,

মানবতার ইতিহাসে কালজয়ী সত্ত্বা ডিআইজি হাবিবুর রহমান


সাইফুল্যাহ মোঃ খালিদ রাসেল : উত্তরন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উদ্যোক্তা এবং সভাপতি, বেদে সম্প্রদায়ের আলোর দিশারী, সুবিধা বঞ্চিত হিজড়াদের জীবন মান উন্নয়নের কারিগর, কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার স্বান্তনার অবলম্বন, যৌনপল্লীর শিশুদের শিক্ষিত করার পদক্ষেপ গ্রহনকারী, কতো নামেই না ডাকা হয় তাকে। তবে যে নামেই ডাকা হোক না কেন সর্বোপরি তিনি মানবতার সেবায় একজন নিবেদিত প্রান। তিনি বাংলাদেশ পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মোঃ হাবিবুর রহমান। পুলিশ সম্পর্কে সাধারন মানুষের নেতিবাচক ধারনা পাল্টে দিয়ে তিনি মানব সেবার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ১৯৬৭ সালের ১ লা জানুয়ারী গোপালগঞ্জের চন্দ্রদীঘলিয়া গ্রামে তার জন্ম। শিক্ষা জীবনে প্রতিটি ধাপ সফলতার সাথে পার করে ১৯৯৮ সালের ২২ শে ফেব্রুয়ারী ১৭ তম বিসিএস ক্যাডার হিসেবে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন। অতঃপর আরএমপিতে সহকারী পুলিশ সুপার, জাতিসংঘ শান্তি মিশন শেষে ২০০৯ সালে ডিএমপির উপ পুলিশ কমিশনার এবং ২০১১ সালে ঢাকার পুলিশ সুপার। বর্তমানে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে কর্মরত রয়েছেন হাবিবুর রহমান। কর্ম জীবনে তার সফলতার পাল্লা অনেকটাই ভারী। হাবিবুর রহমান ২ বার প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক (পিপিএম) এবং ৩ বার বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) এ ভুষিত হন। গুরুত্বপূর্ন মামলার রহস্য উদঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রন, দক্ষতা, কর্তব্য নিষ্ঠা, সততা, সেবা, সাহসিকতা, বীরত্বপূর্ন কর্মের জন্য তার সুনাম আকাশ চুম্বী। কিন্তু তিনি নিজেকে কর্মের গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেনি। নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন সাধারনের সেবায়। গড়ে তুলেছেন উত্তরন ফাউন্ডেশন নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এই সংগঠনের মাধ্যমেই হিজড়া ও বেদে সম্প্রদায়ের লোকজনকে নিয়ে আসা হচ্ছে আলোর পথে। ঢাকার আশুলিয়া, আমিন বাজার ও বি-বাড়ীয়ায় হিজড়াদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে ৩ টি বিউটি পার্লার। ডিআইজি হাবিবুর রহমানের উদ্যোগে তারা মূল পেশা থেকে দূরে সরে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়ে আত্নবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে। বাদ যায়নি পিছিয়ে পড়া বেদে সম্প্রদায়। ঢাকার অদূরে সাভারের বংশী নদীর তীরের বেদে পল্লীর প্রায় ২০ হাজার বেদের জীবন মান পাল্টে গেছে ত্রা উদ্যোগে। তাদের সন্তানদের জন্য মুন্সীগঞ্জে গড়ে তোলা হয়েছে শিক্ষালয়। ডিআইজি হাবিবুর রহমানের উদ্যোগে বেদে সম্প্রদায়ের জন্য সেলাই প্রশিক্ষন, বুটিকস, কম্পিউটার ট্রেনিং, ফ্যাশন হাউজ সহ নানা ধরনের কর্মসংস্থান মূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। বেদেরা ভালোবেসে ডিআইজি হাবিবুর রহমানের নামে তাদের এলাকায় একটি মসজিদ নির্মান করেন। তার নজর এড়ায়নি যৌনপল্লীর অন্ধকারে থাকা শিশুরাও। তিনি প্রথম এদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়ানোর পদক্ষেপ গ্রহন করেন। মানব ইতিহাসে যা বিরল দৃষ্টান্ত। তিনি সম্পূর্ন ব্যক্তিগত অর্থায়নে অনেক দুস্থ এবং অসহায় মেয়েদের বিয়ের ব্যবস্থা করেন। সমাজসেবায় মনোনিবেশ থাকলেও তিনি তার পুলিশ বাহিনীর আইকন ও রোল মডেল। মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ বাহিনীর আত্নত্যাগ তুলে ধরতে তার উদ্যোগে ২০১৩ সালের ২৪ শে মার্চ প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। তার উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় পুলিশ ব্লাড ব্যাংক। ডিআইজি হাবিবুর রহমান যথেষ্ট সংস্কৃতিমনা ও খেলাধুলা প্রেমীও বটে। তিনি বঙ্গপোসাগরের দূষণ নিয়ে বাংলা ভাষায় একটি ছবি পরিচালনা করেন। তিনি জাকার্তায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসের আসরে এশিয়ান কাবাডি ফেডারেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ডিআইজি হাবিবুর রহমানের কর্মজীবন এবং ব্যক্তিজীবনে জনকল্যানের অসামান্য দৃষ্টান্ত সামান্য কথায় তুলে ধরা সম্ভব না হলেও তাকে নিয়ে তৈরি হয়েছে শর্টফিল্ম। গাওয়া হয়েছে গান। বলা চলে তার উদ্যমে পুলিশের প্রতি জনগনের আস্থা শূন্যের কোঠা থেকে আবার ফিরে এসেছে। তাই সমাজের সাধারন মানুষ থেকে শুরু করে আলোর মুখ দেখা সুবিধা বঞ্চিতদের কাছে ডিআইজি হাবিবুর রহমান সমাজ বদলের কারিগর এবং মানবতার ইতিহাসে কালজয়ী সত্ত্বা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *