,

কক্সবাজারে আ. লীগের ৪০০ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ফের মামলা

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
কক্সবাজারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সহিংসতার অভিযোগ এনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে, সাবেক হুইপ, জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান সভাপতি, জেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পাবলিক প্রসিকিউটরসহ অঙ্গসংগঠনের ৪০০ জন।

বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) রাতে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলাটি রেকর্ড হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জাতীয় সংসদের আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক হুইপ ও কক্সবাজার-০৩ (সদর-রামু-ঈদগাঁও) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, কক্সবাজার জেলা পরিষদের সদ্য অপসারিত চেয়ারম্যান শাহীনুল হক মার্শাল, কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল, কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এসএম সাদ্দাম হোসেন, কক্সবাজার সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেটের সৈয়দ রেজাউর রহমান রেজা, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ জয়, শহর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল কর, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মুনাফ সিকদারসহ ৭৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

শাহেদ বাবু নামে মিঠাছড়ি এলাকার এক যুবক বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। তিনি ছাত্রদের পক্ষ হয়ে এই মামলা করেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো দাবি করেছে।

যদিও কক্সবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়জুল আযীম নোমান মামলা রেকর্ড হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেননি।

তবে থানার একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে মামলাটি বৃহস্পতিবার রাতেই রেকর্ড হয়েছে। কক্সবাজার থানার মামলা নম্বর ৩০/২০২৪, যার জিআর নম্বর ৬৬৫।

এদিকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে শেখ হাসিনার সরকারের। তার দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এখনো রয়েছেন আত্মগোপনে। সরকার পতনের দুই মাস অতিবাহিত হলেও এখনো হামলা আর গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছেন তারা। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যাওয়ার পর দলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান। আত্মগোপন অবস্থায় অনেকেই দেশ ছাড়েন। এখনো অনেকেই চেষ্টায় আছেন দেশ ছাড়ার।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে আতঙ্কের পাশাপাশি হতাশা বাড়ছে। দুই মাস ধরে আত্মগোপনে থাকার পর আরও কত দিন এভাবে থাকতে হবে তা নিয়েও ভাবতে হচ্ছে তাদের। তাছাড়া বেশি দিন লুকিয়ে থাকাও অনেকের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর গ্রেপ্তার অভিযানও জোরদার হয়েছে। নেতা-কর্মী ও তাদের বাড়িঘরে হামলার ঘটনাও ঘটে চলেছে বলে আওয়ামী লীগের নেতাদের অভিযোগ।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার এক মাস পার হলে সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে অনেকেই মনে করেছিলেন পরিস্থিতি হয় তো একটু একটু করে স্বাভাবিক হয়ে আসবে। কিন্তু গত ১৫ দিনে ব্যাপকহারে গ্রেপ্তার বেড়েছে। এই সময়ে সারা দেশে তৃণমূল পর্যায়ের কয়েকশ নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। অনেকের বাড়ি-ঘরে হামলাও হয়েছে বলে অভিযোগ মিলেছে। এছাড়া দলটির নেতা-কর্মীদের নামে মামলা দেওয়াও অব্যাহত আছে।

আওয়ামী লীগের ওই সূত্রগুলো আরও জানায়, এর বাইরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে শুরু করে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডের নেতাসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে। যাদের নামে মামলা হয়নি তারাও আতঙ্কে আছেন, কখন মামলা হয় বা কোন মামলায় তারা জড়িত হয়ে যান বা গ্রেপ্তার করা হয়। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন এখন পর্যন্ত যে সব মামলা হয়েছে বা হচ্ছে তার প্রায় প্রতিটি মামলায় অজ্ঞাত পরিচয় আসামি রয়েছে শত শত। মামলা না থাকলেও গ্রেপ্তার হলেই যে কোনো মালায় আসামি হয়ে যাবেন, এই ভয় তাদের মধ্যে সব সময় কাজ করছে। আবার নতুন করে কোনো মামলায়ও আসামি হতে পারেন। কখন গ্রেপ্তার বা হামলার শিকার হয় এ আতঙ্ক রয়েছে তাদের মধ্যে। এর পাশাপাশি দীর্ঘ দিন আত্মগোপনে থাকতে থাকতে অনেকে হতাশ হয়েও পড়ছেন। এই দীর্ঘ সময় নেতা-কর্মীরাও পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন। অনেকের সঙ্গেই অনেকের যোগাযোগ নেই। তবে সম্প্রতি দলের ভেরিফায়েড ফেসবুকসহ কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কার্যক্রম সক্রিয় করা হয়েছে। এর মধ্যমে নেতা-কর্মীরা দলের কিছু তথ্য পাচ্ছেন বলে সূত্রগুলো জানায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *