,

রাতের আঁধারে ত্রাণ নিয়ে হাজির ম্যাজিস্ট্রেট

ডেস্ক রিপোর্ট: চট্টগ্রাম হালিশহরের ধুপ পাড়া এলাকায় পাঁচ সন্তান নিয়ে বস্তির ছোট্ট একটি ঘরে বসবাস করেন এক নারী। স্বামীহারা অসহায় এই নারী সন্তানের মুখে দুমুঠো খাবার তুলে দিতে কাজ করতেন নগরের একটি দর্জির দোকানে। সরকারঘোষিত কঠোর লকডাউনে বন্ধ হয়ে গেছে সেই দোকানটি। দৈনিক বেতনে কাজ করা ওই দোকান বন্ধের সঙ্গে থমকে গেছে তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। সন্তানের মুখে কী তুলে দেবেন সেই চিন্তায় হয়ে গেছেন একপ্রকার দিশেহারা।

শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) দিবাগত রাতে ঘড়ির কাটায় রাত তখন ১১টা ২০ মিনিট বাজে। হঠাৎ দরজায় কে যেন ঠক ঠক করল। খুলে দেখেন কয়েকজন ভদ্রলোক একটা শুকনো খাবারের পোটলা নিয়ে এসেছেন। পরিচয় জেনেই চোখ যেন কপালে উঠল ওই নারীর। তিনি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। ওই নারীর দুর্ভোগে পড়ার বিষয়টি জেনে খাবার নিয়ে ছুটে এসেছেন তিনি।

চোখ ছলছল করা কৃতজ্ঞতাপূর্ণ ওই মুখে যেন কোনো কথাই বের হচ্ছিল না। শুধু মুখ বিড়বিড় করে কী যেন বলছিলেন।শুধু ওই নারী না। শুক্রবার রাতে চট্টগ্রাম নগরের হালিশহর, মেহেদীবাগ, ২ নম্বর গেট, আগ্রাবাদ, সদরঘাটসহ বেশ কয়েকটি স্থানের প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবারের মুখে হাসি ফুটিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। একই দিন সকাল বেলা এক হাজারেরও অধিক পরিবারে ত্রাণ এবং ২০৬ জনের মাঝে এক লাখ তিন হাজার টাকার নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়েছে। এ নিয়ে গত তিনদিনে শুধুমাত্র জেলা প্রশাসনের উদ্যোগেই কয়েক হাজার পরিবারে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।

রাতে বেলা এই মহতী কাজে অংশ নেয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক বলেন, ‘মূলত যারা লাইনে দাঁড়িয়ে বা নির্দিষ্ট জায়গায় দেয়া ত্রাণ আনতে সংকোচবোধ করছেন তারা জেলা প্রশাসকের মোবাইলে এসএমএস এবং কলের মাধ্যমে জানাচ্ছেন। তাদের কাছেই রাতের বেলা ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ‘লকডাউন শুরুর পর গত তিনদিন ধরে রাতের বেলা এভাবে অসহায় ও দুস্থদের মাঝে ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছি। কিছু মানুষ আছে যারা মানসম্মানের কারণে দিনের বেলা ত্রাণ নিতে অনাগ্রহী। কিন্তু অভাবের কারণে তারা জেলা প্রশাসকের নম্বরে ফোন দিয়ে ত্রাণের জন্যে বলছেন। এরপর তাৎক্ষনিক তিনি ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ত্রাণ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করছেন। জেলা প্রশাসনের এ কার্যক্রম চলমান থাকবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *