুছ আলী, শাহাদাৎ হোসেন বাচ্চু, মোড়ল আঃ সালাম, আবুল কালাম আজাদ সহ আরও অনেক মুক্তিকামী মানুষ। কপিলমুনির যুদ্ধে অংশ গ্রহনকারী মুক্তিযোদ্ধাদের পাঁচটি ভাগে বিভক্ত করা হয়। পাঁচটি দল কপিলমুনির চারপাশ ঘিরে রেখে সাড়াশি আক্রমন করে। দীর্ঘ তিন দিন তিন রাত্র যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুদ্ধে টিকে থাকতে না পেরে ১৯৭১ সালের ৯ই ডিসেম্বর রাজাকার ঘাঁটির ১৫৬ জন রাজাকার ও ১১ শীর্ষ নেতা আর্ত্মসমর্পণ করে। তাদেরকে সহচরী বিদ্যামন্দির মাঠে এক সারিতে রেখে গণ আদালতের রায়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। শেষ হয় যুদ্ধ। হানাদার মুক্ত হয় কপিলমুনি।
Design & Developed BY- zahidit.com
Leave a Reply